বঙ্গনিউজ ডটকমঃ পাকিস্তানের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলা নিশ্চিত? বাদ পড়ছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ? আসলেই কি তা-ই?
শ্রীলঙ্কার সঙ্গে সিরিজের শেষ ম্যাচটি খেলার আগেই র্যাঙ্কিংয়ের আট নম্বর জায়গাটি নিশ্চিত করেছে পাকিস্তান। ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নয় নম্বরে নেমে যাওয়ার সম্ভাবনাও তাদের নেই। ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে থাকা আটটি দলই খেলবে ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি।
শ্রীলঙ্কাকে ৩-১ সিরিজ হারিয়েই পাকিস্তানের নিশ্চিত হয়েছে আট নম্বর জায়গাটি। আর সঙ্গে সঙ্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও জিম্বাবুয়ের সঙ্গে প্রস্তাবিত ত্রিদেশীয় সিরিজটাও বাতিল করেছে করেছে পাকিস্তান। শুধু কি ত্রিদেশীয় সিরিজ, এখন জিম্বাবুয়ে সফরেও তারা যেতে রাজি নয়। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দ্বিপক্ষীয় সিরিজও যে তাদের ফেলে দিতে পারে ঝামেলায়!
শ্রীলঙ্কার কাছে আজকের শেষ ম্যাচটি যদি তারা হারে, এর পর জিম্বাবুয়ের কাছে তিন ম্যাচের দুটিতেও হারত, তখন আবার নয়ে নেমে যেত পাকিস্তান। কদিন আগে জিম্বাবুয়ে পাকিস্তানে এসে প্রতিটা ম্যাচেই দারুণ খেলেছে। ভারতের বিপক্ষে হোম সিরিজেও ছিল লড়াইয়ের ছাপ। একটা টি-টোয়েন্টিতে তো ভারতকে হারিয়েও দিল। এই অবস্থায় কেন ঝুঁকি নেবে পাকিস্তান?
কিন্তু তবুও কি পাকিস্তানের চ্যাম্পিয়নস ট্রফি নিশ্চিত? একটা গাণিতিক সমীকরণ হিসাব করুন। ধরুন বাংলাদেশকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রস্তাব দিল, ‘এসো আমরা সেপ্টেম্বরের শুরুতে একটা তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলি।’ ওই সময় বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ কোনো দলেরই খেলা নেই। ধরে নিন, বাংলাদেশ রাজিও হয়ে গেল। এবং শুধু ধরে নেওয়ার স্বার্থে ধরে নিন, বাংলাদেশ সিরিজটা ২-১-এ হারল। তখন কী দাঁড়াবে সমীকরণ?
পাকিস্তান যদি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩-২-এ সিরিজ জেতে, এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ যদি বাংলাদেশের বিপক্ষে কল্পিত এই সিরিজটা ২-১ জেতে; তখন বাদ পড়ে যাবে পাকিস্তানই! পাকিস্তানের রেটিং পয়েন্ট হবে ৯০, ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৯১, বাংলাদেশের ৯৩। আবারও র্যাঙ্কিংয়ে ওলট-পালট! আবারও চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে নতুন সমীকরণ!
আইসিসির বাছাই পর্ব প্রক্রিয়াটি কতটা ত্রুটি আছে সেটি বোঝানোর জন্যই এত কিছু শুধু এই জন্যই বলা। এবং এ ধরনের খেলার বাইরে ‘খেলা’ চলতে পারে আগামী বিশ্বকাপকে সামনে রেখে। শঙ্কাটি এখানেই। চ্যাম্পিয়নস ট্রফি স্রেফ উদাহরণ মাত্র।
র্যাঙ্কিংয়ের ছয় থেকে নয়-এই চারটি দলের মধ্যে রেটিং পয়েন্টের ব্যবধান এখন মাত্র ১০। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর শীর্ষ আট দলের নাম সরাসরি লেখা হয়ে যাবে বিশ্বকাপে। নয় ও দশে থাকা দুটো দলকে খেলে আসতে হবে বাছাই পর্ব। ছয় থেকে নয়-এই চারটি দলের বর্তমান এই ব্যবধান যদি একই রকম থাকে, তাহলে এই চারটি দলই নানা হিসাব কষবে নিজেদের ‘সেফ জোন’-এ রাখতে।
আইসিসি বলছে, বিশ্বকাপ সরাসরি খেলতে হলে থাকতে হবে সেরা আটে। এই সেরা আট নির্ধারণ করে দেবে যে র্যাঙ্কিং। এই র্যাঙ্কিং নির্ধারিত হবে ম্যাচ খেলে। কিন্তু কে কার সঙ্গে কতটা ম্যাচ খেলবে, সেটি এখন আর সুনির্দিষ্ট করা নেই। যে কেউ যেকোনো সময়ে যে কারও সঙ্গে খেলতে পারে। এই নিয়মটা যে কত বড় ভুলের ওপর দাঁড়িয়ে আছে, সেটাই চোখে আঙুল তুলে দেখিয়ে দিল গত কয়েক দিনের ক্রিকেটীয় ঘটনাগুলো।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ-পাকিস্তান মিলে ত্রিদেশীয় সিরিজটা খেললে যেমন ছিটকে পড়ার শঙ্কা ছিল বাংলাদেশের, এখনো যেমন বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ খেললে ছিটকে পড়তে পারে পাকিস্তান। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর যত ঘনিয়ে আসবে, ততই এ ধরনের ‘ছিটকে পড়া’ আর ‘ছিটকে ফেলা’র সমীকরণ চলবেই।
বাংলাদেশের সামনে আপাতত দুটো পথ খোলা। প্রথমত, নিজেদের আরও ওপরে নিয়ে গিয়ে অবস্থান সুরক্ষিত করা। প্রথম পথের সমস্যা হচ্ছে এই সময়ের মাঝে শীর্ষ নয় দলের তুলনায় বাংলাদেশের খেলা ম্যাচের সংখ্যা। এই সময়ে বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় সিরিজে মাত্র ১৭টি ওয়ানডে খেলবে। চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে অংশগ্রহণ বাড়তি কিছু ওয়ানডে খেলার নিশ্চয়তা দিচ্ছে বটে, কিন্তু ওই ১৭ ওয়ানডের ৫টি জিম্বাবুয়ের সঙ্গে। জিম্বাবুয়ের সঙ্গে জিতলেও বাংলাদেশের পয়েন্ট খুব বেশি বাড়বে না, উল্টো একটি পরাজয় পিছিয়ে দেবে অনেক। বাকি ১২টি ওয়ানডের ছয়টি আবার খেলতে হবে গত বিশ্বকাপের দুই ফাইনালিস্ট অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে, তাদেরই মাটিতে। সুতরাং বাংলাদেশের সামনে বেশ কঠিন সমীকরণ।
দ্বিতীয় পথটি হলো, ক্রিকেটীয় কূটনীতিতে বাংলাদেশের বেশ কিছু অনির্ধারিত হোম সিরিজ আয়োজন করা। তবে সব কিছুই করতে হবে অনেক হিসেব কষে। চোখ রাখতে হবে র্যাঙ্কিংয়ের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীদের সিরিজ ও পরিকল্পনার দিকেও। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান নির্বাহী নিজাম উদ্দিন আজ প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘আমাদের প্রথম লক্ষ্য ছিল চ্যাম্পিয়নস ট্রফি নিশ্চিত করা। সেটি নিশ্চিত হয়েছে। এর পর আমরা পরের ধাপগুলো নিয়ে ভাবব। বিষয়টি বেশ ভালোভাবেই আমাদের পরিকল্পনায় আছে।’
আইসিসির এই ত্রুটিপূর্ণ বাছাই পর্বের নিয়মটাই ক্রিকেট বিশ্বকে ‘ফেয়ার প্লে’ বা ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ থেকে ছিটকে দিতে বাধ্য করছে। যেখানে মাঠের শক্তির পাশাপাশি ভাগ্য অনেকটাই নির্ভর করছে কূটনৈতিক ক্ষমতার ওপরও। সমর্থকদের সবচেয়ে বড় আশঙ্কাটি হলো, উভয়েরই স্বার্থ আছে এমন দুটো দল যদি পাতানো সিরিজ আয়োজন করে, ভদ্রলোকের খেলা ক্রিকেট না শেষ পর্যন্ত কদর্য রূপ নেয়!
বাংলাদেশ সময়: ১৬:৩০:০৬ ৩৭১ বার পঠিত