বিকাশ এর অভিনব জালিয়াতি ! ! ! বাচতে হলে জানতে হবে

Home Page » অর্থ ও বানিজ্য » বিকাশ এর অভিনব জালিয়াতি ! ! ! বাচতে হলে জানতে হবে
মঙ্গলবার, ৭ জুলাই ২০১৫



download1.jpgবঙ্গনিউজ ডটকমঃকয়েকবছর আগে থেকে মোবাইলে এই ধরনের বিভিন্ন জালিয়াতি শুরু হয়েছে। মনে পড়ে মাত্র কয়েকবছর আগের কথা। একদিন গ্রামীনের একটি নাম্বার থেকে ফোন এলো। অত্যন্ত মার্জিত ও ভদ্র ভাষায় বললো –

“সুপ্রভাত স্যার। আপনি গ্রামীণ ফোনের খুবই ভাগ্যবান একজন গ্রাহক। সম্প্রতি মোবাইল ব্যবহারের উপর গ্রামীন ফোন একটি লটারী আয়োজন করেছে এবং আপনি তাতে বিজয়ী গ্রাহকদের মধ্যে একজন। এ বিষয়ে গ্রামীন ফোন অফিস হতে বিস্তারিত আপনাকে জানানো হবে এবং আপনার পুরস্কার টাকাঃ ৫,০০,০০০/- স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার কাছে পৌছে যাবে। এর জন্য কিছু ফরমালিটিজ আছে যা সম্পন্ন করার পরে আপনার পুরস্কার আপনি পাবেন। ফরমালিটিজ সম্পন্নের জন্য আপনি ০১৭…………….. নাম্বারে …..টাকা বিকাশ করুন এখনই। আজকের মধ্যেই আপনার পুরস্কারের টাকা অাপনি পেয়ে যাবেন” 

সরল মানুষজন লোভে ও ধোকায় পড়ে চাহিত টাকা বিকাশ করার পরে যে নাম্বার থেকে কল এসেছিল তা বন্ধ হয়ে যায়। অর্থাৎ টাকা লোপাট হয়ে যায়। একদিকে টাকা পাঠিয়ে ধোকা খেয়ে একজন কাঁদে, অন্যদিকে ধোকাবাজ হয়তো ততখনে আনন্দ ফূর্তিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। যাকে বলে কারো পৌষমাস আর কারো সর্বনাশ। কিন্তু এই প্রক্রিয়াটি বেশ পুরানো হয়ে যাওয়ায় এবং অধিকাংশ মানুষজন তা বুঝতে শিখে গেছে বিধায় ধোকাবাজরা নতুন প্রক্রিয়া অবলম্বন শুরু করছে।

যদিও আমি এই ধোকায় আগে কখনোও পড়িনি, তাই হয়তো নিজেকে নিয়ে একটু গর্বই ছিল। কিন্তু আমার সেই আত্নগর্ব ধোকাবাজদের মনে হয় সহ্য হয়নি। তারা আরোও সুসংগঠিত এবং নিখুত প্ল্যান নিয়ে মনে হয় আমাকে টার্গেট করলো যখন আমি কোন একটি প্রোপার্টি বিক্রির জন্য অন লাইন এ্যাড দিলাম। ব্যস ! ! ! প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, আমি একটি শিপিং কোম্পানীতে চাকুরী করি। তারা কি আমার সবকিছু খোজ খবর নিয়েই নেমেছিল না কি ! ! ! ! ! ! একদিন সকালে অফিস আওয়ারে মোবাইলে একটি ফোন এলো। লোকটি পরিচয় দিয়ে বলল আমি একটি বিদেশী জাহাজের বাংলাদেশী ক্যাপ্টেন। বর্তমানে বন্দরে জাহাজ থেকে মালামাল খালাস করছি। আমি আপনার অনলাইন এ্যাডটি দেখেছি এবং তা কিনতে চাই। আমি তাকে প্রোপার্টি ভালোমতো দেখতে বললাম এবং তারপরে বিস্তারিত কথা বলবো বলে জানালাম। ক্যাপ্টেন সাহেব বিকালে আবার ফোন দিলেন এবং বললেন আমি আপনার এলাকারই স্থানীয় বাসিন্দা এবং আপনার প্রোপার্টি আমার পছন্দ হয়েছে। মূল্য জানতে চাইলো প্রোপার্টির। মূল্য বলার পরে সে এক কথায় রাজী হয়ে গেল। তার কথা বার্তা এতো সপ্রতিভ ও আত্নবিশ্বাসী ছিল যে আমার মতো প্রফেশনাল লোকও বিন্দুমাত্র সন্দেহ করতে পারিনি। বিদেশী জাহাজের ক্যাপ্টেন যে মালদার হয় এবং প্রোপার্টির মূল্য যে তারজন্য কোন ব্যাপারই না এটা আমি জানতাম। যেহেতু টাকার প্রয়োজনে প্রোপার্টি বিক্রি করা আমার জন্য খুবই প্রয়োজন ছিল এবং যা যা চেয়েছিলাম সকল শর্তই ক্যাপ্টেন সাহেব সহজে মেনে নিলেন, তাই আমি তো মনে মনে খুশীতে আত্নহারা। যাক বাবা ! এতাদিনে আল্লাহ্ আমার দিকে যেন একটু মুখ তুলে চাইলেন আর প্রোপার্টিটি বিক্রি করে আমি অসহনীয় ও দম বন্ধ করা মানসিক অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে যাচ্ছি অবশেষে। আচ্ছা ক্যাপ্টেন সাহেব কি আমার মনের ভাষা পড়তে পারছিলেন ! ! ! ! ! ! কি জানি ! তবু আমি তাকে যাচাই করে দেখার জন্য জানতে চাইলাম আপনি কোথা থেকে ক্যাপ্টেন্সী পাশ করেছেন এবং কোথায় কোথায় চাকুরী করেছেন ? উত্তরে সে একেবারে সঠিক জবাবটাই দিল যেন সে জানতোই আমি এগুলো জিগ্গাসা করবো। উপরন্তু সে আমাদের কোম্পানীর কোন কোন জাহাজে চাকুরী করেছে তাও বললো। আমাদের কোম্পানীর ভেতরকার বিভিন্ন বিষয় আমাকে বলে দিল যা আমার বিশ্বাস অনেক বাড়িয়ে দিল। একটা পর্যায়ে আমি আমার পরিচয় তাকে বিস্তারিত জানালে সে আমাকে আশ্চর্য করে দিয়ে বললো যে সে আমাকে চিনতে পেরেছে এবং সিনিয়র হিসেবে সে সাথে সাথেই আমাকে প্রফেশনালদের মতো তুমি তুমি করে বলতে শুরু করায় আমার সন্দেহ সম্পূর্ণ দূর হলো। এরপর সে আমাকে বললো সে জাহাজ নিয়ে ২ দিন পরে বন্দর হতে বিদেশ চলে যাবে, যেহেতু তার হাতে সময় নাই তাই আগামীকালই সে প্রোপার্টি রেজিস্ট্রি করে নিতে চায়। প্রোপার্টিটি সে তার বোনের জন্য কিনছে এবং বোনটি এখন ঢাকায় আছে। আমিও যেহেতু অন্য জেলায় আছি, তাই সে প্রস্তাব দেয় যে আমি যাতে তারই খরচে বিমানে ঢাকা চলে আসি এবং ঢাকা এয়ারপোর্টে তার বোন আমার জন্য অপেক্ষা করবে। ঢাকা হতে কানেকটিং ফ্লাইটে তার বোন কে নিয়ে আমি যেন সোজা গন্তব্যস্থলে পৌছে যাই। পরেরদিন রেজিস্ট্রি হবে। আমি তো খুশীতে আত্নহারা। প্লেনের খরচও ক্যাপ্টেন বহন করছে ! ! ! আমি বিকালের ফ্লাইটে কর্মস্থল থেকে যাতে রওনা হতে পারি, তাই সে NOVO AIR এ বুকিং দিল। আমাকে বললো এয়ারপোর্টে পৌছে আমি যাতে NOVO AIR এর অফিস হতে আমার ও তার বোনের টিকিট নিয়ে নিই। আমি বিন্দুমাত্র সন্দেহ না করে তার কথামতো দ্রুত অফিস হতে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে রওনা দিলাম। প্রোপার্টিটি শেষ পর্যন্ত বিক্রি করতে পারছি এই আনন্দে আমি বিভোর হয়েছিলাম। একটু পরেই ক্যাপ্টেন সাহেবের কথা মতো আমার মোবাইলে NOVO AIR থেকে মেসেজ আসলো। ফ্লাইট নাম্বার, সিট নাম্বার, যাত্রার সময় ও তারিখ সবকিছূ হুবহু অরজিনাল মেসেজের মতো। মেসেজে আরো লেখা ছিলো কানেকটিং ফ্লাইটসহ ৩টি টিকিটের মোট মূল্য ২০,০০০/- এবং ডিসকাউন্ট ২,০০০/-। মোট ভাড়া ১৮,০০০/-। Paid ১০,০০০/- এবং Balance ৮,০০০/-। টিকিট সংগ্রহরে পূর্বে ৮,০০০/- টাকা আগামী আধঘন্টার মধ্যে বিকাশে পরিশোধ করতে হবে। আমি NOVO AIR থেকে মেসেজ পেয়েই ক্যাপ্টেন সাহেবকে ফোন দিলাম এবং বকেয়া ৮,০০০/- টাকার বিষয়টি জানালাম। ক্যাপ্টেন সাহেব আমাকে বললেন তুমি কোন চিন্তা করো না, NOVO AIR এ আমার একাউন্টে ১০,০০০/- টাকা ছিল, ওটা দিয়েছি আর বাকি টাকাটা (৮০০০/-) আপাতত তুমি দিয়ে দাও। ঢাকা এয়ারপোর্টে নামলেই আমার বোন তোমাকে ৮০০০/- টাকা দিয়ে দেবে। এতো আন্তরিক ও প্রফেশনালভাবে কথাগুলো বললো আমি সন্দেহ করতে পারিনি, কিংবা বলা যায় প্রোপার্টি বিক্রির আশায় আমি ঘোরের মধ্যে থাকায় কোন কিছু আন্দাজ করতে পারিনি। যা হোক NOVO AIR এর মেসেজ অনুযায়ী আমি যাত্রার মাঝপথে নেমে নির্ধারিত নাম্বারে বিকাশ করে ৮০০০/- টাকা পাঠালাম। ক্যাপ্টেন সাহেবকে ফোন করে তা জানালাম এবং ঢাকায় তার বোনের নাম ও নাম্বার দিতে বললাম। ক্যাপ্টেন মেসেজে তা দিচ্ছে বলে লাইন কেটে দিল। এরপরে এয়ারপোর্টে পৌছে NOVO AIR এর কাউন্টারে আমার মেসেজ দেখালাম এবং টিকিট চাইলাম। তারা চেকিং করে বললো আমাদের সব প্যাসেন্জারতো ইতোমধ্যে প্লেনে উঠে গেছে। তারা বুকিং চেক করে দেখলো আমার নামে সত্যিই টিকিট বুকিং ছিলো, কিন্তু তা আধ ঘন্টার জন্য। বুকিংয়ের আধঘন্টা পরে তা বাতিল করা হয় (অর্থাৎ আমি বিকাশ করামাত্র টাকা পেয়ে ওরা বুকিং বাতিল করেছে)। মোবাইলে আমার মেসেজ দেখে NOVO AIR কর্তৃপক্ষ বললো এটা একবারে অরজিনাল মেসেজের মতো, কিন্তু নাম্বারটা আমাদের না। আমরা বিকাশে পেমেন্ট নিই না। আপনাকে ধোকা দেয়া হয়েছে ! ! ! ! ! আমি একবারে “থ” হয়ে গেলাম। এতোটা বোকা জীবনে কোনদিন হইনি। এতো নিখুত প্ল্যান হয়তোবা আমার বিভোরতার কারনে টেরই পাইনি। আমি যদি এয়ারপোর্টে ফোন করে খোজ নিই, তাই তারা সত্যিই আমার নামে টিকিট বুকিং দিয়ে রেখেছিল যাতে কোন সন্দেহ না হয় আমার ! ! ! ! 

চরম ধোকা খেয়ে সমস্ত অবসাদগ্রস্থতা আমাকে ঘিরে ধরলো। যতটা না টাকার জন্য তারচেয়ে বেশি প্রোপার্টিটি এতো কাছে এসেও বিক্রি করতে না পারার জন্য। ধোকাবজির এতো নিখুত প্ল্যান দেখে বিস্মিত হয়ে গিয়েছি। কিন্তু খারাপ লাগছে এই ভেবে যে, যারা এতো স্টাডি করে এতো নিখুত প্ল্যান বানিয়ে সরল মানুষকে বোকা বানিয়ে মানুষের পকেট কেটে সর্বস্বান্ত করে দেয়, তারা যদি তাদের এই টেকনোলজি দেশের বা সমাজের অথবা নিদেনপক্ষে নিজের পরিবারের উন্নয়নে কোন সৎ পন্থায় ব্যবহার করতো, তাহলে দেশ অনেক এগিয়ে যেতো। আমার ধারনা আসন্ন ঈদে একই পন্থায় ওরা বাসের টিকিটের কথা বলে অনেকের পকেট কাটবে। তাই সাবধান ! ! ! ! 

বিঃদ্রঃ - অামি নিশ্চিত তারা আমার এ্যাড দেখে আগে ২/১ টি নাম্বার থেকে ফোন করে আমার সাথে প্রোপার্টি নিয়ে আলাপ করেছে। আমি কি করি, কোথায় থাকি এবং কোথায় চাকুরী করি সব কথাচ্ছলে জেনে নিয়েছে। ২/৩ দিন বিরতি দিয়ে মাস্টার প্ল্যান তৈরী করে তারপর মাঠে নেমেছে। ২/৩দিনের বিরতিতে আমিও ওদের কথা ভুলে গেছি। তাছাড়া অনেকেই ফোন করে, মনে রাখাটাও দুস্কর। এরপরে আমার অরগানাইজেশন সম্পর্কে খোজ নিয়েছে। মোট কথা পুরো বিষয়টিতে ওদের Time Spend & Brain Storming করতে হয়েছে প্রচুর। অবশেষে তারা আমাকে ধোকা দিয়ে বোকা বানিয়ে ৮০০০/- টাকা আত্নসাত করতে পেরেছে। প্রশ্ন হলো এতো Time Spend & Brain Storming যদি ওরা ভাল কোন Fruitful কাজে ব্যবহার করতো, তবে আমি নিশ্চিত ওরা মুসা ইব্রাহিমের মতো এভারেস্টে উঠতে না পারলেও জীবনে অনেক সফল হতো।

বাংলাদেশ সময়: ৭:১০:০৬   ৭০৭ বার পঠিত  




অর্থ ও বানিজ্য’র আরও খবর


অর্থনীতি নভেম্বরে মূল্যস্ফীতি কমে ৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ
ইসলামী ব্যাংকে পর্যবেক্ষক নিয়োগ, সরানো নিয়ে প্রশ্ন
চেক ডিজঅনার মামলার রায় দুই মাসের জন্য স্থগিত
মোবাইল ফাইনান্সিয়াল সার্ভিসের আড়ালে হুন্ডি, গ্রেপ্তার ৬
১৮ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ১০৫ কোটি ৯৯ লাখ ডলার: বাংলাদেশ ব্যাংক
বৈশ্বিক নানা সংকট সত্ত্বেও বাড়লো মাথাপিছু আয়
বাংলাদেশ গোটা বিশ্বকে চমকে দিয়েছে : মার্টিন রাইজার
আইএমএফ এর সাথে সমঝোতা : সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেবে
আইএমএফ এর ঋণ গ্রহণ করা হবে নিরাপদ রিজার্ভ গড়ে তোলার জন্য: বাণিজ্যমন্ত্রী
টবগী-১ কূপে পাওয়া যাবে দৈনিক ২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস

আর্কাইভ