বঙ্গ নিউজ ডটকমঃএর আগে আর কখনও কোনো আসামির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে এতোটা টানাটানি হয়নি। মুম্বাই বোমা হামলার ক্রীড়নক ইয়াকুব মেমনের ক্ষেত্রে এমনটাই হলো। আসামির প্রাণভিক্ষার আবেদন রাষ্ট্রপতি খারিজ করে দেওয়ার পর ফাঁসি কার্যকরে আর বাঁধা থাকেনি। তবে বৃহস্পতিবার ভোর পর্যন্ত এ নিয়ে সংশয়ও কাটেনি।
১৯৯৩ সালে মুম্বাইয়ের বিভিন্ন স্থানে বোমা হামলায় ২৫৭ জন নিহত হন। এ হামলায় সংশ্লিষ্ট ছিলেন ইয়াকুব মেমন। এই অভিযোগেই তার মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। এরপর তার প্রথম প্রাণভিক্ষার আবেদন ২০১৪ সালের মে মাসেই খারিজ করে দেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি।
প্রথম প্রাণভিক্ষার আবেদন মেমনের পক্ষে করেছিলেন তার ভাই। এরপর মৃত্যুদণ্ডের সাজার বদলে যাবজ্জীবন দণ্ডের আবেদন জানান ইয়াকুব। দ্বিতীয় আবেদনও খারিজ করে দেন রাষ্ট্রপতি। তবে এবার সামনে চলে আসে আইনি জটিলতা ও বিভ্রান্তি। দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েন আইনজীবীরা। তারওপর এ ব্যাপারে স্থগিতাদেশ চেয়ে মানবাধিকার কর্মী ও সমাজকর্মীদের আবেদন পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে।
আগেরদিন বুধবার (২৯ জুলাই) দুপুরে সুপ্রিম কোর্টের বিশেষ বেঞ্চে মেমনের আবেদনের ব্যাপারে শুনানির মধ্য দিয়ে মূল ঘটনার শুরু। বেঞ্চ তার রায় জানানোর আগেই মেমন রাষ্ট্রপতির কাছে দ্বিতীয়বার প্রাণভিক্ষার আবেদন জানান। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে দীর্ঘ সময় আলোচনার পর এদিন রাত পৌনে ১১টার দিকে আবেদন খারিজের সিদ্ধান্ত নেন প্রণব মুখার্জি। এরপর রাত দু’টোয় প্রধান বিচারপতি এইচ এল দাত্তুর বাসভবনে ফের শুনানি শুরু হয়। মেমনের আবেদন সুপ্রিম কোর্টের যে বিশেষ বেঞ্চ দুপুরে খারিজ করে দিয়েছিল, সেই বেঞ্চই বসে এবারও।
কেন্দ্রীয় জেলকোড ও মহারাষ্ট্র জেলকোড সামনে চলে আসায় বিভক্তির সৃষ্টি আইনজীবীদের মধ্যে। কেন্দ্রীয় জেলকোড অনুযায়ী ১৪ দিন আগে ও মহারাষ্ট্র জেলকোড অনুযায়ী ৭ দিন আগে আসামিকে ফাঁসির সময়সূচি জানানোর নিয়ম। এই যুক্তি খাড়া করেই মেমনের আইনজীবীরা সাজা কার্যকরে অন্তত ১৪ দিনের স্থগিতাদেশ চান। মানবাধিকার কর্মী ও সমাজকর্মীরাও ১৪ দিনের স্থগিতাদেশ চেয়ে বসেন।
শেষে ২০১৪ সালে মেমনের প্রাণভিক্ষার আবেদন রাষ্ট্রপতির খারিজ করে দেওয়ার বিষয়টিকে যুক্তি হিসেবে দাঁড় করিয়ে বৃহস্পতিবার (৩০ জুলাই) ভোর ৫টায় সমাধানে পৌঁছাতে সামর্থ্য হন বিচারকরা। এরপরই নাগপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে সকাল ৭টা ১ মিনিটে মেমনের ফাঁসি কার্যকরের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। তার ৫৪তম জন্মদিনে কার্যকর করা হলো মৃত্যুদণ্ড। এরপর ময়নাতদন্ত শেষে তার মরদেহ মুম্বাই নিতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত লাশবাহী গাড়িবহর নাগপুর বিমানবন্দরে পৌঁছেছে। মুম্বাই নিয়ে যাওয়ার পর মেমনকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। সাজা কার্যকরের ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে স্থানীয় সময় ১১টায় আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসবে বলে জানানো হয়েছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে।
এদিকে, ইয়াকুব মেমনের ফাঁসি কার্যকরকে ঘিরে দেশজুড়ে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করে সরকার। নাগপুর কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকা ঢেকে ফেলা হয় নিরাপত্তার চাদরে। মেমনের বাড়িতের বসানো হয় কড়া নিরাপত্তা। এছাড়া তিন শতাধিক সন্দেহভাজনকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম।
বাংলাদেশ সময়: ১১১১ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০১৫
আরএইচ
বাংলাদেশ সময়: ০:৪৪:১৪ ৩০৯ বার পঠিত