বঙ্গনিউজ ডটকমঃ বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীকে একবিংশ শতাব্দীর একটি শক্তিশালী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য ৫০ হাজার জনবল নিয়োগের কাজ শুরু হয়েছে। এখন চলছে নন ক্যাডার পদের সাব-ইন্সপেক্টরসহ অন্যান্য পদের নিয়োগ প্রক্রিয়া। এসব পদ পূরণের জন্য বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করা হয়েছে। এর আগে গত মাসে জন প্রশাসন মন্ত্রণালয় পুলিশের বিভিন্ন পদে প্রায় ৩৩ হাজার পদ সৃষ্টির কাজ শেষ করেছে। বাকিগুলোরও প্রক্রিয়া চলছে। পুলিশের এ ৫০ হাজার জনবল নিয়োগ করা হলেও সেটা দেশের মোট জনসংখ্যার তুলনায় খুবই অপ্রতুল বলে মনে করছেন অপরাধ বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, এ ৫০ হাজার লোক নিয়োগ করতে কমপক্ষে ৫ বছর সময় লাগবে। জাতিসংঘের মান অনুযায়ী বাংলাদেশে ১৬ কোটি লোকসংখ্যার বিপরীতে ৪ লাখ পুলিশ দরকার। সেখানে আছে মাত্র ১ লাখ ৫৫ হাজার ৭৯৭ জন। প্রয়োজন বাস্তবতার মাঝে কতোটা ফারাক সেটা সহজেই চোখে পড়ে।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জনকণ্ঠকে বলেন, পুলিশে নিয়োগের বিষয়টি একটি চলমান প্রক্রিয়া। প্রতিবছরই লোক নিয়োগ করা হচ্ছে। তারপর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এ বাহিনীকে একবিংশ শতাব্দীর যুগোপযোগী একটি জনবান্ধব পুলিশ বাহিনী গড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তারই অংশ হিসেবে ৫০ হাজার জনবল নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
পুলিশ সদর দফতরের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জনকণ্ঠকে জানায়, একযোগে এত সংখ্যক লোক নিয়োগ আগে হয়নি। এবারই প্রথম একযোগে এত বিশাল নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন। ইতোমধ্যে প্রথম দফায় দুই ধাপে ১৪ হাজার ৬৭৪টি পদের অনুমোদন দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে ক্যাডার পদ ৩৮৫ ও নন ক্যাডার ২৫৩৬। নন ক্যাডার পদে আগামী মাসেই নিয়োগ শুরু হবে। ক্যাডার পদগুলো বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া হবে।
জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চাহিদা অনুযায়ী পুলিশের ৫০ হাজার জনবলের মধ্যে প্রথম ধাপে ৪ হাজার ৭৭৮টি পদের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ক্যাডার পদে ১৫৬ এবং নন ক্যাডার পদে ৬৬৪ (ইন্সপেক্টর, সাব ইন্সপেক্টর ও সার্জেন্ট) জন। বাকি পদগুলো আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন), গাজীপুর ও রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ এবং ঢাকা রেঞ্জের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি নিয়োগ হবে রংপুরে মেট্রোপলিটন পুলিশে ২ হাজার ৩৭০ জন। এরপর দ্বিতীয় ধাপে ৯ হাজার ৯০৬ পদ সৃষ্টির প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। ক্যাডার পদ ১২৯ এবং নন ক্যাডার পদ ১ হাজার ৮৭২টি। ঢাকা মেট্রোপলিটনে ৭ হাজার ১৫১টি পদ, যারমধ্যে ক্যাডার পদ ৮৯, নন ক্যাডার ১ হাজার ৩৩০ এবং অন্যান্য পদে ৫ হাজার ৭৩২।
খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের ক্যাডার পদে ১৮, নন ক্যাডার ২৫৫ এবং অন্যান্য পদে ১ হাজার ২১। বরিশাল মেট্রোপলিটনে ক্যাডার পদে ১৩, নন ক্যাডার ১৮৬ ও অন্যান্য পদে ৫০৫। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশে ক্যাডার পদে ৯, নন ক্যাডার ১০১ এবং অন্যান্য পদে ৫৫০ জন।
পুলিশের ৫০ হাজার জনবলের পদ সৃষ্টি করলে ৭৫০টি বিসিএস ক্যাডার, অতিরিক্ত আইজি ১১, ডিআইজি ২৮, অতিরিক্ত ডিআইজি ৪৫, পুলিশ সুপার (এসপি) ১৮২, অতিরিক্ত এসপি ৩৫১ ও এএসপি ১৩৩টি নতুন পদ হবে।
এ ছাড়া ইন্সপেক্টর ২ হাজার ৯৮৫, এসআই ৯ হাজার ১৭৭, সার্জেন্ট ৩৬৫, নিরস্ত্র এএসআই ৮ হাজার ২১২, সশস্ত্র এএসআই ১ হাজার ৭৭১ জন, এএসআই ৪৩৩, নায়েক ৯৭৬, কনস্টেবল ২১ হাজার ৩৪৫ এবং সিভিল কর্মচারী ৩ হাজার ৯৮৬টি পদ সৃষ্টি হবে।
পুলিশের বর্তমান জনবল ১ লাখ ৫৫ হাজার ৭৯৭ জন। ৫০ হাজার জনবল নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতে আরও পাঁচবছর সময় লাগবে। তখন দেশের মোট জনসংখ্যা হবে প্রায় আঠার কোটির কাছাকাছি। সে তুলনায় পুলিশের ন্যূনতম প্রয়োজনীয় সংখ্যা দাঁড়াবে ৩ লাখেরও বেশি। দেশের বর্তমানে প্রতি ১২শ’ লোকের বিপরীতে ১ জন পুলিশ রয়েছে। যেটা জাতিসংঘের মান অনুযায়ী খুবই কম। জাতিসংঘের মান অনুযায়ী ন্যূনতম পক্ষে প্রতি ৪শ’ লোকের বিপরীতে ১ জন পুলিশ সদস্য দরকার। চাহিদা ও বাস্তবতার মধ্যে এত বিশাল ব্যবধান বিশ্বের আর কোন দেশে নেই। এমন কি আমাদের আশপাশের দেশগুলোতে এ সংখ্যা অনেক বেশি। ভারতে প্রতি ৬৯৭ জন লোকের বিপরীতে ১ জন পুলিশ, পাকিস্তানে প্রতি ৬৫০ জনের বিপরীতে ১ জন মালয়েশিয়াতে প্রতি ২৪৯ জনের বিপরীতে ১ জন পুলিশ রয়েছে। আর যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে ১৭ হাজার প্রকারে বিশেষায়িত পুলিশ। সে তুলনায় বাংলাদেশে রয়েছে মাত্র ১৭ ধরনের পুলিশ। এগুলো হচ্ছে, শিল্প পুলিশ, নৌ পুলিশ, ট্যুরিস্ট পুলিশ, মেট্রোপলিটন পুলিশ, ডিবি পুলিশ, সিআইডি পুলিশ, এসবি পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, রেল পুলিশ, ৩ প্রকারের এপিবিএন পুলিশ, প্রটেকশন পুলিশ ও বিশেষ তদন্ত পুলিশ।
আর্মড পুলিশের একজন উর্ধতন কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, জাতিসংঘের মান অনুযায়ী প্রতি ৪শ’ জন লোকের বিপরীতে ১ জন পুলিশের আনুপাতিক হার অনুযায়ী বাংলাদেশে বর্তমানে ১৬ কোটির জনসংখ্যার হারে কমপক্ষে ৪ লাখ পুলিশ দরকার। অথচ এখন আছে মাত্র ১ লাখ ৫৫ হাজার ৭৯৭ জন পুলিশ। আরও যে ৫০ হাজার লোক নিয়োগের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে সেটা হলেও পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হবে না। কারণ এ ৫০ হাজার লোক নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে কমপক্ষে ৫ বছর লাগবে। অর্থাৎ ২০২০ সালে যখন এ নিয়োগ শেষ হবে তখন দেশের লোকসংখ্যা হবে কমপক্ষে ১৮ কোটি। তা ছাড়া এ পাঁচবছরে পুলিশের জনবলও কমবে অবসরে যাবার কারণে। বর্তমানে প্রতিবছর গড়ে ২ হাজার সদস্য পুলিশ বিভাগ থেকে অবসরে যাচ্ছে।
অপরাধ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন-বাংলাদেশে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি দরকার বিশেষায়িত পুলিশ। য্্্ক্তুরাষ্ট্রে যদি ১৭ হাজার প্রকারের পুলিশ থাকতে পারে, তাহলে বাংলাদেশে কেন মাত্র ১৭ ধরনের পুলিশ থাকবে। বাংলাদেশকে যদি বিশ্বের সঙ্গে ন্যূনতম তাল মিলিয়েও চলতে হয় -তাহলেও বর্তমানে ১০০ ধরনের পুলিশ দরকার।
বাংলাদেশ সময়: ২:৫৬:৩৪ ৪৮৩ বার পঠিত