বঙ্গনিউজ ডটকমঃ ভারত মহাসাগরীয় এলাকায় চীনা সাবমেরিনের ঘোরাফেরা, বিশেষ করে প্রতিবেশী দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কার কলম্বো বন্দরেও সেগুলোর হামেশাই পৌঁছে যাওয়া নিয়ে বহুদিন ধরেই দুশ্চিন্তায় রয়েছে ভারত সরকার৷ এ বার আরো বাড়তে চলেছে সেই কপালের ভাঁজ৷ কারণ, চীনের ডুবোজাহাজ এখন সোজা চলে যাচ্ছে পাকিস্তানের করাচি বন্দর পর্যন্ত! এবং এ কাজেও তারা ভারতীয় মহাসাগর এলাকাকেই ব্যবহার করছে৷ অর্থাৎ, চারদিক থেকে ভারতের প্রায় ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলছে তাদের ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’৷ জানা গেছে, গত ২২ মে চীনের নৌসেনার (পিপলস রিপাবলিক আর্মি-নেভি, সংক্ষেপে ‘পিএলএ-এন’) একটি ইয়ুন-ক্লাস ৩৩৫ সাবমেরিন করাচি বন্দরে ঢোকে৷ এ জন্য সাবমেরিনটিকে ভারতের খুবই কাছে আরব সাগরীয় এলাকায় পেরোতে হয়৷ করাচি বন্দরে চীনা সাবমেরিনটি গোটা এক সন্তাহ দাঁড়িয়েছিল৷ প্রয়োজনীয় রসদ নেয়ার পর ফের সেটি সমুদ্রপথে যাত্রা শুরু করে৷ গত সেপ্টেম্বর থেকে কলম্বোতে একইভাবে আনাগোনা শুরু করেছিল তারা। তবে ভারতের প্রশ্নের জবাবে চীন ২০১৪ সাল থেকেই যুক্তি দিয়ে এসেছে যে, অ্যাডেন উপসাগরে যাওয়ার পথে সাবমেরিন নিয়ে এভাবে কোনো বন্দরে থামা এবং এই প্রক্রিয়ায় জলদস্যু-বিরোধী অভিযান চালানো বিশ্বের মোটামুটি সব দেশের নৌসেনাই করে থাকে৷ সেটা সত্যি হলেও, ভারত সরকারের আশঙ্কা, এই সব কথার আড়ালে চীন আসলে নিজেদের পরমাণু শক্তি-চালিত সাবমেরিন এবং চিরাচরিত সাবমেরিনগুলোকেও যত দূর পাল্লা সম্ভব ছড়িয়ে দেয়ার মহড়া চালিয়ে যাচ্ছে, সামরিক পেশিশক্তি বাড়াচ্ছে৷ ভারতীয় মহাসাগরে চীনা সাবমেরিনের আনাগোনা বেড়ে চলার বিষয়টির উপর কড়া নজর রাখলেও, ভারত সরকারেরও একটা জায়গায় গিয়ে হাত-পা বাঁধা৷ কারণ, আন্তর্জাতিক সমুদ্র এলাকা তো সব দেশের জন্যই খোলা, এবং কোনো বিশেষ দেশের ‘সার্বভৌম’ নিয়ন্ত্রণসীমার বাইরে৷ ভারতীয় নৌসেনার এক কর্মকর্তা বললেন, ‘আমাদের চারটি যুদ্ধজাহাজও দীর্ঘ যাত্রাপথে বর্তমানে দক্ষিণ চীন সাগরে রয়েছে৷ কিন্তু যাই হোক না কেন, ভারতীয় মহাসাগর এলাকায় নিজেদের আধিপত্য বাড়ানোর জন্য চীন ও ভারত দুই পক্ষই যেখানে এক প্রকার ‘ঠাণ্ডা যুদ্ধে’ ব্যস্ত, সেখানে পাকিস্তানে চীনা ডুবোজাহাজের উপস্থিতি পরিস্থিতির উত্তেজনা বেশ কয়েক গুণ বাড়িয়ে তুলল বৈকি৷ করাচিতে যাওয়া চীনা সাবমেরিনটি ডিজেল-ইলেকট্রিক শক্তিচালিত, পরমাণু শক্তিচালিত (নিউক্লিয়ার) নয়৷ তবে এ ধরনের ইয়ুন-ক্লাস ডুবোজাহাজে গতি বৃদ্ধির জন্য বায়ু-নিরপেক্ষ প্রোপালসান (এআইপি) ব্যবস্থা রয়েছে, যা পানির নিচে সাবমেরিনটির সহ্যশক্তি এবং ধ্বংসক্ষমতায়ও কয়েক গুণ বাড়াতে সাহায্য করে৷ নিউক্লিয়ার সাবমেরিন যেখানে টানা কয়েক মাস পানির তলায় থাকতে পারে, সেখানে ডিজেল-ইলেকট্রিক ইয়ুন-ক্লাস সাবমেরিনকে অক্সিজেন নেয়া এবং ব্যাটারি চার্জ দেয়ার জন্য কয়েক দিন পরপর পানির উপরে মাথা তুলতেই হয়৷ তবে নিজেদের ‘বন্ধু’ দেশ পাকিস্তানের সঙ্গে সাবমেরিন-সংক্রান্ত সম্পর্ক সম্প্রতি বেশ শক্তপোক্ত করেছে চীন৷ চিরাচরিত ধরনের মোট আটটি সাবমেরিন তৈরির জন্য ইসলামাবাদের সঙ্গে চুক্তি সই করেছে বেজিং৷ চীনের সেই প্রস্তাবিত সামমেরিনগুলির চারটিই পাকিস্তানে তৈরি হবে৷ অন্য দিকে, ভারতীয় নৌসেনায় সাবমেরিনের সংখ্যা চীনের তুলনায় অনেকটাই কম৷ ভারতের হাতে ১৩টি সাধারণ মানের তথা ডিজেল-ইলেকট্রিক সাবমেরিন রয়েছে৷ এর মধ্যেও যেকোনো সময় প্রয়োজন হলে সেগুলোর মধ্যে মাত্র অর্ধেক সংখ্যক (সাকুল্যে ৭টি) সাবমেরিনকে ব্যবহারযোগ্য অবস্থায় পাওয়া যাবে৷ আর নিউক্লিয়ার শক্তি-চালিত সাবমেরিন রয়েছে মাত্র ১টি, তা-ও রাশিয়ার থেকে লিজে নেয়া৷ আর চীনের হাতে রয়েছে ৫১টি সাধারণ এবং ৫টি পরমাণু শক্তিচালিত সাবমেরিন৷ তা ছাড়াও, খুব শিগগিরই চীন পাঁচটি উন্নত মানের জেআইএন-ক্লাস নিউক্লিয়ার সাবমেরিন নিজেদের নৌসেনায় যুক্ত করতে চলেছে, যেগুলোতে ৭,৪০০ কিলোমিটার পাল্লা-বিশিষ্ট নতুন জেএল-২ মিসাইল রাখার ব্যবস্থাও থাকবে৷
বাংলাদেশ সময়: ২০:১৫:১৫ ৩৮৭ বার পঠিত