বঙ্গনিউজ ডটকমঃ চট্টগ্রামের কোরিয়ান ইপিজেডে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে সরকার ও স্থানীয় জনগণের সহযোগিতা চান দেশের অন্যতম বিদেশি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান বিশ্বখ্যাত ইয়াংওয়ান করপোরেশনের চেয়ারম্যান কিয়াক সুং। কেইপিজেডের জমি সরকারের ফিরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, সরকার আইনত জমি ফেরত নিতে পারে না। আমরা আইন ও চুক্তি দিয়ে সুরক্ষিত। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, জমি ফেরত নেওয়ার সিদ্ধান্তটি অবাস্তব। এ ধরনের আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। কোরিয়ান এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোনে (কেইপিজেড) ২০২০ সালের মধ্যে ১ দশমিক ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের মাধ্যমে ১ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের পরিকল্পনা বাস্তবায়নেও এগোচ্ছেন বলে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে একান্ত সাক্ষাৎকারে জানান এই বিদেশি শিল্পোদ্যোক্তা। কেইপিজেড প্রতিষ্ঠার জন্য চট্টগ্রামের ইয়াংওয়ান করপোরেশনকে দুই হাজার ৪৯২ দশমিক ৩৫ একর জমির দখল বুঝিয়ে দেওয়া হলেও অভিযোগ রয়েছে সেখান থেকে ৫০০ একর জমি ফেরত নিতে চাইছে সরকার। গত মঙ্গলবার রাজধানীর উত্তরায় ইয়াংওয়ান করপোরেশনের ঢাকার কার্যালয়ে এসব বিষয় নিয়ে এক সাক্ষাৎকারে কিয়াক সুং তুলে ধরেন বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের নানা প্রতিকূল পরিবেশ ও বিকাশমান অর্থনীতির অপার সম্ভাবনার কথা। সাক্ষাৎকারে কেইপিজেড গড়ে তোলার কথা উল্লেখ করে কিয়াক সুং বলেন, কোরিয়ান ইপিজেডের জন্য সরকার যে জমি দিয়েছিল পরিবেশ অধিদফতরের নিয়মানুযায়ী সেখানে বাধ্যতামূলকভাবে ৩৩ শতাংশ জমিতে বনায়ন করতে হবে, ১৯ শতাংশ জমি জলাধার ও খালি জায়গার জন্য রাখতে হবে। ফলে কারখানা ও অন্যান্য অবকাঠামোর জন্য জমি থাকবে এক হাজার ২০০ একরের মতো। এই জমির আবার ৩০ শতাংশ (৩৬০ একর) রাস্তা, পরিষেবা ও আনুষঙ্গিক সহযোগী অবকাঠামোর জন্য ব্যয় হবে। কারখানা করা যাবে সর্বসাকূল্যে ৮৪০ একর জমিতে। এখান থেকেও যদি সরকার জমি ফেরত নেয় তবে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আমাদের যে মহাপরিকল্পনা রয়েছে সেটি বাস্তবায়ন করা একেবারেই সম্ভব হবে না। কেইপিজেডে মোট ১২০ কোটি ডলার বা ৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ পরিকল্পনা তুলে ধরে ইয়াংওয়ান করপোরেশনের চেয়ারম্যান আরও বলেন, আমরা সরাসরি বিনিয়োগকারী। আমরা এই ইপিজেডে যে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি তাতে খুব তাড়াতাড়ি ১ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে। এর ফলে স্থানীয় মানুষ উপকৃত হবে, কেননা কেইপিজেডে ৯৯ শতাংশ স্থানীয় মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে।
জমির নিশ্চয়তা না পেয়ে কেইপিজেড থেকে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের ফিরে যাওয়া প্রসঙ্গে কিয়াক সুং বলেন, দক্ষিণ কোরিয়ার বিশ্বখ্যাত কোম্পানি স্যামসাং ২০১১ সালে কেইপিজেডে বিনিয়োগের জন্য আসে। তারা সেখানে ইলেকট্রনিক পণ্য তৈরির কারখানা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের জন্য জমি চায়। পরে সুইজারল্যান্ড, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার আরও কয়েকটি কোম্পানি কেইপিজেডে কারখানা স্থাপনের জন্য জমি চায়। কিন্তু সব কোম্পানিই জমির মালিকানা স্বত্ব কেইপিজেডের নামে আছে কিনা, তা নিশ্চিত হতে চায়। কিয়াক সুং বলেন, জমির মালিকানা না থাকলে কোনো বিদেশি বিনিয়োগ করতে আসেন না।জমি নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, মানুষ বলে আমরা বেশি জমি নিয়ে বসে আছি। আসলে খালি জায়গা, জলাধার, অবকাঠামোর পরে বেশি জায়গা থাকে না। প্রাপ্ত জমির ৭৫ শতাংশ আমরা উন্নয়ন করে ফেলেছি। আর একটা শুষ্ক মৌসুম পেলেই উন্নয়ন কাজ শেষ হয়ে যাবে। তিনি বলেন, সেখানে যাওয়ার জন্য রাস্তা ছিল না। আমাদের অনেক সমস্যা ছিল। আমরা লোকসান দিচ্ছিলাম। তারপরও এখন সেখানে ১২ হাজার মানুষ কাজ করছে। এখন সরকার যদি সহায়তা করে তাহলে ২০১৪-১৫ সালের মধ্যে ২৫ লাখ এরিয়া স্কয়ার ফুট শেষ হবে। আরও ৩০ লাখ ফুটের উন্নয়ন হবে। আগামী ২-৩ বছরে আরও ৪০ ফুট লাখ যোগ হবে। মোট এক কোটি বর্গফুট এলাকা তৈরি হবে।কিয়াক সুং বলেন, সেখানে কোনো সুন্দর জমি ছিল না। সেটা ছিল বিরানভূমি। আমরা সেখানে প্রায় ২০ লাখ গাছ লাগিয়েছি। জলাধার তৈরি করেছি। সেখানে একটি গলফ কোর্সও আছে। এটা আমাদের পরিকল্পনা, এখন আমরা চাই সরকারের সহায়তা। বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের বড় সম্ভাবনা আছে এমন মন্তব্য করে এই কোরিয়ান বিনিয়োগকারী বলেন, বাংলাদেশে আমাদের উৎপাদনশীলতা যখন কম, রপ্তানিতেও সময় বেশি লাগে। এগুলো দূর করতে পারলে বাংলাদেশের সম্ভাবনা অনেক বেশি। ব্যক্তিগত দক্ষতা কম নয়। শিক্ষা কম থাকলেও শ্রমের মজুরি স্বল্প। এদিক থেকে বাংলাদেশ বিদেশি বিনিয়োগের আকর্ষণীয় জায়গা হতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ২:৩৪:১১ ৩৮৯ বার পঠিত