বঙ্গনিউজ ডটকমঃ অবশেষে বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির হোতা ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চুর নাম সরাসরি উচ্চারণ করলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
অর্থমন্ত্রী সচিবালয়ে গতকাল মঙ্গলবার বেসিক ব্যাংক পুনরুদ্ধারে করণীয় নির্ধারণ নিয়ে ব্যাংকটির পর্ষদের সঙ্গে এক বৈঠক করে সাংবাদিকদের বলেন, ‘ব্যাংকটিতে হরিলুট হয়েছে। আর এর পেছনে ছিলেন ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চু।’
বৈঠকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব এম আসলাম আলম, বেসিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের বর্তমান চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন এ মজিদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক খন্দকার মুহাম্মদ ইকবাল, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, আবদুল হাইয়ের ব্যাংক-বহির্ভূত কর্মকাণ্ডের কারণেই বেসিক ব্যাংক সমস্যায় জর্জরিত হয়েছে। তাঁর ব্যাংক-বহির্ভূত কর্মকাণ্ডের অনেক প্রমাণ পাওয়া গেছে। এখন তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কোনো সমস্যা হবে না।
বৈঠক সূত্র জানায়, অর্থমন্ত্রীকে জানানো হয়, মাত্র দুই বছরে বেসিক ব্যাংকের তিনটি শাখা নিয়মকানুন না মেনে ৪ হাজার ২৪৮ কোটি টাকা ঋণ দেয়। এর মধ্যে গুলশান শাখা ১ হাজার ৮০০ কোটি ২৩ লাখ, শান্তিনগর শাখা ১ হাজার ৫২৪ কোটি ৪৩ লাখ এবং দিলকুশা শাখা দেয় ৯২৩ কোটি ২১ লাখ টাকা। অতি দ্রুততার সঙ্গে ঋণ ছাড় করা হয়, যার বিপরীতে উল্লেখযোগ্য জামানতও রাখা হয়নি। বেনামে ঋণ বিতরণ ছাড়াও আবদুল হাই বাচ্চুর ছত্রচ্ছায়ায় ব্যাংকের জন্য বাড়িভাড়া, আমানত সংগ্রহ, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ-পদোন্নতি হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকও জানিয়েছিল, ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান প্রভাবশালী বলে তাঁর বিরুদ্ধে আজ পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, অর্থমন্ত্রীকে জানানো হয়, ২০০৯ সালে বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারী ছিল ৭৭৬ জন। ২০১৪ সালে তা এসে দাঁড়ায় ২ হাজার ২৩৭ জনে। ৭০০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন, যাঁদের মূলত কোনো কাজ নেই। ২০০৯ সালে এ ব্যাংকের শাখা ছিল ৩২টি, ২০১৪ সালে শাখা হয় ৬৮টি।
অর্থমন্ত্রীকে আরও জানানো হয়, নতুন পর্ষদ ২৬৩ কোটি টাকা আদায় করেছে। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ আদায়ের পরিমাণ ১১০ কোটি টাকা। আর ৩৯ জনের বিরুদ্ধে নানা ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, বেসিক ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর বেশ কিছু দিন খুব ভালো করছিল। কিন্তু ২০১২ সালে ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ১ হাজার কোটি টাকা, যা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে।
আবদুল হাই বাচ্চু অত্যন্ত প্রভাবশালী, তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারবেন কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘শুধু আবদুল হাই কেন, যত ক্ষমতাশালী ব্যক্তিই হোন, তাঁকে আইনের আওতায় আনা হবে। এরই মধ্যে নতুন পরিচালনা পর্ষদ কোথায় কীভাবে দুর্নীতি হয়েছে, তার একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। দুর্নীতি দমন কমিশনকে ব্যবস্থা নিতে বলা হবে।’
ব্যাংকটিকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে ফিরিয়ে আনতে যা যা করা প্রয়োজন, সবই করা হবে বলে জানান অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, মূলধন ঘাটতিই বড় সমস্যা। অন্যান্য ব্যাংকের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হলে তাদের মূলধন ঘাটতি পূরণ করতেই হবে। এ বিষয়ে তারা ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা চেয়েছে। এতটা হয়তো তাদের দেওয়া যাবে না।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বেসিক ব্যাংকের তৎকালীন পর্ষদ কী ধরনের অনিয়ম করেছে, তার একটি উদাহরণ দিচ্ছি। ব্যাংকটিতে জনবল নিয়োগে কোনো নিয়মকানুন মানা হয়নি। প্রয়োজনের তুলনায় ব্যাংকটিতে ৭০০ জনবল বেশি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।’
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব আসলাম আলম বলেন, নতুন পর্ষদ ভালো করছে। অনেক ঋণগ্রহীতার অস্তিত্বই ব্যাংকটির জানা ছিল না। তাদের খুঁজে বের করা হয়েছে।
রাষ্ট্রমালিকানাধীন বেসিক ব্যাংক দেশের ব্যাংক খাতে সব দিক থেকেই একটি ভালো ব্যাংক হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ব্যাংকটির অবস্থা খারাপ হতে থাকে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪:০১:৩৭ ৪১৮ বার পঠিত