বঙ্গনিউজ ডটকমঃ ব্রাজিল থেকে আমাদানি করা গমের ব্যাপারে খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেছেন, আসলে দেখতে গমটা খারাপ। ব্রাজিলের গমটা উপর দিয়ে দেখতে কেউ পছন্দ করবে না। কিন্তু গুণগত মান ঠিক আছে। গুণগত মান ঠিক থাকলে এতো প্রশ্ন কেন?
তিনি বলেন, এই গমটা নিয়ে একটি রাজনৈতিক মহল উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যা কথা বলছে। মিথ্যা ভিত্তিহীন তথ্য পরিবেশন করছে। পত্রপত্রিকার কথাগুলোর কোনো ভিত্তি নেই।
মন্ত্রী বলেন, এক শ্রেণীর পত্রিকা ও বিশেষ রাজনৈতিক দলগুলো উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এ সমস্ত অসত্য খবর পরিবেশন করছে। অযথা মনের সঙ্গে মাধুরি মিশিয়ে সরকারকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য কথাবার্তা বলা হচ্ছে। বেগম খালেদা জিয়া পর্যন্ত এটাকে ইস্যু তৈরি করছেন।
সংসদে মঙ্গলবার প্রশ্নোত্তর পর্বে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমানের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে গম আমদানি নিয়ে খাদ্যমন্ত্রী বিস্তারিত জবাব দেন।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠকের শুরুতে প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হয়।
পীর ফজলুর রহমান প্রশ্ন করতে গিয়ে বলেন, সম্প্রতি ব্রাজিল থেকে আমদানিকৃত গম নিয়ে আমাদের সংবাদ মাধ্যমে প্রতিনিয়ত সংবাদ পরিবেশিত হচ্ছে। খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে মহামান্য উচ্চ আদালতেও জবাব দেয়া হয়েছে যে খাবার উপযোগি। কিন্তু পত্রিকায় সংবাদমাধ্যমে আমরা দেখছি যে খাদ্য মন্ত্রনালয়ের বিবৃতির পরও পত্রপত্রিকা বলছে যে, তাদের সংবাদটি সঠিক এবং বিভিন্নস্থানে আমাদের সংসদ সদস্যরা সেই গম খাদ্য গুদামে ঢুকতে দিচ্ছেন না।
মাননীয় মন্ত্রীর কাছে আমার বিনীত জিজ্ঞাসা এই ধরনের পোকা খাওয়া গম আমদানির সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে তিনি কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন কিনা?
জবাবে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেন, আমাদের যে প্যারামিটার দেয়া হয়েছিল আন্তর্জাতিক টেন্ডারের মাধ্যমে, সেভাবেই গম আমদানি করা হয়েছে। পরবর্তীতে যখন এটা নিয়ে কথা হলো যে এই গম খারাপ, পচা, নিন্মমানের ইত্যাদি, তখন কিন্তু আমরা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের সিলগালাকৃত অবস্থায় নমুনা আবার সংগ্রহ করি। সংগ্রহ করে আমরা আমাদের ল্যাবরেটরিতে খাদ্য অধিদপ্তরের ল্যাবরেটরিতে, আমাদের সাইন্স ল্যাবরেটরিতে এবং আরো বিভিন্ন জায়গায় আমরা পরীক্ষা করি। পরীক্ষা করার পরও দেখা যায় প্রথম যে গম এসেছে পরবর্তীতে দীর্ঘ চার মাস পরে পরীক্ষর পরও এই গমের গুণগত মান নষ্ট হয়নি, মান ঠিক আছে।
তিনি বলেন, পত্রপত্রিকায় নিউজ এসেছে, পচা গম, গন্ধযুক্ত গম ইত্যাদি। এই নিউজগুলোর কোনো ভিত্তি আছে বলে আমি মনে করি না। চারমাস যাবৎ কিন্তু ২ লাখ মেট্রিক টন গম এসেছিল। তার মধ্যে ১ লাখ ৭৪,৯২৬ টন ৩০ জুন পর্যন্ত ইতোমধ্যেই বিলি হয়ে গেছে। আমাদের কাছে আর মাত্র ২৫ হাজার মেট্রিক টন গম আছে। বিলি-বণ্টনের পর এই চার মাসের মধ্যে কোনো অস্বস্তিকর খবর পাওয়া যায়নি।
কামরুল বলেন, আজকে ১০/১৫ দিন যাবৎ পত্রপত্রিকায় লেখালেখি হচ্ছে। গত পরশু দিন পত্রিকায় যে সংবাদটি এসেছে, কুষ্টিয়ার কুমারখালিতে সংসদ সদস্যের যে রিপোর্টটি এসেছে। পরবর্তীতে সেই সংসদ সদস্য টেলিভিশন চ্যানেলে দেখলাম বলেছেন- তিনি এই গম সম্পর্কে যে কথা বলেছিলেন, তা সঠিক নয়। উপজেলা চেয়ারম্যানের সঙ্গে বিরোধের জের হিসেবে গমগুলোকে নিয়ে তিনি একটা নাটকীয় অবস্থার সৃষ্টি করেছেন। পত্রপত্রিকায়ও যে নিউজ এসেছে তার ভিতরের অংশে এসেছে স্থানীয় দ্বন্দ্বের কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, মহামান্য হাইকোর্টে একজন মামলা করেছেন সেই মামলা পরিচালনা করেছেন বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। সেই মামলায় হাইকোটের নির্দেশনা অনুযায়ী বাংলাদেশ এগ্রিকালচার রিসার্চ ইনস্টিটিউটের কাগজ পর্যন্ত জমা দেয়া হয়েছে, পরীক্ষার রিপোর্ট জমা দেয়া হয়েছে। আমাদের অধিদপ্তরের রিপোর্ট সেখানে জমা দেয়া হয়েছে। পুষ্টি বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রিপোর্ট সেখানে জমা দেয়া হয়েছে। আমদানি যখন আসে তখন প্রি-শিপমেন্ট সার্টিফিকেট একটা আসে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান থেকে। সেখানেও লেখা আছে এটা মানুষের ব্যবহার উপযোগী। এতোকিছু হওয়ার পরেই গমটা এখানে আসে। আমি জানি না কি ভিত্তিতে কাগজে যে সব ছবি আসছে। এসব ছবির কোনো ভিত্তি নেই। পোকার কথা যে বলা হচ্ছে পোকার এই ছবির সঙ্গে আমাদের গুদামের গমের কোনো সাদৃশ্য নেই। যে ছবির কথা বলা হচ্ছে, সেই ছবি আমাদের গমের ছবি না।
তিনি বলেন, আরেকটা জিনিস আমি বলতে চাই, অনেকে বলে যে পোকা খাওয়া গম। পোকা পরিচর্যা না করলে যে কোনো গুদামে আপনার বাড়িতেও চাল রাখেন, গম রাখেন যদি পরিচর্যা না করেন ঔষুধ যদি না দেন, তাহলে পোকা ধরবেই। কাজেই এসব ভিত্তিহীন পত্রিকায় যেসব কথাবার্তা বলা হচ্ছে একটি পত্রিকায় আমার বিকৃত ছবি দিয়ে নিউজ ছাপা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, অবশ্য এই গম আমদানি করে খাদ্য অধিদপ্তর। আন্তর্জাতিক টেন্ডারে বলাই থাকে, একমাত্র ইসরাইল ছাড়া যে কোনো দেশ থেকে মাল সাপ্লাই করা যায়। সেভাবে খাদ্য অধিদপ্তর টেন্ডারের ভিত্তিতে পারসেস কমিটি সেটা পাস করে এবং পরবর্তীতে বিল পর্যন্ত পরিশোধ করে খাদ্য অধিদপ্তর। খাদ্য মন্ত্রণালয়ে কোনো কিছুই আসে না। সমম্ত কিছু খাদ্য অধিদপ্তর করে। অথচ এই গমটা নিয়ে একটি রাজনৈতিক মহল উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যা কথা বলছে। মিথ্যা ভিত্তিহীন তথ্য পরিবেশন করছে। আমি তাদের পরিষ্কার বলেছিলাম যে, আমরা বিভিন্ন জায়গায় পরীক্ষা করেছি। পরীক্ষার রিপোর্টগুলো আদালতে সাবমিট করেছি। বাদীপক্ষের আইনজীবী বললেন কি, তারা বিশেষজ্ঞ দ্বারা পরীক্ষা করাবেন। ৮ তারিখ পর্যন্ত সময় দিয়েছে বিশেষজ্ঞ দ্বারা পরীক্ষা করার জন্য। আমি এটাও বলেছি- যে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এই গমের নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করতে চান, আমি তাদের সাহায্য করব।
কামরুল বলেন, যে কোনো গুদামে আপনারা যান, স্ব উদ্যোগে আপনারা নমুনা সংগ্রহ করুন, পরীক্ষা করুন। অযথা মনের মাধুরী মিশিয়ে সরকারকে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য আমাকে নিয়ে এসব কথাবার্তা বলা হচ্ছে। বেগম খালেদা জিয়া পর্যন্ত এটাকে ইস্যু তৈরি করছেন। বেগম খালেদা জিয়া তার দেহে মানুষের পচা গন্ধ। মানুষ পোড়ানোর দুর্গন্ধ। অথচ তিনি দুগন্ধ শরীর নিয়ে আজকে এই গম নিয়ে বিভিন্ন কথাবার্তা বলে রাজনৈতিক একটা ইস্যু তৈরি করার চেষ্টা করছেন।
পত্রিকার উদ্দেশ্যে মন্ত্রী বলেন, আপনাদের কছে কি নমুনা আছে যে আপনারা এসব ভিত্তিহীন কথাবার্তা বলার। এটাতো টেস্টের ভিত্তিতে ল্যাবরেটরির পরীক্ষার ভিত্তিতে প্রমাণ হবে এটা খাবার উপযোগী কিনা।
তিনি বলেন, আজকে দেখবেন পত্রিকাগুলো বলছে এটা নিন্মমানের। কিন্তু এটাতো ল্যাবরেটরি টেস্টে প্রমাণিত আমরা যে বিধি নির্দেশ অনুযায়ী এনেছি এটা খাবার উপযোগী। আসলে দেখতে গমটা খারাপ। ব্রাজিলের গমটা উপর দিয়ে দেখতে কেউ পছন্দ করবে না। কিন্তু গুণগত মানতো ঠিক আছে। গুণগত মান ঠিক থাকলে আপনি কেন প্রশ্ন করবেন? তারা বলছে পুলিশ, বিডিআর, আর্মি সবাই নাকি এই গমের বিরুদ্ধে কথা বলছে। আমার কাছে বিডিআর পুলিশ আর্মি থেকে এই পর্যন্ত এই ধরনের কোনো কথাবার্তা আসেনি। পুলিশ বাহিনী থেকে একটি চিঠি কেবলমাত্র এসেছিল তাদের ওয়ারেন্টি পরিবর্তন করার জন্য। অর্থাৎ আমাদের বিধান হচ্ছে আমদের গুদামে আগে যেটা আসবে সেটা আগে বের হবে। যেটা পরে আসবে সেটা পরে বের হবে।
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা স্পষ্ট জবাব দিয়ে দিয়েছি এটার মান ঠিকই আছে। এটার ওয়ারেন্টি পরিবর্তন করব না। এছাড়া পুলিশের কাছ থেকে, বিডিআরের কাছ থেকে পচা গম খেয়ে মানুষ মরে যাচ্ছে, অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে, আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে, এ রকম কথাবার্তা, চিঠিপত্র আমরা পাইনি। স্বারাষ্ট্র মন্ত্রীকেও জিজ্ঞেস করেছি তিনি বলেছেন এ রকম চিঠি আসেনি। কাজেই এ সমস্ত মিথ্যা ভিত্তিহীন আদালতের সাবজুডিস ম্যাটার নিয়ে আর বিশেষ কিছু বলতে চাই না।
তিনি বলেন, আমি পত্রিকাগুলোকে আবারো বিনয়রে সঙ্গে অনুরোধ করব- ভিত্তিহীন কথাবার্তা বলা থেকে বিরত থাকুন। এই কথাগুলোর কোনো ভিত্তি নেই। এই কথাগুলোকে আমলে নেয়ার কোনো প্রয়োজন পড়ে না। এগুলো পত্রিকাগুলোর একশ্রেণীর পত্রিকা বিশেষ রাজনৈতিকদলগুলো উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এ সমস্ত অসত্য খবর পরিবেশন করছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০:১৬:২৭ ৫০৭ বার পঠিত