বঙ্গনিউজ ডটকমঃ যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার ডেথ ভ্যালি। ভীষণ সুন্দর এই ধু ধু প্রান্তর প্রায় এক শ বছর ধরে নিজের বুকে গোপন করে রেখেছে আজব এক রহস্য। বিশাল এ ভ্যালির মধ্যে পড়ে থাকা পাথরগুলো আপনা থেকেই চলা শুরু করে আবার আপনাআপনিই থেমে যায়।
অদ্ভুত এ ঘটনা বেশি দেখা যায় ডেথ ভ্যালির রেস্ট্র্যাক প্লায়া নামের একটি শুকিয়ে যাওয়া লেকের ওপরের অংশে। আরো মজার ব্যাপার হলো, ডেথ ভ্যালির সব পাথরই কিন্তু নড়াচড়া করে না। আবার যেগুলো নড়ে, সেগুলো যে রোজই একটু একটু করে সরে তা-ও না। বেশির ভাগই হয়তো দুই বা তিন বছরে সামান্য একটু সরে যায়। আবার সব সময় যে পাথরগুলো একই দিকে একই সময়ে সরে যায় এমনটাও হয় না। হয়তো দেখা গেল, কোনো একটি পাথর যেদিকে সরেছে, আরেকটা ৯০ ডিগ্রি কোণে অন্য পাশে সরে গেছে। আবার একই পাথর একসময় একদিকে, আবার পরবর্তী সময় অন্য কোনোখানে সরে যেতে থাকে।
পাথরগুলো যে সরে যেতে থাকে, এ ঘটনা বুঝতে পারা যায় শুকনো মাটিতে তাদের চলার চিহ্ন দেখে। ডেথ ভ্যালির মতো বিরান এলাকায়, যেখানে মানুষের আনাগোনা প্রায় নেই বললেই চলে, সেখানে পাথরগুলোর চলার এই চিহ্ন দেখে খানিকটা ঘাবড়েই যেতে হয়। পাথরের চলার ট্র্যাক মেপে দেখা গেছে, কোনো কোনোটা ১০ থেকে ১০০ ফুট পর্যন্ত পথ পাড়ি দিয়েছে। কেবল বাতাসের ধাক্কায় এতগুলো পাথরের এতখানি পথ পাড়ি দেওয়া সম্ভব নয়, কেননা কোনো কোনো পাথর আকারে যথেষ্টই বড়।
তাক লাগানো এ ঘটনাকে ভুতুড়ে ব্যাপার বলে মনে হলেও এর পেছনে কোনো বৈজ্ঞানিক কারণ অবশ্যই থাকবে, এমনটা ধরে নিয়ে এর রহস্য ভেদ করতে উঠেপড়ে লেগেছেন অনেক বিজ্ঞানী ও গবেষক। হার্বার্ট গেঞ্জমার এবং আলরিচ হেলেনব্রান্ড ‘মিস্ট্রিস অব দ্য ওয়ার্ল্ড : আন এক্সপ্লেইন্ড ওয়ান্ডার্স অ্যান্ড মিস্টেরিয়াস ফেনোমেনা’ বইতেও চলতে-ফিরতে থাকা এসব পাথরের রহস্য নিয়ে করেছেন অনেক আলোচনা। কিভাবে এমন সমতল, শুকনো মাটির বুক চিরে পাথরগুলো দিব্যি এগিয়ে যায়, তা-ও বাইরের কোনো বল কিংবা মানুষের হস্তক্ষেপ ছাড়াই; এর রহস্য কিছুতেই বের করতে পারেননি তাঁরা।
অনেক যুক্তিও দাঁড় করানো হয়েছে, যার মাঝে একটি কোনো অজানা চৌম্বক ক্ষেত্রের উপস্থিতি। অবশ্য এ যুক্তি খুব বেশি দিন টেকেনি, কারণ একে তো পাথরগুলোর মধ্যে লোহাজাতীয় কোনো বস্তু খুঁজে পাওয়া যায়নি, তার ওপর চুম্বকের টানে পাথরগুলোর একই দিকে একই সময়ে যাওয়ার কথা, এমন আলাদা সময়ে উল্টাপাল্টা পথ ধরে নয়।
সম্প্রতি পাথরগুলো চলাচলের জন্য দায়ী করা হয়েছে ডেথ ভ্যালির তাপমাত্রা, বাতাস আর পানির উপস্থিতিকে। এখানকার শুকিয়ে যাওয়া লেকগুলো এমনিতে শুকনো থাকলেও রাতে তাপমাত্রা অনেক কমে যাওয়ায় প্রায়ই এখানে বরফ জমা হয়। এ জমাট বাঁধা বরফ গলে মাটির ওপরটা যখন বেশ পিচ্ছিল হয়ে যায়, তখনই হয়তো বা পাথরগুলো পিছলে মাটি বেয়ে সামনের দিকে এগোতে থাকে। অবশ্য ছোট পাথরগুলো এভাবে সহজে এগোতে পারলেও বড় পাথরের বেলায় এ যুক্তিও খুব একটা খাটে না।
তার ওপর ডেথ ভ্যালির মতো জায়গায় টানা কোনো মানুষের পক্ষে পাথরগুলোর গতিবিধি নজরে রাখাও সম্ভব নয়। এক রেস্ট্র্যাক প্লায়াই পুরো তিন মাইল লম্বা আর এক মাইল চওড়া এলাকা। তার ওপর দিনের বেলা কখনো কখনো তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত উঠে যায়। ২০১৩ সালে একদল বিজ্ঞানী সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসেন। তাঁরা বেশ কিছু পাথরের সঙ্গে জিপিএস আর ক্যামেরা লাগিয়ে ভিডিও রেকর্ড করেন, যেখানে ছোট ছোট পাথরের সামনে এগোনোর ঘটনা সুন্দরভাবে ধরা পড়ে। কিন্তু বড় বড় পাথরকে একচুলও নড়তে দেখা যায়নি। আর তাই ডেথ ভ্যালির চলন্ত পাথরের রহস্য এখনো অধরাই রয়ে গেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩:৪০:৩৮ ৩৫৯ বার পঠিত