বঙ্গ-নিউজঃবিতর্কের মধ্যেই গ্যাসভিত্তিক চারটি রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চুক্তির মেয়াদ বাড়িয়েছে সরকার।
বুধবার সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এই চারটি প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদিত হয় বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোস্তাফিজুর রহমান জানিয়েছেন।
এই চারটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মধ্যে তিনটি মেসার্স এগ্রিকো ইন্টারন্যাশনাল প্রজেক্ট লিমিটেড পরিচালিত এবং অন্যটি এনার্জি প্রাইমা লিমিটেডের।
এগ্রিকো ইন্টারন্যাশনালের ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৮৫ মেগাওয়াট ও আশুগঞ্জ ৯৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মেয়াদ এক বছরের জন্য বাড়ানো হয়েছে।
এগ্রিকোর ঘোড়াশাল ১৪৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং এনার্জি প্রাইমার ফেঞ্চুগঞ্জ ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মেয়াদ তিন বছর বাড়ানো হয়েছে।
বর্ধিত এই সময়ে সরকার কোম্পানিগুলোর থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ ৩ টাকা ২৬ পয়সায় কিনবে।
সরকারের সঙ্গে তিন বছরের চুক্তিতে এসব প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিল। তখন এগ্রিকো ইন্টারন্যাশনালের ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও আশুগঞ্জ কেন্দ্রের বিদ্যুতের দাম ছিল ৪ টাকা ৮০ পয়সা। ঘোড়াশাল কেন্দ্রের বিদ্যুৎ ৪ টাকা ৭৫ পয়সায় কিনত সরকার। এনার্জি প্রাইমার ফেঞ্চুগঞ্জ কেন্দ্রের প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ছিল ৪ টাকা ৬৫ পয়সা।
“ওভারহেড কস্ট কমার কারণে বিদ্যুতের দামও কমেছে,” বলেন মোস্তাফিজুর রহমান।
আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর উৎপাদন বাড়াতে ভাড়াভিত্তিক বা রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দিকে ঝুঁকলে তা নিয়ে সমালোচনা উঠে।
এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাঁচামাল সরবরাহে বড় অঙ্কের ভর্তুকি চলে যাওয়ার বিষয়টি সমালোচকরা বলে এলেও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, দ্রুত পরিস্থিতির উন্নতিতে এর বিকল্প ছিল না।
ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বুধবারের বৈঠকে মোট ১৩টি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোস্তাফিজুর।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে এই বৈঠকে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু উপস্থিত ছিলেন।
ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পের আওতায় কমার্শিয়াল অফ দ্য সেলফ সফটওয়্যার, হার্ডওয়্যার, নেটওয়ার্কিং ও ম্যানেজড সার্ভিস কেনার প্রস্তাবটি অনুমোদন করেছে কমিটি। মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন-২০১২ বাস্তবায়নের জন্য ভ্যাট অনলাইন প্রকল্প নিয়েছে সরকার।
২০১৬ সালের জুলাই থেকে এই আইন বাস্তবায়ন শুরু হবে। ইতোমধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য কিছু পরীক্ষামূলক কার্যক্রম হাতে নিয়েছে ভ্যাট অনলাইন প্রকল্প।
এই প্রকল্প বাস্তবায়নে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের ব্যয় হবে ২০৩ কোটি ৫৬ লাখ ২৭ হাজার টাকা। ভিয়েতনামভিত্তিক এফপিটি ইনফরমেশন সিস্টেম কর্পোরেশন এই কাজটি করবে।
এছাড়া পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের ঢাকা, রাজশাহী-রংপুর ও চট্টগ্রাম জোনের তিনটি সম্প্রসারণ প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এসব প্রকল্পে ১১০ কোটি টাকার বেশি ব্যয় হবে।
এছাড়া পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য ৮ হাজার ২০০ কিলোমিটার লাইন বসানো এবং ওই তিন বিভাগের জন্য ৬৬ হাজার ৮০০ টি পোল(খাম্বা) কেনার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে কমিটি। এই দুটো প্রকল্পে ৩০০ কোটি টাকার বেশি ব্যয় হবে।
এছাড়া ‘ডেভেলপমেন্ট অব আইসিটি ইনফ্রা-নেটওয়ার্ক ফর বাংলাদেশ গভর্নমেন্ট ফেজ-৩’ প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। চায়না এক্সিম ব্যাংকের অর্থায়নে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে।
জি টু জি এর মাধ্যমে চীনা রাষ্ট্র মালিকানাধীন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মেসার্স রেলওয়ে ইন্টারন্যাল গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড থেকে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে এই প্রকল্পের প্রয়োজনীয় পণ্য, ভৌত কাজ ও সেবা কেনা হবে। এজন্য এক হাজার ৩১৯ কোটি ২৫ লাখ ৪৬ হাজার টাকার ব্যয় প্রস্তাব অনুমোদন করেছে কমিটি।
উত্তরা আদর্শ আবাসিক শহর(তৃতীয় পর্ব) প্রকল্পের আওতায় ৮ নম্বর ব্রিজ ও তার পাশের এপ্রোচ রোড নির্মাণ কাজের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে কমিটি।
তবে উত্তরার ১৮ নম্বর সেক্টরের স্বল্প ও মধ্যম আয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য এপার্টমেন্ট নির্মাণ প্রকল্পের ১০টি ‘এ’ ভবন নির্মানের প্রস্তাব পুনঃমূলায়নের পরামর্শ দিয়ে ফেরত পাঠানো হয়েছে বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব জানান।
বাংলাদেশ সময়: ৪:৩৮:৩২ ৩৩৫ বার পঠিত