বঙ্গনিউজ ডটকমঃ রাজধানীর ইস্কাটনে জোড়া খুনের মামলায় এমপিপুত্র বখতিয়ার আলম রনির আইনজীবী আদালতে বলেছেন, ঘটনার সময় রনি মাতাল ছিল। নেশাগ্রস্ত অবস্থায় মানুষ কখন কী করে, তা বলা মুশকিল। অপরদিকে, রাষ্ট্রপক্ষ বলেছে, রনি অভিনয়ে পটু। ধুরন্ধরও। তাকে আরও জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন রয়েছে। আদালত উভয় পক্ষের শুনানি শেষে রনিকে চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। গতকাল ঢাকা মহানগর হাকিম মো. মাহবুবুর রহমান এই আদেশ দেন। এর আগে ২১ জুন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের এসআই দীপক কুমার দাস আসামি রনিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন। পরে রিমান্ড শুনানির জন্য গতকাল আসামি রনিকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় তার পরনে ছিল আকাশি পাঞ্জাবি, মাথায় ছিল টুপি। এর আগে ৯ জুন রনিকে রিমান্ডে ৪ দিন জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। রাষ্ট্রপক্ষে রিমান্ড শুনানিতে পুলিশের অপরাধ তথ্য ও প্রসিকিউশনের সহকারী কমিশনার (প্রসিকিউশন) মিরাস উদ্দিন আদালতকে বলেন, আসামি রনির গুলিতে দুজন নিরীহ মানুষ নিহত হয়েছেন। এর আগে তাকে রিমান্ডে নেওয়া হলেও তিনি অসুস্থতার ভান করেন। কিন্তু আসামির কোনো অসুস্থতা ধরা পড়েনি। একটি ক্লুলেস ঘটনাকে পুলিশ ক্লু দিয়েছে। পুলিশ আসামির ব্যবহৃত গাড়ি ও পিস্তল উদ্ধার করেছে। আইনানুযায়ী তদন্ত কর্মকর্তার হাত অনেক লম্বা। বিস্তারিত তদন্তের স্বার্থে আদালত যেন তদন্ত কর্মকর্তার হাত না বেঁধে দেয়। আসামিপক্ষের আইনজীবী কাজী নজিবুল্লাহ হীরু আদালতকে বলেন, আইনে তদন্ত কর্মকর্তার হাত লম্বা হলেও তা অসীম নয়। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত গাড়ি, পিস্তল সবই উদ্ধার হয়েছে। এমতাবস্থায় আসামিকে শুধু হয়রানি করার জন্য পুনরায় রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের সময় আসামি মাতাল ছিল এবং তার কোনো স্বাভাবিক জ্ঞান ছিল না। নেশার ঘোরে মাতালরা কী করে তার বিভিন্ন দৃষ্টান্ত উল্লেখ করে রিমান্ড নামঞ্জুরের জন্য বক্তব্য দেন। শুনানির এক পর্যায়ে আইনজীবী বলেন, আসামির কৃতকর্মকে চাপা দেওয়া তার লক্ষ্য নয় বলে আদালতকে জানান। তিনি ক্লু লেস ঘটনায় ক্লু উদ্ধার করতে পারায় পুলিশকে ধন্যবাদ জানান। তবে আদালতে তিনি বলেন, রনিকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে সাংবাদিকরা ছেলের অপরাধে তার নিরপরাধ সংসদ সদস্য মাকে (এমপি পিনু) ডুবিয়ে ফেলেছে বলেও মন্তব্য করেন। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ সূত্র জানায়, সিআইডির ব্যালাস্টিক পরীক্ষায় আসামির পিস্তল থেকেই গুলি করার বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। এ ছাড়া গাড়ির চালক এবং আসামির তিন সহযাত্রী স্বীকার করেছেন, রনির গুলিতেই ওই দুজন নিরপরাধ মানুষ নিহত হয়েছে। রনি কী কারণে ওই হত্যাকাণ্ড ঘটান, তা জানা খুব প্রয়োজন। এ ছাড়া আসামিকে নিয়ে বিভিন্ন হোটেলে ঘুরে কার কার সঙ্গে মদ পান করেছে, সে তথ্যও জানা প্রয়োজন। সেখানকার সিসিটিভির রেকর্ড সংগ্রহ করে যাচাই-বাছাই করে দেখতে হবে। যে কারণে আবারও রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। মামলার নথি সুত্রে জানা গেছে, ১৩ এপ্রিল রাত পৌনে ২টার দিকে নিউ ইস্কাটনে সামান্য যানজটে পড়ে উত্তেজিত হয়ে প্রাডো গাড়ি থেকে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ে মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পিনু খানের ছেলে বখতিয়ার আলম রনি। এ ঘটনায় আহত হন অটোরিকশাচালক ইয়াকুব আলী ও রিকশাচালক আবদুল হাকিম। পরে তারা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এরপরে নিহত হাকিমের মা মনোয়ারা বেগম অজ্ঞাত পরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে ১৫ এপ্রিল রাতে রমনা থানায় মামলা করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫:১৫:২৬ ৩৪৬ বার পঠিত