জমি নিয়ে সরকারের সঙ্গে বেসরকারি কোরিয়ান ইপিজেড টানাপোড়েন

Home Page » অর্থ ও বানিজ্য » জমি নিয়ে সরকারের সঙ্গে বেসরকারি কোরিয়ান ইপিজেড টানাপোড়েন
রবিবার, ২ আগস্ট ২০১৫



dddd.jpg  বঙ্গনিউজ ডটকমঃ জমি নিয়ে সরকারের সঙ্গে বেসরকারি কোরিয়ান ইপিজেড (রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা) কর্তৃপক্ষের যে টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে, তা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে খারাপ বা ভুল বার্তা দেবে। দ্রুত এর সমাধান না হলে তা বিদেশি বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করতে পারে।
দেশের শতবর্ষের পুরোনো ব্যবসায়ী সংগঠন মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের বিনিয়োগের নতুন অধ্যায়’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এ অভিমত প্রকাশ করেন গবেষক, ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদেরা। আয়োজনের সহ-আয়োজক ছিল বেসরকারি গবেষণা সংস্থা দক্ষিণ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (এসএএনইএম বা সানেম)। গতকাল শনিবার সকালে রাজধানীর মতিঝিলে মেট্রো চেম্বারের নিজস্ব সম্মেলনকক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, কেইপিজেড সমস্যা বাংলাদেশ সম্পর্কে বিদেশিদের কাছে একটি খারাপ বার্তা দেবে। তাই সরকারের উচিত বিনিয়োগ বোর্ডের মাধ্যমে এ সমস্যার দ্রুত সমাধানে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া। পাশাপাশি তিনি বিনিয়োগ বাড়াতে সম্প্রসারণমূলক মুদ্রানীতি গ্রহণেরও পরামর্শ দেন।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথমার্ধের জন্য সংযত ও সতর্কতামূলক মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে।
বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে সরকার ১৯৯৯ সালে চট্টগ্রামের আনোয়ারায় বেসরকারি উদ্যোগে ইপিজেড প্রতিষ্ঠার জন্য কোরিয়ান প্রতিষ্ঠান ইয়ংওয়ানকে ২ হাজার ৫০০ একর জমি বরাদ্দ দেয়। কিন্তু সম্প্রতি সরকার কেইপিজেড কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে দুই হাজার একর জমি ফেরত নেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করে। এ নিয়ে সরকার ও কেইপিজেড কর্তৃপক্ষের মধ্যে টানাপোড়েন তৈরি হয়।
সাবেক গভর্নর ফরাসউদ্দিনের মতে, আলোচনার ভিত্তিতে কেইপিজেড সমস্যার সমাধান সম্ভব। প্রয়োজনে সরকার কেইপিজেড কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করে পারস্পরিক দেনা-পাওনার ভিত্তিতে সমস্যার সমাধান করতে পারে। এমনকি আলোচনার ভিত্তিতে সুসম্পর্ক বজায় রেখেই কেইপিজেড কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সরকার কিছু জমি ফেরত নিতে পারে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী চেয়ারম্যান এস এ সামাদ বলেন, কেইপিজেড বিষয়ে বিনিয়োগ বোর্ডের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। তাই এ ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বোর্ডের খুব বেশি করারও নেই। তিনি আরও বলেন, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও প্রবৃদ্ধির জন্য যেসব নীতি প্রণয়ন করা হয় সেগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক ও সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, সরকার ২০২০ সালের মধ্যে ৮ শতাংশ মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি প্রবৃদ্ধির যে লক্ষ্য ঠিক করেছে বিদ্যমান নীতি সহায়তা ও অবকাঠামো দিয়ে সেটি অর্জন করা সম্ভব নয়। একদিকে সরকার বলছে, বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়ছে, অন্যদিকে বিদ্যুৎ-সংযোগ পাচ্ছেন না শিল্পোদ্যোক্তারা। তিনি বলেন, জিডিপি প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি বেসরকারি খাত। কিন্তু বেসরকারি খাতের বিনিয়োগে এক ধরনের স্থবিরতা বিরাজ করছে। এ অবস্থায় বিনিয়োগ বাড়াতে হলে নীতি ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার এবং অবকাঠামো উন্নয়ন খুবই জরুরি। দুই দশক ধরে দেশে বড় ধরনের কোনো নীতি সংস্কার হয়নি।
মেট্রো চেম্বারের সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছাড়া দেশি-বিদেশি কোনো বিনিয়োগই বাড়বে না। বর্তমানে যে বিদেশি বিনিয়োগ আসছে সেটিকে অর্থের দিক থেকে বিবেচনা না করে ওই বিনিয়োগের মান বিবেচনা করতে হবে।
ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম বলেন, দিন দিন দেশে ব্যবসার খরচ বাড়ছে আর কমছে মুনাফা। ফলে বিনিয়োগের আগ্রহ হারাচ্ছেন উদ্যোক্তারা।
বিনিয়োগ খরা দূর করতে ব্যবসায়ীদের সমস্যার কথা শুনতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গবেষক ও ব্যবসায়ীদের নির্দিষ্ট সময় পরপর বৈঠকের দাবি তোলেন প্রবাসী বাংলাদেশিদের সংগঠন সেন্টার ফর এনআরবি-এর চেয়ারম্যান এম এস সেকিল চৌধুরী। তাঁর এ দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করেন মেট্রো চেম্বারের নেতারাও।
সেকিল চৌধুরী বলেন, ব্যবসায়ীদের অভাব-অভিযোগের কথা সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছায় না। প্রধানমন্ত্রীর আশপাশে যাঁরা থাকেন তাঁরা প্রধানমন্ত্রীকে প্রকৃত চিত্র জানান না। প্রধানমন্ত্রী যা শুনতে পছন্দ করেন সেটুকুই তাঁরা বলেন। তাই বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের সমস্যার প্রকৃত চিত্র জানতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নির্দিষ্ট সময় পরপর বিনিয়োগকারী, ব্যবসায়ী ও গবেষকদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া দরকার। তিনি আরও বলেন, সব বিষয়ে রাজনীতিবিদেরাই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। তাও রাজনৈতিক কোনো আদর্শ থেকে নয়, গুটিকয়েক মানুষের লাভক্ষতির বিবেচনায় গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে আরও বক্তব্য দেন সানেমের চেয়ারম্যান বজলুল হক খোন্দকার, সাবেক সচিব সিদ্দিকুর রহমান ও সোহেল আহমেদ চৌধুরী, উত্তরা গ্রুপের চেয়ারম্যান মতিউর রহমান প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১০:৫৬:৫৪   ৩১৪ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

অর্থ ও বানিজ্য’র আরও খবর


অর্থনীতি নভেম্বরে মূল্যস্ফীতি কমে ৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ
ইসলামী ব্যাংকে পর্যবেক্ষক নিয়োগ, সরানো নিয়ে প্রশ্ন
চেক ডিজঅনার মামলার রায় দুই মাসের জন্য স্থগিত
মোবাইল ফাইনান্সিয়াল সার্ভিসের আড়ালে হুন্ডি, গ্রেপ্তার ৬
১৮ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ১০৫ কোটি ৯৯ লাখ ডলার: বাংলাদেশ ব্যাংক
বৈশ্বিক নানা সংকট সত্ত্বেও বাড়লো মাথাপিছু আয়
বাংলাদেশ গোটা বিশ্বকে চমকে দিয়েছে : মার্টিন রাইজার
আইএমএফ এর সাথে সমঝোতা : সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেবে
আইএমএফ এর ঋণ গ্রহণ করা হবে নিরাপদ রিজার্ভ গড়ে তোলার জন্য: বাণিজ্যমন্ত্রী
টবগী-১ কূপে পাওয়া যাবে দৈনিক ২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস

আর্কাইভ