বঙ্গনিউজ ডটকমঃ নতুন নির্বাচনের দাবি আদায় ও ফের আন্দোলনে নামার ‘টাইমলাইন’ তৈরি করছে বিএনপি। রূপরেখা অনুযায়ী আগামী চার মাস গোছানো হবে দল। পরিবর্তন আনা হবে নেতৃত্বে। ২০১৬ সালের ৫ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনের দ্বিতীয় বছর পূর্তির দিন থেকে আবারো ‘প্রতিবাদমুখর’ হবে দলটি।
বিএনপির সিনিয়র নেতারা মনে করছেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে নতুন নির্বাচন দিতে সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ ক্রমেই বাড়ছে। আগামী কয়েক মাসে এ চাপ আরো তীব্র হবে। তারা বলছেন, নতুন নির্বাচন নিয়ে বিএনপি আলোচনা চায়। সরকার আলোচনার পথে না হাঁটলে বিএনপিও দীর্ঘ দিন একইভাবে বসে থাকবে না। মামলা-হামলা উপেক্ষা করে আবারো নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে ঘুরে দাঁড়াবে।
নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায়ে গেল জানুয়ারি থেকে টানা তিন মাসের আন্দোলন কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে নিতে পারেনি বিএনপি। এ জন্য সরকারের দমন-পীড়নের পাশাপাশি ‘অপরিকল্পিত’ আন্দোলন ও দলের অদক্ষতার দিকটিকেও দায়ী করা হয়। এ মুহূর্তে বিএনপিকে সাংগঠনিকভাবে দুর্বল ভাবছে সরকারও। বিএনপিকে তাচ্ছিল্য করে বক্তব্য আসছে এমপি-মন্ত্রীদের কাছ থেকে। বিএনপি ২০২০ সালের মধ্যে বিলীন হয়ে যাবেÑ এমন কথাও বলছেন তারা। রাজনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, মামলার জালে বন্দী করে রাখা বিএনপিকে ২০১৯ সালের আগে সরকার আর ঘুরে দাঁড়াতে দিতে চায় না।
জানা গেছে, ২০১৬ সালের প্রথম দিকে নতুন নির্বাচন চায় বিএনপি। সে অনুযায়ী সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। প্রভাবশালী দেশ ও উন্নয়ন সংস্থাগুলোর সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন দলটির নেতারা। জানা গেছে, দিন কয়েক আগে বিএনপির কয়েকজন সিনিয়র নেতার সাথে মার্কিন রাষ্ট্রদূত, ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত ও ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধির বৈঠক হয়েছে। সব কূটনীতিকই বিএনপির সিনিয়র নেতাদের দীর্ঘ দিন ধরে কারাগারে আটক রাখা এবং জামিন না পাওয়ার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সেখানে নির্বাচনের ব্যাপারটিও উঠে আসে। বৈঠক সূত্র মতে, নতুন নির্বাচনের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ আগের চেয়ে অনেক বেশি সিরিয়াস।
জানা গেছে, সম্প্রতি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার একজন প্রতিনিধি ওয়াশিংটন ও নিউ ইয়র্ক সফর করে এসেছেন। সেখানে জাতিসঙ্ঘের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোর কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সাথে তার বৈঠক হয়। তারানকোর সাথে তার দেখাও হয়। স্টেট ডিপার্টমেন্টের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সাথে তার বৈঠক হয়। কয়েকটি বৈঠকে ওই প্রতিনিধি বাংলাদেশে আরেকটি নির্বাচন হবেÑ এমন ধারণা পেয়েছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় নয়া দিগন্তকে বলেছেন, আগামী বছরের গোড়াতে সরকার নতুন নির্বাচন দিতে বাধ্য হবে। নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
বিএনপির নেতারা স্পষ্ট করেই বলেছেন, নতুন নির্বাচন নিয়ে বিএনপি আলোচনায় বসতে চায়। তত্ত্বাবধায়ক কিংবা কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বিএনপি জিদ ধরে বসে নেই। তাদের দাবিÑ নির্বাচনের সময়ে একটি নিরপেক্ষ সরকার থাকতে হবে। তারা বলেছেন, আলোচনায় বসলেই ওই নিরপেক্ষ সরকারের রূপ কী হবে, প্রকৃতি কী হবে, চরিত্র কী হবে, এর দায়িত্ব কী হবে তা উঠে আসবে।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, নতুন নির্বাচনের দাবিতে তৎপরতা যেমনি চলছে, তেমনি দল গুছিয়ে আগামী বছরের জানুয়ারিতে আবারো ‘গণতান্ত্রিক কর্মসূচি’ নিয়ে মাঠে নামার প্রস্তুতিও নেয়া হচ্ছে। আগামী চার মাস দল পুনর্গঠনে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেবে দলটি। শক্তিশালী করা হবে ঢাকা মহানগরের সাংগঠনিক ভিত। এ কাজ এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। শিগগিরই ঢাকা মহানগর ছাত্রদল চার ভাগে বিভক্ত করে কমিটি ঘোষণা করা হবে। মহানগরের ১৩টি কলেজকে পূর্ণাঙ্গ ইউনিট ঘোষণা করা হবে। ছাত্রদলের কমিটি গঠনের পরপরই মহানগর বিএনপি, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি দেয়া হবে। ঢাকা মহানগর বিএনপিকে উত্তর ও দক্ষিণ দুই ভাগে ভাগ করা হবে। উত্তর ও দক্ষিণে অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতৃত্ব দিয়ে মহানগর বিএনপি সাজানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। জানা গেছে, দল পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এসব বিষয় নিয়ে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাথে আলোচনা করতে শিগগিরই লন্ডনে যেতে পারেন। -
বাংলাদেশ সময়: ০:২০:২১ ২৩২ বার পঠিত