বঙ্গ নিউজ ডট কমঃ কোন অনুষ্টানে হঠাৎ পরিচয়ের পর একজনের সাথে আলাপ হলো। দীর্ঘক্ষন কথা হলো। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই তার নামটা ভুলে গেলেন। কোনো ভাবেই তার নামটা মনে করতে পারছেন না।
অফিসে আজ কী করবেন সে জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন। কিন্তু অফিসে আসার পর কী একটা কাজ করার কথা ছিলো আর মনে করতে পারছেন না। দৈনন্দিন জীবনে এ রকম অভিজ্ঞতা কম-বেশি আমাদের সবারই হয়। নাম, ফোন নাম্বার, কম্পিউটারের পাসওয়ার্ড, এমন অনেক মনে রাখার মতো জরুরি বিষয় একেবারেই কম নয়।
কিভাবে এসব বিষয় মনে রাখা যায় কিংবা ভুলে না যায় তার কী কোনো সহজ উপায় আছে। হ্যা অবশ্যই আছে। একটু অবাক লাগছে। সত্যিই কী এ রকম কি কোনো উপায় আছে ?
আসলে শরীরের যেকোনো মাসলের মতো ব্রেনকেও আপনি যত ব্যবহার করবেন ততই তা সক্রিয় হয়ে উঠবে। মনে রাখার ক্ষমতা জন্মসূত্রে পাওয়া হলেও স্মৃতিশক্তির একটা অংশ কিন্তু পরিবেশ, শেখার মাধ্যম এবং ব্যক্তির ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে। মানছি, ব্রেন কোনো কম্পিউটার নয় যে চিপ ঢুকিয়ে মেমরি বাড়ানো যাবে। তবে স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর অনেক ব্যাপার আছে পুরোপুরিভাবে আপনার হাতে। ঠিক যেমন ফিজিক্যাল ফিটনেস ভালো করার জন্য আপনারা ব্যায়াম করেন, তেমনই ‘ব্রেন পাওয়ার’ বাড়ানোর জন্য কিছু স্ট্র্যাটেজি মেনে চলতে হবে। যেমন ধরুন নেমনিক্স ব্যবহার করা। রোজকার জীবনে এই তুরুপের তাসটা যদি নিজের আয়ত্তে নিয়ে আসতে পারেন, দেখবেন মনে রাখার জন্য বেশি চেষ্টা করতেই হচ্ছে না। নাম মনে রাখতে পারেন না, তাতে কী? কোনো সুন্দর ছবির সাথে অ্যাসোসিয়েট করে দেখুন, চেষ্টা করলেও ভুলতে পারবেন না। ফোন নম্বর মনে রাখতে চাঙ্কিং পদ্ধতি ট্রাই করুন। নম্বর তিন সেটে ভাগ করে নিন। ৫৫৫৬৭৩৯১০-এর বদলে মনে রাখুন ৫৫৫-৬৭৩-৯১০। এইভাবে লম্বা ইনফরমেশনও ছোট সেটে অনায়াসেই ভাগ করে নেয়া যায়।
বাজার করার ফর্দ বানাতে বসে আমরা দরকারি জিনিসের নাম লিখতে ভুলে যাই। এই সমস্যার সমাধানেও কাজে আসতে পারে নেমনিক্স। বাড়ির কোনো ঘর বা বিশেষ কোনো স্থান দরকারি জিনিসের প্রেক্ষাপট হিসেবে জুড়ে দিতে পারেন। এরপর আর কী! ঘরের কথা ভাবলেই জিনিসের নামও আমরা আমাদের মস্তিষ্কের যা ক্ষমতা তার খুব কম পরিমাণই ব্যবহার করি। যে কাজটা যেভাবে করে আসছি, সেটা অন্যভাবে করার কোনো চেষ্টাই করি না। বয়স বাড়ার সাথে সাথে যেভাবে ইনফরমেশন প্রসেস করার গতি বেড়ে যায়, সেটাকে ঠিকমতো কাজে লাগাই না। গতানুগতিক রাস্তায় চলতেই পছন্দ করি। কিছু না ভেবে একই পদ্ধতি বারবার প্রয়োগ করে কোনো কাজ করলে কিন্তু মস্তিষ্ক ঝিমিয়ে পড়ে। ব্রেনকে চাঙা রাখতে হলে ‘আউট অব দ্য বক্স’ রাস্তা বেছে নিতে হবে। এমন কিছু অ্যাক্টিভিটি বাছুন, যা আপনার কাছে নতুন, চ্যালেঞ্জিং। নতুন ভাষা শিখতে পারেন, ইনস্ট্রুমেন্ট বাজাতে পারেন। পাজল বা সুডোকু সলভ করতে পারেন। এই পদক্ষেপগুলো মানলে ব্রেন বেশি সজাগ থাকবে।
মেমরি ভালো রাখার অন্য উপায়
‘ব্রেন বুস্টিং’
খাবার খান ব্রেনের সঠিকভাবে কাজ করার জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ পুষ্টি ও এনার্জির প্রয়োজন। স্বাভাবিক নিয়মে আমাদের শরীরের কিছু অক্সিডেন্ট তৈরি হয় যা মস্তিষ্কের কার্যকরী ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
কিন্তু এমন কিছু খাবার আছে যা শরীরে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট তৈরি করে মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যকরী ক্ষমতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। ব্রেন হেলথের জন্য ওমেগা৩ ফ্যাটি অ্যাসিড জরুরি উপাদান। মাছে (বিশেষ করে স্যামন, টুনা, ট্রাউট) ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। ফিস অয়েল সাপ্লিমেন্ট, আখরোট, ফ্যাক্সসিড, সয়াবিনও ট্রাই করতে পারেন। স্মৃতিশক্তি বাড়াতে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার খান। পালংশাক, ব্রকোলি, লেটুসের মতো সবজি, ফল (তরমুজ, আম), গ্রিন টি খাওয়ার চেষ্টা করুন। মস্তিষ্ক সক্রিয় রাখার জন্য কার্বোহাইড্রেট খাওয়াও জরুরি। সিম্পল কার্বোহাইড্রেট (চিনি, পাউরুটি ইত্যাদি) ব্রেনের জন্য ফুয়েলের মতো কাজ করলেও তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। ব্রেন এনার্জি বজায় রাখার ভালো অপশন কম্পলেক্স কার্বোহাইড্রেট। হোল হুইট ব্রেড, ব্রাউন রাইস, ওটমিল, হাই ফাইবার সিরিয়াল নিজের ডায়েটে রাখুন। মস্তিষ্ক সক্রিয় রাখতে স্যাচুরেটেড ফ্যাট কম খান।
এক্সারসাইজ করুন
ফিজিক্যাল এক্সারসাইজ ব্রেনে অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় এবং যেসব অসুখে (যেমন ডায়াবেটিস, হার্টের অসুখ) ‘মেমরি লস হতে পারে, সেগুলো প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। উপকারী ব্রেন কেমিক্যালের পরিমাণও বাড়িয়ে দেয়। মেডিটেশন ও আরো কিছু যোগাসন আছে যা ব্রেন ও নার্ভাস সিস্টেমকে স্টিমিউজেট করে স্মৃতিশক্তি ও মনোসংযোগ বাড়াতে সাহায্য করে।
ভালো করে ঘুমান
ভালো করে না ঘুমালে ব্রেন ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। মনে রাখার সাথেও ঘুমের সরাসরি যোগাযোগ আছে। গবেষণা করে জানা গেছে, ‘মেমরি কনসলিডেশন’-এর জন্য ভালো ঘুম জরুরি। এমনকি দুপুরে আধঘণ্টা থেকে ৪৫ মিনিট ঘুমও বেশ উপকারী। দুপুরে নিটোল ঘুম ডিকেরাটিভ মেমরিকে (বইপত্র পড়ে যা জ্ঞান অর্জন করা হয়, সেগুলো মনে রাখা) উসকে দেয়। ফলে যা শিখেছেন তা মনে রাখা সহজ হয়ে যায়। তবে জোর করে শেখা জিনিস কিন্তু মনে রাখতে সাহায্য করে না এই ঘুম।
বন্ধুবান্ধবদের সাথে সময় কাটান
রিসার্চ করে দেখা গেছে, জীবনকে যদি উপভোগ করতে পারেন, তার প্রভাব ‘কগনিটিভ অ্যাবিলিটির’ ওপরও পড়ে। আশপাশের লোকের সাথে ইন্টার্যাকশন করলে শুধু মন-মেজাজ ভালো থাকে না, ‘ইট ইজ অলসো আ ফর্ম অব ব্রেন এক্সারসাইজ’।
সাপোর্ট সিস্টেম থাকাটা শুধু ইমোশনাল হেলথের জন্যই নয়, ব্রেন হেলথের জন্যও জরুরি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭:০১:৪৫ ৩৪০ বার পঠিত