বঙ্গনিউজ ডটকমঃ ‘বাংলাদেশের সব কিছুই আমাদের বড় আপন। বিশ্বাস করুন, বাংলাদেশকে একেবারে নিজের ঘরের মতোই লাগে।’ সম্প্রতি বাংলাদেশের একটি অনলাইন গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন কলকাতার জনপ্রিয় নায়ক দেব। নিম্নে সাক্ষাৎকারে চুম্বক অংশ তুলে ধরা হল।
কথোপকথন দুটি বাক্য দিয়েই শুরু করলেন টলিউডের নায়ক, তৃণমূল কংগ্রেসের সংসদ সদস্য দীপক অধিকারী। দেব নামে যাঁর তুমুল জনপ্রিয়তা।
বাংলাদেশের মিডিয়ার কথা শুনে ভীষণ খুশি দেব। আনুষ্ঠানিক সাক্ষাৎকার বিষয়টিকে ভাবনাতেই নিলেন না। কথাবার্তা শুরু করলেন ঘরোয়া ভঙ্গিতেই। বললেন, ‘জানেন তো, আমি বাংলাদেশ যাচ্ছি শুনলেই আমার মা আর বোন দীপালি যা যা লিস্ট দেয়, শপিংয়ের জন্য তাতেই আমার হাল খারাপ হয়ে যায়। (একগাল হেসে) আচার থেকে শুরু করে শাড়ি … আমি জাস্ট পাগল হয়ে যাই।’
“বিশ্বাস করুন, অন্য কোনো দেশ সফরে ওরা কখনো এত লিস্ট ধরায় না। তবে হ্যাঁ, কিছুদিন আগে টোনিদার (পরিচালক অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী) ‘বুনোহাঁস’ ছবির শুটিংয়ে বাংলাদেশে গিয়েছিলাম। এমনিতে আমি খুব ফুডি (ভোজন রসিক) জানেন তো? অভিনয়ের চক্করে পড়ে খাওয়াদাওয়া প্রায় ভুলেই গেছি। তবে মাঝেমধ্যে তো স্কিপ করি।
মজার অভিজ্ঞতা শুনুন, একদিন আমাদের শুটিংয়ের ডিনারে সত্যি সত্যি ইলিশ বিরিয়ানি নিয়ে আসা হলো। বিশ্বাস করবেন না, আমি বহু জায়গায় বহু রকমের বিরিয়ানি খেয়েছি। অমন স্বাদ আমি কখনো পাইনি। এখনো বৃষ্টি হলে এটি খুব মিস করি।” বলে চলেন দেব।
কোনো রকমে দেবের উচ্ছ্বাস থামানো হলো। বাংলাদেশের মানুষের পক্ষ থেকে তাঁকে জানানো হলো শুভেচ্ছা।
দেবের প্রত্যুত্তর, ‘আমারও শুভেচ্ছা রইল সবার জন্য। নিশ্চয় সবাই ভালো আছেন? আর অবশ্যই খুব বাংলা ছবি দেখছেন তো?’
ধীরে ধীরে এবার পূর্বপরিকল্পিত প্রশ্নের পথে এগিয়ে গেলাম। একদিকে টানা শুটিং, অন্যদিকে সংসদ সদস্য হিসেবে অঢেল কাজ। শুনেছি, আপনি নাকি মাত্র তিন-সাড়ে তিন ঘণ্টা ঘুমান?
দেবের সোজাসাপ্টা উত্তর, ‘তার থেকে বেশি ঘুমের দরকারই হয় না। কাজের প্রতি ভালোবাসা আর টাইম ম্যানেজমেন্টটা জরুরি। তবে কাজের ব্যাপারে আমি কিন্তু বেশ খুঁতখুঁতে। একটা শটও কখনো কখনো ১০ বার রি-টেক করাই, যতক্ষণ না আমার পছন্দ হচ্ছে।’
‘তবে আমি কারো সঙ্গে কোনো প্রতিযোগিতায় নেই। আর আমি নিজের ব্যক্তিগত বিষয় বাইরের কারো সঙ্গে শেয়ার করি না। বলতে পারেন, আমি খুব প্রাইভেট পারসন।’
দেব আর শ্রাবন্তি মানেই তো হিট ছবি। কী বলবেন? হেসে দেব বললেন, ‘অবশ্যই।’ একটু সময় নিয়ে পরের প্রশ্ন করা হলো, আপনি মুম্বাইতে পরিচালক আব্বাস মস্তানের ছবি ‘টারজান : দ্য ওয়ান্ডার কার’ দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করে সোজা বাংলার নায়ক বনে গেলেন।
‘এখন পর্যন্ত মনে হয় মুম্বাইটা আমার জায়গা নয়। ভবিষ্যতে কী হবে জানি না। তবে বাংলায় এসে বাংলার দর্শকদের খুশি করতে পেরে আমি তৃপ্ত। এটাই বোধহয় একজন শিল্পীর অনেক বড় প্রাপ্তি।’ বললেন দেব।
একজন সংসদ সদস্য হয়েও অ্যাটিচ্যুট, ব্যবহার কিন্তু একই রকম রয়ে গেছে আপনার। জনপ্রিয় এ অভিনেতা বললেন, ‘সেটা ঈশ্বরের ও আমার মা-বাবার আশীর্বাদ। আমি কোনো দিন আমার নিজের রুটটা (শেকড়) ভুলিনি। প্রথম যখন ইন্ডাস্ট্রিতে আসি, তখনো যেমন ছিলাম, এখনো তেমনই আছি।’
অভিনয় করে একজন সংসদ সদস্য হিসেবে মানুষের জন্য কাজ করার সময় পান? এমন প্রশ্নে বেশ গম্ভীর গলায় দেবের উত্তর এলো, ‘পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমার ওপর যথেষ্ট ভরসা রেখেছেন। উনি শুধু বলেন, কাজ করে যাও। আমিও তাই করি। ওনার কথাটাকে বেদবাক্যের মতো মনে রাখি।’
আপনি ঘাটালের সংসদ সদস্য। ঘাটালবাসীর জন্য কী ভাবনা রয়েছে?
‘ঘাটালের কাঁসার বাসন, পটচিত্র, মাদুরশিল্প এবং তাঁতের শিল্প নিয়ে আমরা বহু প্রকল্প হাতে নিয়েছি। ইচ্ছে আছে ওখানকার বিখ্যাত শিল্প নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করার। সে সব পরিকল্পনা ক্রমশ প্রকাশ্য,’ সপ্রতিভ জবাব দেবের।
বাংলাদেশ নিয়ে একটু অন্যরকম আলোচনার জন্য বেশ কিছুক্ষণ ধরে উসখুস করছিলাম। বুদ্ধিমান দেব সেটা ধরে নিয়েই বললেন, ‘বড্ড সিরিয়াস কথাবার্তা হয়ে যাচ্ছে তাই না? (হেসে) জানেন তো, বাংলাদেশে আমার অগণিত ভাইবোন, ফ্যানদের পাশাপাশি প্রচুর মেয়ে ভক্ত আছে। বছরে শ খানেক মেইল, ফেসবুক বন্ধু তো পাই বাংলাদেশ থেকে। আর বাংলাদেশের মেয়েদের তো অসাধারণ চোখ। দেখলেই প্রে… । থাক আর বললাম না (হাসতে হাসতে)।’
এবার দ্বিগুণ কৌতূহল নিয়ে জিজ্ঞেস করেই বসলাম, কী থাকে মেইলের বয়ানে? প্রেম নিবেদন, বিয়ে করতে চাওয়া নাকি…
থামিয়ে দিয়ে দেব বললেন, ‘আজকালকার মেয়েদের কী ভাবেন বলুন তো? তারা মোটেই সহজলভ্য নয়। প্রেম-বিয়ে এসব নয়। ছবি নিয়েই মূলত সিরিয়াস আলোচনা থাকে। বন্ধু পাতানো তো খারাপ নয়। আমার টুইটারে, ফেসবুকে অগণিত বন্ধু আছে। তাদের স্বপ্নই তো শিল্পীদের বাঁচিয়ে রেখেছে।’
কথায় কথায় অনেকটা সময় পার করে শেষ বেলার প্রশ্ন করলাম, কী কী স্বপ্ন দেখেন দেব? উত্তর এলো, ‘মাইলস টু গো, বিফোর আই স্লিপ। অনেক অনেক কাজ বাকি। সব করে যেতে হবে। আর সঙ্গে ভালো কাজ করার লড়াইটাও চালিয়ে যেতে হবে।’
কথা বলতে বলতে পাশে রাখা মোবাইল ফোন সেট বেজে উঠল। মোবাইল ফোনে ‘হ্যালো’ বলতে বলতেই ব্যস্ত হয়ে উঠলেন তিনি। আর সেই ব্যস্ততার ফাঁকেই একসময় হাত জোড় করে বললেন, ‘বাংলাদেশের সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাবেন।’
বাংলাদেশ সময়: ১৭:৪১:২০ ৩৭৭ বার পঠিত