সমুদ্র গুপ্ত : এক স্বপ্নচারী কবি

Home Page » সাহিত্য » সমুদ্র গুপ্ত : এক স্বপ্নচারী কবি
মঙ্গলবার, ২৮ জুলাই ২০১৫



বঙ্গনিউজ ডটকমঃকবি সমুদ্র গুপ্ত ষাটের দশকের মাঝামাঝি সময়ে কবিতা গল্প সাহিত্য সমালোচনা প্রবন্ধ নিবন্ধ সাহিত্যবিষয়ক বৈচিত্র্যময় রচনা লেখালেখি শুরু করেন। 

তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘রোদ ঝলসানো মুখ’ ১৯৭৭-এ প্রকাশিত হয়। সমসাময়িককালে অন্যতম কবি হিসেবে তিনি পাঠক-লেখক মহলে পরিচিত হন। কবি সমুদ্র গুপ্তের ১৩টি কাব্যগ্রন্থ, একটি গদ্য, একাধিক সম্পাদিত ও অনুবাদগ্রন্থ ছাড়াও অনেক সৃজনশীল লেখা প্রকাশিত হয়েছে। তার কবিতা ইংরেজি, ফরাসি, হিন্দি, সিংহলি, চীনা ও নেপালি ভাষায় অনূদিত ও প্রকাশিত হয়েছে। তার প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- রোদ ঝলসানো মুখ, ¯^প্নমঙ্গল কাব্য, চোখে চোখ রেখে, নদীও বাড়িতে ফেরে, শিকড়ের খোঁজে, একাকী রোদ্রের দিকে, ঘাসপাতার ছুরি, মাথা হয়ে গেছে পাখা শুধু ওড়ে, তাহলে উঠে দাঁড়াবো না কেন ইত্যাদি। এ ছাড়া প্রবন্ধ নিবন্ধ সমালোচনা গদ্য সব মিলিয়ে বেশ কিছু গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।
সমুদ্র গুপ্ত ¯^াধীনতা-পূর্বকালে দৈনিক আওয়াজ থেকে শুরু করে দৈনিক সংবাদের খেলাঘর, দৈনিক আজদের মুকুলের মাহফিল, সাপ্তাহিক গণশক্তি, দৈনিক গণকণ্ঠসহ নানা পত্রপত্রিকায় ফিচার সম্পাদক, নির্বাহী সম্পাদক ও সম্পাদক পদে যথাযথ দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি দেশের বিভিন্ন সময়ে জাতীয় সঙ্কটকালে সম্মুখে থেকে একজন নিষ্ঠ কর্মীর মতো সতত দায়িত্ব পালন করেছেন এবং বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়ন সংস্থায় অগ্রণী ভ‚মিকা পালন করেন। ১৯৯০ সালে ¯ৈ^রাচারবিরোধী তীব্র আন্দোলনে গণতন্ত্রের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করেন। তিনি নব্বই-এর আন্দোলনকালে প্রতিষ্ঠিত জাতীয় কবিতা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন।

সমুদ্র গুপ্ত বিভিন্ন সময় পুরস্কার পেয়েছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য পুরস্কার- হুমায়ুন কবীর স্মৃতি সাহিত্য, লেখক শিবির সাহিত্য, যশোর সাহিত্য পরিষদ পুরস্কারসহ দেশের বিভিন্ন পুরস্কার পেয়েছেন। পেয়েছেন- ভারতের কবি বিষ্ণু দে সাহিত্য এবং ত্রিপুরা রাজ্যের সরকার প্রদত্ত ভাষা দিবস পুরস্কার যা আমাদের দেশের সম্মান বয়ে এনেছে। এককথায় কবি সমুদ্র গুপ্তের লেখা বাঙলা সাহিত্য ভাÊারকে সমৃদ্ধ করেছে। চলমান যান্ত্রিক সভ্যতার গ্যাঁড়াকলে পড়ে মানুষেরা যেখানে এক আশ্চর্যময় যান্ত্রিক জীবে পরিণত হওয়ার উপক্রম হয়েছে, সেখানে একজন কবি সমুদ্র গুপ্ত মানুষের সত্তাকে ধারণ করে শিল্প সাহিত্য কবিতা নিরলসভাবে উর্বর জমিতে চাষ করে নিজেকে কবিতার দক্ষ চাষি হিসেবে তৈরি করেছিলেন। আর এখানেই একজন মানুষ এবং কবির মধ্যে দিব্য ঢের পার্থক্য চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে।
রাষ্ট্র ভিন্ন ভিন্নকালে মানুষকে ভয় দেখায়, ¯^াধীনভাবে কথা বলতে নিষেধ করে। কলমের কালিকে নির্দিষ্ট গÊির মধ্যে বেঁধে দেয়ার হুকুম জারি করে। রাষ্ট্র মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার গণতন্ত্র বাক¯^াধীনতাকে নির্মমভাবে গলাটিপে হত্যা করে। সরকারের হুমকি-ধমকিতে ভীত হরিণের মতো থরথর করে কাঁপতে হয়। এখানে একজন বড় সুদখোর ঘুষখোর দেশের অর্থসম্পদ লুণ্ঠনকারী দুর্নীতিবাজ মিথ্যাবাদীরা সমাদৃত হয়, সম্মান পায়, রাষ্ট্রের বড় বড় আসনে বসার সুযোগ পায় এবং অসতেরা জনপ্রিয় হয় তাদের ফুলের মালা দেয়া হয়। পক্ষান্তরে একজন কবি সাহিত্যিক সৃজনশীল মননশীল সমাজ সচেতন দেশপ্রেমিক সৎ মানুষেরা সব কিছু থেকে বঞ্চিত হয়। রাষ্ট্র তাদের জন্য কোনো স্থান সৃষ্টি করে রাখেনি।
বারবার ভালো মানুষগুলো আক্রান্ত হয়। রাষ্ট্র-সরকার ইচ্ছা করলে কবি সমুদ্র গুপ্তকে বাঁচানোর জন্য উন্নত চিকিৎসার লক্ষ্যে অনেক অর্থ ব্যয় করতে পারত। কিন্তু তা হওয়ার নয়। যদি একটু ভালো উন্নত চিকিৎসা করা হতো হয়তো কবি এই সুন্দর পৃথিবীতে আরো কিছু দিন আলো বাতাস নিঃশ্বাস নিতে পারত। কবি সমুদ্র গুপ্ত নেই। রক্তে-মাংসে গড়া প্রিয় সেই শুভ্র কেশের অধিকারী মানুষটিকে আমরা আর কোনো দিন দেখতে পাব না। কিন্তু তিনি তার সাহিত্যকর্মের জন্য আমাদের মধ্যে যুগ যুগ ধরে বেঁচে থাকবেন।

-

বাংলাদেশ সময়: ২২:৩৫:০২   ৩২২ বার পঠিত  




সাহিত্য’র আরও খবর


সাধক কবি রামপ্রসাদ সেন: স্বপন চক্রবর্তী
ড. গোলসান আরা বেগমের কবিতা “আমি তো গাঁয়ের মেয়ে ”
৫০ বছরের গৌরব নিয়ে জাবির বাংলা বিভাগ বিশাল ‘সুবর্ণ জয়ন্তী’ উৎসব আয়োজন করেছে
অধ্যক্ষ ড. গোলসান আরা বেগমের কবিতা- ‘তোমার খোঁজে ‘
অতুলপ্রসাদ সেন: ৩য় (শেষ ) পর্ব-স্বপন চক্রবর্তী
অতুলপ্রসাদ সেন;পর্ব ২-স্বপন চক্রবর্তী
অতুলপ্রসাদ সেন-স্বপন চক্রবর্তী
অধ্যক্ষ ড. গোলসান আরা বেগমের কবিতা ” যাবে দাদু ভাই ?”
বাদল দিনে- হাসান মিয়া
ইমাম শিকদারের কবিতা ‘ছোট্ট শিশু’

আর্কাইভ