বঙ্গনিউজ ডটকমঃ রাজউকের ১২০০ কোটি টাকা মূল্যের ১৭ গ্রুপের টেন্ডার দখল-বেদখল নিয়ে তুলকালাম চলছে। সেখানে অস্ত্রবাজ ক্যাডাররা মতিঝিল রাজউক ভবন ঘিরে সশস্ত্র পাহারা বসিয়েছে। তাদের হটিয়ে দিতে প্রতিপক্ষ ঠিকাদার সিন্ডিকেটের ভাড়াটে সন্ত্রাসীরাও নিয়েছে মুখোমুখি অবস্থান। ফলে যে কোনো মুহূর্তে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কায় রয়েছেন রাজউকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে রাজউক সংশ্লিষ্ট টেন্ডারের শিডিউল ক্রয় ও জমাদানের সময়সীমা ২০ দিন পিছিয়ে ১২ জুলাই ধার্য করেছে। কিন্তু এতেও অবস্থা পাল্টাচ্ছে না, বরং আরও জোরদার পাহারা বসানো হয়েছে। প্রধান প্রকৌশলী পুলিশ পাহারায় অফিস করছেন। অভিযোগ পাওয়া গেছে, গতকাল পর্যন্ত রাজউক ভবন থেকে টেন্ডারের কোনো শিডিউল নির্দিষ্ট ঠিকাদার সিন্ডিকেটের বাইরে অন্য কাউকে কিনতে দেওয়া হয়নি।শিডিউল-প্রত্যাশী ঠিকাদার দূরে থাক, বিভিন্ন কাজে রাজউক ভবন চত্বরে ঢুকলেও নানামুখী জেরার মুখে পড়তে হচ্ছে। বেশ কয়েকজন ঠিকাদার অভিযোগ করেন, তারা শিডিউল কিনতে গিয়ে ক্যাডারদের হুমকি-ধমকির মুখে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন। আবার ব্যাংকে টাকা জমা দিয়েও শিডিউল কিনতে পারেননি এমন অভিযোগও পাওয়া গেছে। ঠিকাদাররা অবিলম্বে এ টেন্ডার বাতিল ঘোষণা করে রাজউক ভবনের বাইরেও টেন্ডার বিক্রির ব্যবস্থা রাখার দাবি জানিয়েছেন। রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী মো. হাফিজুর রহমান মুন্সি জানান, উত্তরার অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্প ও পূর্বাচলে রাস্তা নির্মাণ প্রকল্পের পর্যাপ্তসংখ্যক টেন্ডার শিডিউল পেপার নির্ধারিত ব্যাংকগুলোয় দেওয়া রয়েছে। কোনো ব্যাংকে শিডিউল ঘাটতি নেই। তবে শিডিউল ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে কিছু ঝামেলার কথা তিনি শুনেছেন। তবে ঠিকাদারদের কাছ থেকে এ-সংক্রান্ত কোনো লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন প্রধান প্রকৌশলী। শিডিউল কেনার ক্ষেত্রে সন্ত্রাসীদের বাধার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাসীরা বাধা দিলে আমরা কী করতে পারি?’ ২৩ মে থেকে শুরু হওয়া ওই কাজের শিডিউল বিক্রির শেষ দিন ছিল ২৪ জুন বেলা ১টা পর্যন্ত এবং ওই দিনই বেলা ২টায় টেন্ডার বাক্স খোলার সময় ধার্য ছিল। কিন্তু সাধারণ ঠিকাদারদের শিডিউল কিনতে না দেওয়ার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রাজউক ১২ জুলাই পর্যন্ত শিডিউল কেনার সময়সীমা বাড়িয়ে দিয়েছে। ঠিকাদাররা অভিযোগ করে জানান, শিডিউল বিক্রির দিন থেকেই ‘সরকারি পার্টির লোক’ নামধারীদের ক্যাডাররা রাজউক ভবনে অবস্থান নেয়। শতাধিক ক্যাডার পালাক্রমে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ডিউটি করছে। তাদের সিন্ডিকেটের বাইরে কাউকে শিডিউল কিনতে দেওয়া হচ্ছে না। সাউন্ড্রি ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ওয়ার্কশপের মালিক সাইফুল ইসলাম অপু অভিযোগ করেন, চার দিন ঘুরেও তিনি শিডিউল পেপার পাননি। রাজউক ভবন এলাকায় যাওয়া মাত্র তাকে অস্ত্রবাজ ক্যাডাররা ভয়ভীতি প্রদর্শন করেছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। ক্ষমতাসীন দলের এক সংসদ সদস্যও শিডিউল কিনতে গিয়ে ফেরত আসতে বাধ্য হয়েছেন। তবে ওই সংসদ সদস্য বিষয়টি স্বীকার করতে চাননি। যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতাও অভিযোগ করেছেন, তিনিও শিডিউল কিনতে গিয়ে ক্যাডারদের বাধার মুখে পড়েছেন। প্রায় একই রকম অভিযোগ করেছেন ফ্রেন্ডস ট্রেডার্স মালিক মামুন খন্দকার ও মোল্লা ট্রেডার্সের মালিক হোসেন। তাদের ভাষ্য, দুই দিন গিয়েও তিনি শিডিউল কিনতে পারেননি। তবে টাকা জমা দেওয়ার পরও শিডিউল পেপার সরবরাহ করা হয়নি এমন অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে জনতা ব্যাংক লিমিটেডের (রাজউক ভবন করপোরেট ব্রাঞ্চ) ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) মো. আবুল মনসুর বলেন, ‘ব্যাংকের বাইরের কী হয় তা আমাদের জানা নেই। তবে নির্ধারিত টাকা জমা দিয়ে ঠিকাদাররা শিডিউল পেপার কিনছেন।’ই-টেন্ডারিং কবে? : সাধারণ ঠিকাদাররা বলেছেন, রাজউকের শত শত কোটি টাকার টেন্ডার শিডিউল বিক্রি বা কেনার জন্য এখনো একটি মাত্র স্থান রাজউক ভবন নির্ধারিত আছে। এ ভবনের নিচ তলায় জনতা, অগ্রণী ও সোনালী ব্যাংকের শাখা রয়েছে। এ তিন শাখা থেকেই প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন কাজের টেন্ডার শিডিউল বিক্রি করা হয়। এ সুযোগই কাজে লাগাচ্ছে টেন্ডারবাজ সিন্ডিকেট। তারা পুরো টেন্ডার কার্যক্রম নিজেদের কব্জায় রাখার সুযোগ পাচ্ছে। জানা গেছে, গত বছরের জুলাইয়ের মধ্যেই রাজউকে ই-টেন্ডারিং ব্যবস্থা চালু হওয়ার কথা ছিল। এরই অংশ হিসেবে চারজন প্রকৌশলীকে প্রশিক্ষণও দিয়ে আনা হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত ই-টেন্ডারিং ব্যবস্থা চালু হয়নি। এর ফলে প্রায়ই রাজউকে টেন্ডারবাজির ঘটনা ঘটছে। টেন্ডারবাজির মাধ্যমে যেসব উন্নয়নকাজ সম্পন্ন করা হয় সেসব ক্ষেত্রে বরাবরই নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে শতকরা ১৫-২০ ভাগ অতিরিক্ত মূল্য হাঁকা হয়। ফলে শিডিউল মূল্যের চেয়েও অতিরিক্ত হিসেবে সরকারের কোটি কোটি টাকার অপচয় ও লুটপাট হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ৩:১৯:৩৬ ৪২৭ বার পঠিত