বঙ্গনিউজ ডটকমঃ চট্টগ্রাম কি ফিরে আসবে ঢাকায়? প্রশ্নটা শুনলেই ঝড়-বৃষ্টির কথা মনে হতে পারে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম টেস্টের শেষ দুই দিন একটা বলও পিচে পড়ল না তো সে কারণেই!
তামিম ইকবাল আসলেই চাচ্ছেন চট্টগ্রাম ঢাকায় ফিরে আসুক। তবে ঝড়-বৃষ্টি মাথায় করে নয়। মুস্তাফিজ-সাকিব-জুবায়েরদের হাত ধরে। মুশফিক-সৌম্য-তিনি নিজে, কিংবা আর কারও ব্যাটে চড়ে। হ্যাঁ, পুরো তিন দিন খেলা না হওয়া প্রথম টেস্ট থেকেই দ্বিতীয় টেস্টের যাবতীয় প্রেরণা খুঁজে নিচ্ছেন বাংলাদেশ দলের বাঁহাতি ওপেনার। ‘চট্টগ্রামে আমরা যতগুলো টেস্ট ম্যাচ খেলেছি, মোটামুটি ভালোই খেলেছি। চট্টগ্রামের টেস্টে আমরা যেভাবে এগোচ্ছিলাম, সেভাবে যদি আমরা এখানেও শেষ করতে পারি, তাহলে বাংলাদেশের জন্য সব মিলিয়ে খুব ভালো একটি সিরিজ হবে’—দলের প্রতিনিধি হয়ে মিরপুরে সংবাদ সম্মেলনে এসে কাল বলছিলেন টেস্ট দলের সহ-অধিনায়ক।
প্রথম সেশনে মাত্র ১ উইকেট ফেলা গেলেও চট্টগ্রামে প্রথম দিনেই ২৪৮ রানে শেষ হয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ইনিংস। ৭৮ রানের লিড নিয়েছিল বাংলাদেশ। ঢাকা টেস্টের গতিপথ ঠিক করে দেওয়ায়ও প্রথম সেশন বা প্রথম দিনটাকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভাবছেন তামিম, ‘শুরুটা ভালো করতে হবে। ব্যাটিং, বোলিং যা-ই করি না কেন, প্রথম দিন, প্রথম সেশনটা ভালো হতে হবে। এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।’ কেন গুরুত্বপূর্ণ, দিলেন সেই ব্যাখ্যাও, ‘যেদিন আমরা ভালো খেলি, শুরু থেকেই ভালো খেলি। পরে ওই ছন্দটা ধরে এগিয়ে যাই।’
টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকান ফাস্ট বোলাররাই বাংলাদেশের বড় ভয় হলেও চট্টগ্রামে স্টেইন-মরকেল-ফিল্যান্ডাররা আতঙ্ক ধরাতে পারেননি। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের মন্থর উইকেট একটা কারণ। পেসারদের জন্য কিছুই ছিল না তাতে। সে তুলনায় ঢাকার উইকেট একটু হলেও গতিময়। এখানে কিছুটা হলেও ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে দক্ষিণ আফ্রিকার গতিতারকারা। তামিমের ভাষায়, ‘ওরা সবাই ভালো বোলার। সবাই সমান। চট্টগ্রামে তাদের জন্য কিছু ছিল না। তবে এখানে হয়তো একটু বেশি সুবিধা পাবে।’
এ রকম বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে উইকেটে থিতু হওয়াটাই প্রথম কাজ। তামিমের মতে, থিতু হওয়া মানে অন্তত ২০টা রান ঠিকঠাকভাবে করা, ‘টেস্টে প্রথম ২০ রান করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি হই, বা দলের যে-ই হোক, শুরুটা ভালো হলে ইনিংস যতটা সম্ভব বড় করার চেষ্টা করতে হবে। কেউ বড় ইনিংস খেলে দিলে অন্যদের কাজ সহজ হয়ে যায়।’ ব্যাটিংয়ে যেমন উইকেট ধরে রাখাটাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন, বোলিংয়ে জোর দিচ্ছেন উইকেট ফেলার ওপর, ‘আমরা যদি রান করি, পরে আবার ২০ উইকেট নিতে না পারি, তাহলে ফলাফল আমাদের পক্ষে আসবে না। বোলিংয়ে দ্রুত উইকেট ফেলতে হবে, ব্যাটিংয়ে উইকেট ধরে রাখতে হবে।’
প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে সেটাই করছিলেন তামিম। কিন্তু হঠাৎই ডিন এলগারের একটা ফুলটস বিভ্রান্ত করল। সুইপ খেলতে গিয়ে বোল্ড, যেটাকে এখন মনে হচ্ছে ‘ভুল শট’। ১২৯ বলে ৫৭ রানের ইনিংসে ওই একটাই ভুল শট খেলেছেন বলে দাবি করলেও তামিম মানছেন, ‘ওই শটটা হয়তো আমার খেলা উচিত হয়নি। এ ছাড়া আর কোনো বলে মনে হয় না সে রকম কিছু করেছিলাম। আউট হওয়ার জন্য আসলে একটা বলই দরকার!’
গত বছরটা চরম হতাশায় কাটলেও বাংলাদেশের ক্রিকেটের মুকুটে এ বছর যোগ হচ্ছে একটার পর একটা অর্জন। বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলে আসার পর পাকিস্তান ও ভারতের বিপক্ষে সিরিজ জয়। এরপর দক্ষিণ আফ্রিকাকে ওয়ানডে সিরিজে হারিয়ে এখন টেস্টেও উঁকি দিচ্ছে ভালো কিছুর স্বপ্ন। তবে তামিম মনে করিয়ে দিলেন, কাজটা সহজ নয় মোটেও, ‘আমরা বিশ্বের ১ নম্বর টেস্ট দলের সঙ্গে খেলছি। তাদের বিপক্ষে ভালো ফলাফল পেতে সব বিভাগে শতভাগ দিতে হবে। সেরাটা খেলতে হবে। পরিকল্পনার পুরো প্রয়োগ ঘটাতে হবে।’
টানা সাত-আট মাস ধরে ভালো খেলে যাওয়াও বাংলাদেশের ক্রিকেটে নতুন এক অধ্যায়। আগে একটি-দুটি সিরিজ একটু ভালো খেলেই আবার পুরোনো চেহারায় ফিরে যেত দল। কিন্তু এখন যেন প্রতিটা সিরিজেই নিজেদের ছাড়িয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। তামিম এর একটাই কারণ দেখছেন—ভালো খেলার ক্ষুধা, ‘এ বছর আমরা ওয়ানডেতে অনেক কিছু অর্জন করেছি। ওই ক্ষুধাটা আমার মনে হয় সবার মধ্যে আছে। বিশেষ করে টেস্ট ক্রিকেটে আমরা আরও অনেক কিছু অর্জন করতে চাই। এখানে আমাদের অনেক উন্নতি করতে হবে।’
ঢাকা টেস্ট সে উন্নতির পথেই বাংলাদেশের আরেকটি সিঁড়ি।
বাংলাদেশ সময়: ১০:৫৯:৩৮ ৩৫০ বার পঠিত