বঙ্গনিউজ ডটকমঃ অ্যামাজন রেইন ফরেস্ট, সবুজ পৃথিবীর সবুজতম ফুসফুস৷ সেখানে সবুজের বদলে স্বর্ণের খোঁজ চলেছে, বেআইনিভাবে, গভীর জঙ্গলের মধ্যে, ইন্ডিও উপজাতির মানুষদের জন্য সংরক্ষিত এলাকায়৷
পরিবেশ সংরক্ষণ বিভাগের হেলিকপ্টারে করে অ্যাজেন্টদের অ্যামাজন নদীর উপত্যকায় গহীন গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অরণ্যের মাঝখানে নামিয়ে দেয়া হচ্ছে৷ কায়াপো ইন্ডিয়ানদের জন্য সংরক্ষিত এলাকাটিকে বেআইনি স্বর্ণের খনির হাত থেকে বাঁচানো প্রয়োজন৷ হেলিকপ্টার থেকে স্পষ্ট দেখা যায়, কোথায় কোথায় মাটি খুঁড়ে স্বর্ণের খোঁজ করা হয়েছে৷
অভিযান শুরু হলো৷ এ ধরনের অপারেশন চালাতে বেশ কয়েক মাস ধরে প্ল্যানিং করতে হয়৷ অ্যাজেন্টরাও কোনোরকম খোঁজ-খবর না দিয়েই হানা দেন৷ স্বর্ণের খোঁজে যারা জঙ্গলের মাঝখানে খোঁড়াখুঁড়ি করে, তাদের একজনকে ধরা হলো৷ তার বক্তব্য, সে জানে, এটা একটি রিজার্ভ, ইন্ডিয়ানদের জন্য সংরক্ষিত এলাকা৷ সে এসেছে তার গোটা পরিবারকে নিয়ে৷ এবার কিন্তু দিন পাঁচেকের মধ্যেই তাকে এই জায়গা ছেড়ে চলে যেতে হবে৷ এবার সবই ঘটেছে কোনোরকম গোলাগুলি ছাড়া৷ সবসময় কিন্তু পরিস্থিতি এতোটা শান্তিপূর্ণ থাকে না৷
কিছুক্ষণ পরেই অ্যাজেন্টরা একটি ট্রাকের খোঁজ পান৷ চালক জঙ্গলের মধ্যে গা ঢাকা দেয়ার চেষ্টা করছে৷ অ্যাজেন্টরা ধাওয়া করলেন৷ ড্রাইভারকে গ্রেফতার করা হলো৷ তার ট্রাকে রয়েছে আট শ’ লিটার পেট্রোল; যে সব সাজসরঞ্জাম লুকিয়ে রিজার্ভে নিয়ে আসা হয়েছে, এই পেট্রোল সেই সব যন্ত্রপাতির জন্য৷ যন্ত্রপাতিগুলো এখান থেকে নিয়ে যাওয়ার কোনো পন্থা না থাকলে অ্যাজেন্টরা অকুস্থলেই তা পুড়িয়ে দিতে পারেন৷
ট্রাকের ড্রাইভারকে ধরে নিয়ে যাওয়া হলো৷ এই সময় দু’জন ইন্ডিও এসে হাজির৷ এরা রিজার্ভের সেই সব বাসিন্দাদের মধ্যে পড়ে, যারা বেআইনি সোনা-সন্ধানীদের সাথে সহযোগিতা করে থাকে৷ সেই কারণে স্বর্ণ-সন্ধানীরা এদের তাড়ায়নি৷ অ্যাজেন্টরা অরণ্যবাসীদের বললেন, কবে তারা এসে তাদের সাথে এ ব্যাপারে কথা বলবেন৷
পরের দিনও অভিযান চলেছে
হেলিকপ্টার থেকে অ্যাজেন্টরা দেখছেন, পরিবেশ সংরক্ষণ এলাকার ঠিক মাঝখানে একটি বিমান অবতরণের উপযোগী ল্যান্ডিং স্ট্রিপ৷ নিচে কী ঘটছে, দেখতে চান অ্যাজেন্টরা৷ দুর্গম এলাকা৷ তারা জঙ্গলের মাঝখানে দেড় লাখ ইউরো মূল্যের একটি আর্থমুভার খুঁজে পেয়েছেন এবং সেটিতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন৷
পরবর্তী লক্ষ্যে পৌঁছনোর জন্য অ্যাজেন্টদের পায়ে হাঁটা ছাড়া উপায় নেই৷ স্বর্ণ সন্ধানীদের একটি শিবির আবিষ্কার করলেন তারা৷ সাথে সাথে আগুন লাগিয়ে দেয়া হলো৷ আরো খোঁজ চলল৷ হঠাৎ গুলির আওয়াজ! অ্যাজেন্টরা লুকোলেন! গভীর জঙ্গলের মধ্যে কাউকে গ্রেফতার করা অসম্ভব৷ কাজেই অ্যাজেন্টরা প্রথমে দেখার চেষ্টা করলেন, গুলি কোথা থেকে আসছে৷ উত্তেজনা বাড়তে লাগল৷ কিন্তু চোরাই সোনা সন্ধানীরা উধাও৷
হেলিকপ্টার থেকে খোঁজ চলল৷ কিন্তু নিচে কিছুই দেখা যাচ্ছে না৷ অভিযান শেষ হতে চলেছে৷ হেলিকপ্টারের পাইলট এখনো যেন চমকের মধ্যে৷ বলছেন, বিপদ সম্পর্কে তিনি সচেতন৷ বন্দুকের গুলি যেখানে যানটির গায়ে লেগেছে, সেগুলো দেখালেন৷ বললেন, ‘‘ঝুঁকি খুব৷… এলাকাটা বিপজ্জনক এলাকা বলা চলে৷” হেলিকপ্টারের পাইলটের সিটের হেডরেস্টে, সিলভিও-র মাথা থেকে দশ সেন্টিমিটার দূরে গুলিটা লেগেছে৷ তবে আজ কেউ আহত হননি৷ অভিযানের পরিচালক গুলি লাগার কয়েক মিনিট আগেও ঠিক ওই জায়গাতেই বসে ছিলেন – তবে গুলি আসার আগেই তিনি হেলিকপ্টার থেকে নেমে গিয়েছিলেন৷
আবার অভিযান শুরু
অ্যাজেন্টদের দলপ্রধান উইলসন রচা অতো সহজে ভয় পান না। বলেন ‘‘বেআইনি খননের মতো এখানে অন্যান্য নানা ধরনের বেআইনি কার্যকলাপ চলে, যেমন পারদ ব্যবহারের ফলে পরিবেশ দূষণ… এ সবেরই শিকার হন এখানকার স্থানীয় ইন্ডিও-রা৷” যেখানে সোনার খোঁজ করা হয়েছে, অ্যাজেন্টরা সেই জায়গাটা খুঁজে পেলেন৷ কুইকসিলভার আর অন্যান্য রাসায়নিকের ফলে এখানকার মাটি দূষিত৷ এখানে মানুষ থাকলে, তাদের ক্যান্সারের মতো অসুখ হতে পারে৷
ইন্ডিও-দের এলাকায় বেআইনি খনন বন্ধ করার জন্য সরকার যথাসাধ্য করছে৷ একমাত্র এভাবেই প্রকৃতি আবার দম নেয়ার, সুস্থ হওয়ার সময় পাবে৷ ব্রাজিলের পরিবেশ সংরক্ষণ বিভাগ ইবামার অ্যাজেন্টদের সাফল্য উৎসাহজনক, কেননা শুধু ইন্ডিও-রাই নন, আমাদের গ্রহের ফুসফুসই হলো অ্যামাজন নদীর অববাহিকায় গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অরণ্য৷
বাংলাদেশ সময়: ০:২৩:০৫ ২৬৬ বার পঠিত