বঙ্গনিউজ ডটকমঃ ইদানীং তাঁকে দেখলেই মনে হয়, খুব চিন্তায় আছেন। মুখে সেই উঠোনে এসে পড়া এক চিলতে মিঠে রোদের মতো হাসিটার দেখা মেলে না। চোট, ফর্ম, টেস্টে অধিনায়কত্ব নিয়ে নানা প্রশ্ন। প্রশ্ন উইকেটের পেছনে থাকা নিয়েও। খুব একটা স্বস্তিতে নেই মুশফিকুর রহিম!
অথচ মাস চারেক আগেও দৃশ্যটা ছিল একেবারেই উল্টো। ব্যাট হেসে উঠছে নিয়মিত। পত্রপত্রিকায় তাঁর নামই দেওয়া হলো ‘রান মেশিন’। সেই মুশফিকের হঠাৎ কী যে হলো!
পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে দারুণ এক সেঞ্চুরি। ম্যাচ সেরাও হলেন। পরের ম্যাচে খেললেন ৬৫ রানের কার্যকরী ইনিংস। সিরিজের শেষ ম্যাচে অপরাজিত ৪৯। এর পরই ছন্দপতন।
বিপত্তির শুরু পাকিস্তানের বিপক্ষে খুলনা টেস্টে। দ্বিতীয় দিনে আঙুলে পেলেন চোট। এরপর ব্যাটও কথা বলা বন্ধ করে দিল। কখনো কখনো সামান্য একটা চোট, সামান্য একটা অস্বস্তিও ব্যাটসম্যানদের জন্য বড় মানসিক বাধা হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু মুশফিক কখনোই এই চোটকে অজুহাত হিসেবে দাঁড় করাননি। বরং বাড়তি দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে উইকেটের পেছনেও দাঁড়াচ্ছেন। যদিও দেশের সেরা ব্যাটসম্যানটিকে যথাসম্ভব স্বস্তি দিতে অনেকেই মনে করেন, তাঁর কাঁধ থেকে কিপিংয়ের দায়িত্বটা সরানো উচিত। কিন্তু মুশফিক নিজেই নাকি তাতে রাজি নন।
অন্য সময় হলে এসব নিয়ে কোনো কথাই হতো না। কিন্তু প্রতিকূল সময় বড় নিষ্ঠুর। সেই সময়টাই চোখে আঙুল তুলে তাকিয়ে বলে দিচ্ছে, টেস্টে মুশফিকের সর্বশেষ পাঁচ ইনিংস-৩২, ০, ১২, ০ ও ২। ওয়ানডেতে যে মুশফিক ধারাবাহিকতার প্রতিচ্ছবি হয়ে গিয়েছিলেন, সেই তিনি এ সংস্করণেও হয়ে গেলেন নিষ্প্রভ। ভারত সিরিজে তিন ম্যাচে-১৪, ৩১ ও ২৪ রান। পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলা তিন টি-টোয়েন্টিতে মুশফিকের রান ১৯, ১৭ ও ১৯।
ক্রিকেটের তিন সংস্করণ হিসাব করলে সর্বশেষ ১২ ইনিংসে একটি ফিফটিও নেই মুশফিকের। ফর্মের বেহাল দশা বেশি করে চোখে পড়ছে সর্বশেষ ১১ ইনিংসে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের ভরাডুবি, যে সফর তাঁর কাছ থেকে ওয়ানডে অধিনায়কত্ব কেড়ে নিয়েছে, সেই সফরের তৃতীয় ওয়ানডে থেকে পাকিস্তান সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডে পর্যন্ত সব ধরনের ক্রিকেটে মুশফিকের গড় ৫১.৮৬। সেটিও ২৫ ইনিংসের ব্যাপ্তিতে। সর্বশেষ ১১ ইনিংসে সেই মুশফিকের গড় নেমে এসেছে ১৫.৪৫-এ।
যে স্লগ সুইপ তাঁর সবচেয়ে প্রিয় শট, সেই শটেই প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ধরা পড়লেন। আত্মবিশ্বাসের ঘাটতির প্রতীকী ছবিও ভাবতে পারেন।
ব্যাটসম্যানটা মুশফিক বলেই ফর্মহীনতা চোখে পড়ছে বেশি করে। তা ছাড়া বাংলাদেশ দলে এখন একাদশের জায়গা নিয়ে সুস্থ প্রতিযোগিতা তৈরি হয়েছে। বলতে পারেন, একাদশে জায়গা নিয়ে তাঁর জন্য এই মুহূর্তে ‘হুমকি’ তাঁরই ভায়রা ভাই মাহমুদউল্লাহও।
শুধু ব্যাট হাতেই নয়, উইকেটের পেছনে তাঁর পারফরম্যান্স নিয়েও কখনো কখনো উঠেছে প্রশ্ন। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দুটো টি-টোয়েন্টিতেও ঠিক ছন্দে আছেন বলে মনে হয়নি। না উইকেটের পেছনে, না সামনে। কিন্তু তাঁর পরিশ্রম নিয়ে, আন্তরিকতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। এখনো দলের সবচেয়ে বেশি পরিশ্রম করা ক্রিকেটারটির নাম মুশফিক। গত সোমবার ঐচ্ছিক অনুশীলনের দিনও নেটে ঘাম ঝরিয়েছেন দীর্ঘক্ষণ।
আর তাই পরীক্ষিত সেনানীকে আগলেই রাখছেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক বলছেন, ‘মুশফিককে নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। একজন খেলোয়াড়ের পক্ষে যতটুকু করা সম্ভব, সর্বোচ্চটাই সে করছে। অবশ্যই আমরা চাই, সেরা ফর্ম নিয়েই সে খেলুক। তবে এটা সব সময়ই হবে না। আর মাত্র দুটো টি-টোয়েন্টি ম্যাচে মানিয়ে নেওয়ার সময়ও খুব একটা পাওয়া যায় না। এটা মারাত্মক কোনো সমস্যা নয়। অবশ্যই মুশফিক ছন্দে ফিরবে। তার ছন্দে ফেরার দিনে আমরা ম্যাচও জিতব ইনশা আল্লাহ।’
কেবল মাশরাফি নন, একই প্রত্যাশা গোটা দেশেরই। জ্বলে উঠুক ‘মি. ডিপেন্ডবল’!
বাংলাদেশ সময়: ১৩:৪৮:১৩ ৩১৪ বার পঠিত