বঙ্গনিউজ ডটকমঃনির্বাচন ইস্যুতে বিএনপি অবস্থান পরিবর্তন করায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানায় আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি নেতৃত্বাধীন দুই জোটের বাইরে থাকা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। তাদের অনেকেই বর্তমান অবস্থানকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাদের মতে, এতে চলমান রাজনৈতিক অচলাবস্থার অবসান ঘটবে। গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা ব্যাহত হাওয়ার আশংকা দূর হবে। অবস্থান পরিবর্তনকে ভোটের রাজনীতিতে নতুন কৌশল হিসেবে দেখছেন অনেকেই। সরকারের উচিত বিএনপির প্রস্তাবকে ইতিবাচকভাবে নেয়া। আবার কেউ কেউ বলেছেন, বিএনপি তাদের দাবি থেকে সরে আসলেও বাস্তবতা হচ্ছে দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে না। সর্বশেষ অনুষ্ঠিত তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনই এর বড় উদাহরণ। তারা অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে পুরো নির্বাচনী ব্যবস্থাকেই শক্তিশালী এবং ঢেলে সাজানোর পরামর্শ দিয়েছেন। প্রতিবেদন যুগান্তর।
সোমবার পৃথক প্রতিক্রিয়ায় এসব নেতা ১৪ দল এবং ১০ দলীয় জোটের বাইরে থাকা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা এ মত দেন। এর আগে শনিবার রাতে এক মতবিনিময় সভায় খালেদা জিয়া বলেন, তত্ত্বাবধায়ক না হোক, যে কোনো নামে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ মধ্যবর্তী নির্বাচন চায় তার দল। বিএনপি ঘরানার বুদ্ধিজীবী হিসেবে পরিচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, বর্তমান সরকারপ্রধান বা রাষ্ট্রপতি সপদে থাকলেও নির্বাচনে আপত্তি নেই বিএনপির। তবে সেই নির্বাচন হতে হবে অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ। এজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ সরকারকেই নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, ক্ষমতাসীন ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সমঝোতা হতে হবে। তাহলে সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনে যেতে কারও আপত্তি থাকার কথা নয়।
সংশ্লিষ্টদের মতে, আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে এবং বর্তমান বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার কিংবা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি থেকে সরে এসেছে বিএনপি। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে থেকেই তারা এ দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। শেষ পর্যন্ত সরকারকে টলাতে না পাড়ায় এবং দাবি আদায় না হওয়ায় নির্বাচন বর্জন করে বিএনপিসহ তাদের শরিকরা। এরপর এক বছর বিরতি দিয়ে একই দাবিতে নতুন করে আন্দোলনে নামে বিএনপি। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বছর পূর্তির দিন থেকে টানা অবরোধ-হরতালের ডাক দেয় দলটি। তাদের এ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হয় ব্যাপক সংঘাত-সহিংসতার। যা দেশে-বিদেশে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়। একপর্যায়ে হরতাল-অবরোধের পথ থেকেও সরে আসে বিএনপি। এখন তারা তাদের পুরনো দাবিতেও ছাড় দিতে রাজি।
বিষয়টিকে বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ইতিবাচক আখ্যা দিয়ে কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম সোমবার বলেন, দুই দল বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যকার বিরোধ যে পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে তাতে গণতন্ত্র বিপন্ন হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। এ অবস্থার অবসানে বিএনপি চেয়ারপারসন একটি ইতিবাচক প্রস্তাব দিয়েছেন। সরকারের উচিত এ সুযোগ কাজে লাগানো। এতে করে রাজনৈতিক হানাহানি বন্ধ হবে। জয়ী হবে গণতন্ত্র। তিনি আরও বলেন, দুই দল কাছাকাছি আসলেই নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে না। অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে চাইলে অবশ্যই টাকার খেলা, পেশিশক্তির দাপট, প্রশাসনিক কারসাজি এবং সাম্প্রদায়িক প্রচারণা বন্ধ করতে হবে। নির্বাচনী ব্যবস্থার আমূল সংস্কার করতে হবে। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে- এসব বিষয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নীরব। তারা মানি পওয়ার ও মাসেল পাওয়ার দিয়ে জনগণের রায় নিতে চায়।
ঐক্য ন্যাপের সভাপতি প্রবীণ রাজনীতিবিদ পঙ্কজ ভট্টাচার্য এ প্রসঙ্গে বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার কিংবা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবি থেকে বিএনপির সরে আসা ছাড়া আর কোনো পথ খোলা ছিল না। কারণ তাদের এ দাবির সঙ্গে সাধারণ মানুষের কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা ছিল না। আর জনসম্পৃক্ততাহীন আন্দোলন ব্যর্থ হবেই। বিএনপির আন্দোলনও তাই ব্যর্থ হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সহিংস রাজনীতির মধ্য দিয়ে অন্য পথে ক্ষমতায় যাওয়াও যে সম্ভব নয়, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর তাদের ব্যর্থ আন্দোলনেও এ বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে গেছে। তাই এখন তাদের নতুন করে বোধদয় হয়েছে। যে কারণে হয়তো ইউ টার্ন নিয়েছে দলটি। তাদের উচিত এ বিষয়ে আরও পরিষ্কার অবস্থান গ্রহণ করা।
গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি বিশিষ্ট আইনজীবী অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, বিএনপি চেয়ারপাসনের এ প্রস্তাব রাজনীতির জন্য ইতিবাচক। বাস্তবতা মেনে নিয়েই তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার কিংবা নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি থেকে সরে এসেছেন। অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের নিশ্চয়তা চেয়েছেন। সরকারের উচিত এতে সাড়া দেয়া। এতে করে রাজনৈতিক হানাহানি, সংঘাত-সহিংসতা বন্ধ হবে। গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে। তিনি আরও বলেন, তবে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হবে না- এটাও বাস্তবতা। এ বাস্তবতা মেনে নিয়ে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করতে হবে। এ জন্য পুরো নির্বাচনী ব্যবস্থাকেই শক্তিশালী এবং ঢেলে সাজাতে হবে। বর্তমান নির্বাচন কমিশন ভেঙে দিতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে আর্থিক এবং প্রশাসনিক ক্ষমতা দিতে হবে।
এ বিষয়ে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন বলেন, রাজনীতিতে বিএনপির হঠাৎ করে ইউ টার্ন তাদের নিজেদের টিকিয়ে রাখার কৌশল। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে ও পরে বিএনপি নানাভাবে আন্দোলন-সংগ্রাম করেও সফল হতে পারেনি। তাই বাধ্য হয়ে নিজেদের রক্ষায় এখন তারা কৌশল পরিবর্তন করেছে। বিএনপি নেতাদের আচার-আচরণ ও কথাবার্তায় কৌশল পরিবর্তনের সেই লক্ষণ ফুটে উঠেছে।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, বর্তমান সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের অধীনে অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অসম্ভব। সর্বশেষ অনুষ্ঠিত তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের মধ্যদিয়ে এ সত্যটি আরও একদফা প্রমাণিত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, যে আওয়ামী লীগ একসময় জনগণের ভোট এবং ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা বলে ক্ষমতায় এসেছে, সেই আওয়ামী লীগ এখন জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। এটাই বাস্তবতা। এ অবস্থায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার কিংবা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার- যে নামেই হোক একটি অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন প্রয়োজন। বর্তমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা থেকে উত্তরণে এর কোনো বিকল্প নেই। সাইফুল হক বর্তমান সংসদ ভেঙে দিয়ে সব দলের অংশগ্রহণে দ্রুত নতুন নির্বাচনের দাবি জানান।
বাংলাদেশ সময়: ২:৩২:২৯ ১৯০ বার পঠিত