বঙ্গনিউজ ডটকমঃ শিশু সামিউল আলম রাজন হত্যাকারী কামরুলকে ‘পলাতক’ দেখিয়েই দাখিল হচ্ছে অভিযোগপত্র। আগামী সপ্তাহেই চাঞ্চল্যকর এ মামলার অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
এতে সৌদি আবরে আটক কামরুল ইসলামকে পলাতক এবং গ্রেফতার হওয়া অপর ১২ আসামিকে অভিযুক্ত দেখানো হচ্ছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করে জানায়, আপাতত গ্রেফতার ও পলাতক ১৩ আসামিকে নিয়েই প্রস্তুত হচ্ছে অভিযোগপত্র। তবে দ্রুত অভিযোগপত্র দাখিলের কথা নিশ্চিত করলেও, কবে নাগাদ তা আদালতে দাখিল করা হচ্ছে- সে সম্পর্কে মুখ খুলতে নারাজ সিলেট মহানগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (ওসি) সুরঞ্জিত তালুকদার বলেন, শিশু রাজন হত্যা মামলায় এ যাবত গ্রেফতার হওয়া ১২ আসামি ও সৌদিতে থাকা কামরুল ইসলামকে নিয়ে এ মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন তিনি।
এ ব্যাপারে মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (মিডিয়া) রহমত উল্লাহ বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে সৌদি আরবে আটক কামরুলকে ছাড়াই অভিযোগপত্র দেওয়া হবে। তবে অভিযোগপত্রে কামরুলকে আসামি দেখানো হবে।
এদিকে, শিশু রাজন হত্যা মামলায় এ যাবত ১২ জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। অপর আসামি কামরুল ইসলাম দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়ে সৌদি আরবে আটক হয়।
মামলায় গ্রেফতার হওয়া আসামিরা হলো- মুহিত আলম, তার স্ত্রী লিপি বেগম, ইসমাইল হোসেন আবলুছ, ফিরোজ মিয়া, আসমত উল্লাহ, চৌকিদার ময়না মিয়া, আলী হায়দার, নুর মিয়া, দুলাল আহমদ, আয়াজ আলী, তাজ উদ্দিন বাদল ও রুহুল আমিন।
এদের মধ্যে ৮ জন হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। তারা হলেন- মুহিত আলম, তার ভাই আলী হায়দার, ভিডিওচিত্র ধারণকারী নুর মিয়া, আয়াজ আলী, দুলাল আহমদ, চৌকিদার ময়না মিয়া, ফিরোজ আলী ও আসমত উল্লাহ।
এছাড়া এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তিন পুলিশ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়। তারা হলেন- মহানগরীর জালালাবাদ থানার ওসি (তদন্ত) আলমগীর হোসেন, উপ পরিদর্শক (এসআই) আমিনুল ইসলাম ও জাকির হোসেন।
শিশু সামিউল আলম রাজন হত্যার ঘটনা আড়াল করার চেষ্টা ও গাফিলতির কারণে পুলিশের তদন্ত কমিটির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের বিভাগীয় মামলাও দায়ের করা হয়। পাশাপাশি প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা অভিযুক্ত হওয়ায় মামলাটির তদন্ত মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন।
অপরদিকে, নিহত রাজনের বাবা-মার প্রতি সমবেদনা জানাতে বাড়িতে যান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকী, সংসদ সদস্য আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরীসহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা।
তারা সবাই রাজনের অন্যতম হত্যাকারী কামরুল ফিরিয়ে আনা, দায়ী পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াসহ দ্রুত বিচার আইনে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
এরমধ্যে পুলিশের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়া দৃশ্যমান আর কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে স্মারকলিপি দিয়েছেন রাজনের বাবা।
রোববার (৯ আগস্ট) সিলেটের জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে এই স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
০৮ জুলাই সকালে রাজনকে পিঠিয়ে হত্যার পর বেলা পৌনে ১টার দিকে একটি মাইক্রোবাসে করে (ঢাকা মেট্টো-চ-৫৪-০৫১৬) শিশু রাজনের মরদেহ গুম করার চেষ্টা করা হয়। এদিন জনতা ধাওয়া করে মুহিত আলমকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে।
নিহত রাজন কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন সিলেট সদর উপজেলার কান্দিগাঁও ইউনিয়নের বাদেআলী গ্রামের মাইক্রোবাস চালক শেখ আজিজুর রহমানের ছেলে। রাজনকে হত্যার নির্মম নির্যাতনের ভিডিওচিত্র প্রকাশ হওয়ার পর সিলেটসহ দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৩:৫৯:১৭ ৩৯২ বার পঠিত