বঙ্গনিউজ ডটকমঃফোনে কথা বলার মাঝে মজা করে বলতাম, আচ্ছা আমাদের কি কখনো দেখা হবে? মেঘ আলতো করে হাসতো, সে হাসি আমার কাছে খুব রহস্যময় মনে হতো। মাঝে মাঝে ভাবতাম, আমার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে বন্ধুদের মধ্যে থেকে কি কেউ মজা করছে, নাকি মেঘ নামে রহস্যময় এ বালিকা মেঘের রাজ্য থেকে খানিকটা সময় মজা করে সময় পার করছে, যার আদৌ কোনো সম্ভাবনা নেই; মেঘের রাজ্যের অন্ধকার থেকে আলোতে এসে দৃশ্যমান হওয়ার। তাই কল্পনাতেই মেঘের সাথে লুকোচুরি খেলি, কলাভবন থেকে গল্প করতে করতে হেঁটে চলে যাই চারুকলার দিকে, মাঝে মাঝে ডিপার্টমেন্ট থেকে বৃষ্টিতে ভিজে একসাথে হাঁটি কার্জন হল পর্যন্ত।
খ. সকাল থেকে আকাশজোড়া মেঘ। তুমুল বৃষ্টি হচ্ছে কয়েক দিন ধরে। মেঘের সাথে বেশ কিছুদিন ধরে কথা হচ্ছে না, অবশ্য ওর ওপর কিছুটা অভিমান কাজ করায় ফোন দিচ্ছি না, অভিমান বড়ই খারাপ; এটি যখন ভর করে মধুর সম্পর্কও তখন তিক্ত হয়ে যায়। সর্বশেষ মেঘের সাথে যখন কথা হয় মেঘ বলেছিল, তাদের গ্রামের পাশ দিয়ে বহমান একটি নদী আছে, নাম পোড়াগঙ্গা। ভবানীপুর ও পশ্চিমপাড়ার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত। পোড়াগঙ্গাকে এখন আর নদী বলা হয় না, গাঙ বলা হয়। ভরা বর্ষায় পোড়াগঙ্গা পানিতে ভরে ওঠে, বর্ষায় যখন বৃষ্টি হয় গাঙ থেকে কুনো ব্যাঙের গ্যাঙ গ্যাঙ আওয়াজ হতে থাকে। রাতে গাঙের পাশে ধানক্ষেত থেকে ব্যাঙের ডাক শোনা যায় সাথে ঝিঁ ঝিঁ পোকার। গভীর রাত অবধি অবিরাম সে শব্দে চার পাশ মুখরিত থাকে, রাতে যখন কথা হতো; মাঝে মাঝে মেঘ ব্যাঙ আর ঝিঁ ঝিঁ পোকার শব্দ শোনাত।
গ. সেদিন ছিল ৯ আষাঢ়। সকাল থেকে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন ভাব, কিন্তু বৃষ্টির ফোঁটা পড়া শুরু হয়নি। আকাশে রোদ আর বৃষ্টির লুকোচুরি খেলা হচ্ছে। শাহবাগ থেকে হাতিরপুলের দিকে হেঁটে আসছিলাম। হঠাৎ বৃষ্টি পড়া শুরু হওয়ায় পাশের একটি শপিংমলে ছুটতে লাগলাম, ঢুকে পড়লাম রোজভিউ প্লাজায়। মাথা পানিতে ভিজে যাওয়ায় পকেটে থাকা রোমাল দিয়ে মুছছি। মেঘ ফোন করল, ফোন রিসিভ করে অভিমানের সুরে বললাম, ক্যামন আছেন স্যার? ব্যস্ততার মাঝে ফোন দেয়ার সময় হলো! মেঘ নরম গলায় লজ্জার ভঙ্গিতে বলল, দুঃখিত; এমনটি হওয়ার জন্য। ইদানীং একটু ব্যস্ত ছিলাম, এক্সাম নিয়ে; হঠাৎ করেই ডেট পড়ে গেল তো! আমিও এ ইস্যুটিকে আর সামনে বাড়াতে চাইলাম না। মেঘ প্রশ্ন ছুড়ে দিলো কী করছেন?
Ñবাইরে বের হয়েছিলাম, কিন্তু বৃষ্টিতে আটকে আছি।
ঘ. মেঘের কাছে পোড়াগঙ্গা, ভবানীপুর ও পশ্চিমপাড়ার কথা শুনতে শুনতে খুব আগ্রহ জাগল এ তিনটি স্থান দেখার। বর্ষায় না গেলে পোড়াগঙ্গার স্বরূপ দেখা সম্ভব হবে না। কারণ বর্ষায় পোড়াগঙ্গা যৌবনের পরিপূর্ণতা পায়, বছরের বাকি সময়গুলো থাকে পানিশূন্য। আষাঢ় মাসের ১৩ তারিখে মেঘকে কিছু না জানিয়ে চলে এলাম তার প্রিয় জায়গায়, আজো আকাশ মেঘাচ্ছন্ন বৃষ্টি ঝরছে; কী সুন্দর বড় বড় ফোঁটা! কিন্তু হাতে নিলেই নিমিশে শেষ ! কিছুক্ষণ একটি চায়ের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে এভাবেই বাইরে হাত পেতে বৃষ্টির সাথে খেলা করলাম। আর দূরপানে পোড়াগঙ্গা থেকে বাতাসের শোঁ শোঁ শব্দে অদ্ভুত অনুভূতির সৃষ্টি হলো। মোবাইলের মেসেজ অপশনে গিয়ে মেঘকে একটি খুদে বার্তা পাঠালাম, পোড়াগঙ্গার সামনে দাঁড়িয়ে আষাঢ়ের বৃষ্টি দেখছি।
মেঘ প্রতি উত্তরে জানাল, কল্পনায়!
না, বাস্তবে…
মেঘের উত্তর, মজা করছেন,
মজা করব কেন? এখানে বৃষ্টি দেখা কি নিষেধ!
তা … না, কিভাবে এলেন এত দূর?
প্রসঙ্গ পাল্টিয়ে মেঘকে জানালাম, এ বৃষ্টিতে পোড়াগঙ্গার তীর ধরে কারো হাতে হাত রেখে খুব ভিজতে ইচ্ছে করছে; হেঁটে যেতে ইচ্ছে করছে খানিকটা পথ তার পায়ের নিক্কনের রিনিঝিনি আওয়াজের সাথে তাল মিলিয়ে।
ইচ্ছের কথা শুনে মেঘ জানাল, এখনো কদম ফুল ফুটেনি; কদম ফুল ফুটুক তার পর না হয় বৃষ্টির ভেতর হাঁটা যাবে…
আমি আর কোনো খুদে বার্তা পাঠালাম না, দোকানির কাছ থেকে একটি পলিব্যাগ চেয়ে নিলাম; সেলফোনটি পলিব্যাগে মুড়িয়ে পকেটে রেখে দিলাম। বাইরে বের হয়ে একা ভিজতে লাগলাম, দোকানে থাকা অন্যেরা এ দৃশ্য দেখে পাগল ভাবে আমায়। ভবানীপুর থেকে সোজা হেঁটে চলছি নওপাড়ার দিকে, পাশে বয়ে চলছে সর্পনীল পোড়াগঙ্গা; আমার কেন জানি ক্ষীণ সন্দেহ হলো মেঘ পেছন থেকে আমায় অনুসরণ করছে, কিছু দূর হেঁটে পেছনে তাকালাম, কেউ নেই! -
বাংলাদেশ সময়: ২০:৪৪:২০ ৩১৪ বার পঠিত