বঙ্গনিউজ ডটকমঃ জলাতঙ্ক বা র্যাবিস একটি ১০০ ভাগ মৃত্যুঝুঁকিপূর্ণ রোগ। এমনকি এ রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেলে মৃত্যু ছাড়া অন্য কোনো গন্তব্য নেই। কারণ, বিজ্ঞানের এই চরম উৎকর্ষের যুগেও এ রোগ নিরাময়ের কোনো চিকিৎসা আজো আবিষ্কৃত হয়নি।জলাতঙ্ক রোগের কারণে পৃথিবীতে প্রতি বছর প্রায় ৬০ হাজার লোকের মৃত্যু হয় এবং এর প্রায় দুই হাজার জনের মৃত্যু ঘটে বাংলাদেশে। আপনারা জেনে আশ্চর্য হবেন, ভারতের পর বাংলাদেশে জলাতঙ্কজনিত রোগীর মৃত্যু সংখ্যা বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে এ সংখ্যা আরো অনেক বেশি। কারণ বাংলাদেশে জলাতঙ্ক রোগের তথ্য সংগ্রহ এবং সংরক্ষণের কোনো সামগ্রিক ব্যবস্থা আজো গড়ে উঠেনি।
জলাতঙ্ক রোগের কারণ একধরনের ভাইরাস, যা মস্তিষ্কে তীব্র প্রদাহ সৃষ্টি করে। জলাতঙ্ক রোগ প্রধান স্তন্যপায়ী প্রাণীর কামড়, আঁচড় বা লালার স্পর্শ থেকে সংক্রমিত হতে পারে। আমাদের দেশে সাধারণত কুকুর, বিড়াল, বানর, শিয়াল ইত্যাদির মাধ্যমে জলাতঙ্কের ভাইরাস মানবদেহে প্রবেশ করে। এ রোগের ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করে লক্ষণ প্রকাশ পেতে সাধারণত তিন সপ্তাহ থেকে তিন মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে কামড় বা আঁচড়ের ধরন ও স্থান ভেদে চার দিন থেকে কয়েক বছর পরেও এ রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে। এমনকি ১৮ বছর পরেও এ রোগের লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার কথা জানা গেছে।
সুতরাং এ জাতীয় যেকোনো প্রাণীর কামড়, আঁচড় বা কোনো ক্ষতস্থানে লালার স্পর্শ হলে যত দ্রুত সম্ভব ক্ষতস্থানটি প্রচুর সাবান পানি দিয়ে অন্তত ১০ মিনিট ধরে খুব ভালো করে ধুয়ে ফেলতে হবে। ক্ষতস্থানে পভিডন আয়োডিন বা অন্য কোনো অ্যান্টিসেপটিক লাগাতে হবে এবং অনতি বিলম্বে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী জলাতঙ্কের আধুনিক ভ্যাকসিন গ্রহণ করে চিকিৎসা শুরু করতে হবে। আমাদের একটি কথা অবশ্যই মনে রাখতে হবে, ক্ষতস্থানটিতে যেন আমরা ব্যান্ডেজ বা সেলাই না করি। যেহেতু এ রোগের কোনো চিকিৎসা নেই, সেহেতু তাবিজ-কবচ, পানি-থালা-কলা পড়া ইত্যাদি করে মূল্যবান সময় কোনোভাবেই নষ্ট করা ঠিক হবে না।
জলাতঙ্কের প্রধান লক্ষণ হলো, প্রায় ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তির পানি পানজনিত ভীতি এবং অবশিষ্ট ২০ শতাংশ রুগীর এ ভীতি না হয়ে পক্ষাঘাতগ্রস্ততা দেখা দিতে পারে।
এটা অত্যন্ত দুঃখজনক যে, বাংলাদেশে জলাতঙ্কের সর্বাধুনিক ভ্যাকসিন পাওয়া গেলেও জনগণের অসচেতনতার কারণে এখনো অনেক মূল্যবান জীবনের অবসান ঘটছে। যারা আবার চিকিৎসার জন্য যান, তাদের অনেকেই জলাতঙ্কের আধুনিক চিকিৎসা না জানার কারণে নাভির চারপাশে ১৪টি বড় এবং তীব্র বেদনাদায়ক নার্ভ টিস্যু ভ্যাকসিন গ্রহণ করেন, যা বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক নিষিদ্ধ। নার্ভ টিস্যু ভ্যাকসিন শুধু তীব্র বেদনাদায়কই নয়, এ ভ্যাকসিনের চিকিৎসা ব্যর্থতার পাশাপাশি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও অনেক রয়েছে। নার্ভ টিস্যু ভ্যাকসিন গ্রহণের ফলে প্রতি ৪০০ জনের মধ্যে একজনের মস্তিষ্কে তীব্র প্রদাহের সৃষ্টি হতে পারে।
বাংলাদেশে বর্তমানে বিশ্বের এক নম্বর এবং আমেরিকার এফডিএ অনুমোদনপ্রাপ্ত সর্বাধুনিক জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন রাবিপুর পাওয়া যায়। রাবিপুর ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী হাতে পাঁচটি প্রায় বেদনাহীন ইনজেকশনের মাধ্যমে নিতে হয়। ডঐঙ-এর পরামর্শ অনুযায়ী রাবিপুর গ্রহণ করলে জলাতঙ্কের বিরুদ্ধে স্থায়ী প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব।
জলাতঙ্কের বিরুদ্ধে আধুনিক প্রতিরোধমূলক চিকিৎসাব্যবস্থা গ্রহণ করে বিশ্বের অনেক দেশই আজ এ রোগের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেয়েছে। সুতরাং, আসুন আমরা সবাই সচেতন হই এ রোগের বিরুদ্ধে এবং সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলি, যাতে করে আমরা সবাই এ রোগের ভয়াবহতা সম্পর্কে জানতে পারি এবং নিশ্চিত করতে পারি আমাদের সবার জন্য জলাতঙ্কের সর্বাধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থা এবং শুধু তখনই আমরা আশা করতে পারি, অদূর ভবিষ্যতে একটি জলাতঙ্কের ভয়াবহতাবিহীন বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ সময়: ২৩:৫৩:১৩ ৫৬৩ বার পঠিত