বঙ্গনিউজ ডটকমঃ ম্যাচ জেতার পর এক সুতোয় বাঁধা পড়েছে পুরো দেশ। ১৬ কোটি বাঙালি এখন ক্রিকেটপ্রেমী। সবাই এখন মাশরাফি-মুস্তাফিজভক্ত। সবাই এখন সাকিব-মুশফিকভক্ত। তামিম-সৌম্য-নাসির-সাব্বিরভক্ত। প্রতিবেশী ভারতকে হারানোর পর বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা এখন পরম আরাধ্য। তাদের এক নজর দেখতে ঢল নামছে আমজনতার। কাল ছিল ক্রিকেটারদের ছুটি। বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে অলস সময় কাটিয়েছেন মাশরাফিরা। শুধু হোটেলে ছিলেন ‘বিস্ময় বালক’ মুস্তাফিজুর রহমান। ছিলেন কোচিং স্টাফও। ‘নিউ সেনসেসন’ মুস্তাফিজের সঙ্গে ফ্রেমবন্ধী হতে ব্যস্ত ছিলেন হোটেল কর্মচারীরা।
সিরিজ জেতায় মাশরাফিবাহিনী এখন পুরোপুরি নির্ভার। অপেক্ষায় আছে বাংলাওয়াশের। এমন এক দলের বোলিং কোচ হয়ে ভীষণ খুশি জিম্বাবুয়ের সাবেক অধিনায়ক হিথ স্ট্রিক। বোলিং কোচ হিসেবে মুস্তাফিজের অসামান্য কীর্তিতে ভীষণ আনন্দিত স্ট্রিক, ‘আমি খুবই খুশি দলের পারফরম্যান্সে। মুস্তাফিজ অসাধারণ। বিস্ময়কর। দুই ম্যাচে সে যে পারফরম্যান্স করেছে এবং যে রেকর্ড গড়েছে, তাতে কোচিং স্টাফের আমরা সবাই খুশি। এমন পারফরম্যান্সের জন্য অবশ্যই ক্রিকেটারদের অভিনন্দন জানান উচিত। দলের এই ক্রমোন্নোতি জিম্বাবুয়ে সিরিজ থেকে শুরু। বিশ্বকাপে সেটা পরিস্ফূটিত হয়েছে।’
২০১৪ সাল খুব ভালো যায়নি টাইগারদের। হেরেছে আফগানিস্তান, হংকংয়ের মতো পুচকে দলের কাছে। তবে এই উন্নতির গ্রাফ গত ডিসেম্বর থেকে। বিজয়ের মাসে জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে উঠে আসে জয়ের রেসে। হোয়াইটওয়াশ করে আফ্রিকান প্রতিনিধিদের। চিগুম্বুরাদের হারানোর আত্মবিশ্বাস নিয়ে বিশ্বকাপ খেলতে যান মাশরাফিরা। ইংল্যান্ডের মতো দলকে পেছনে ফেলে প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা করে নেয় বাংলাদেশ। কোয়ার্টার ফাইনালে আম্পায়ারদ্বয় যদি একচোখা সমর্থন না করতেন ভারতকে, তাহলে ম্যাচের ফল অন্যরকম হতেই পারতো। সফল বিশ্বকাপ শেষে দেশে ফিরেই পাকিস্তানকে দুমড়ে মুচড়ে দেয় ওয়ানডে সিরিজে। হোয়াইটওয়াশ করে পাকিস্তানকে। পাকিস্তানের পর এখন ভারতকে নিয়ে ছেলেখেলা খেলছেন মাশরাফিরা। দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলে প্রথম ম্যাচে ৭৯ রানের এবং দ্বিতীয় ম্যাচে হারায় ৬ উইকেটে। দলের এমন পারফরম্যান্সে বিস্মিত নন বোলিং কোচ স্ট্রিক, ‘দলের এমন পারফরম্যান্সে আশ্চর্য হইনি। বিশ্বকাপ ক্রিকেট থেকেই আমরা ভিন্ন বাংলাদেশকে দেখছি। ক্রিকেটাররা আত্মবিশ্বাসী। তারা শুধু একটি জয়ের জন্য খেলে না। তারা সিরিজ ৩-০ ব্যবধানে জেতার জন্য খেলে।’
প্রথম ম্যাচে মুস্তাফিজ ৫০ রানে নিয়েছিলেন ৫ উইকেট। দ্বিতীয় ম্যাচে নেন ৪৩ রানে ৬ উইকেট। টানা দুই ম্যাচে ৫ বা ততোধিক উইকেট নিয়ে বাঁ হাতি পেসার এখন ইতিহাসের ব্রাকেটবন্দী। অভিষেকের প্রথম দুই ম্যাচে ৫টি করে উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব রয়েছে জিম্বাবুয়ের বাঁ হাতি পেসার ব্রায়ান ভিটরিরও। মুস্তাফিজ দ্বিতীয় ম্যাচে ৬ উইকেট নিয়ে ছাড়িয়ে গেছেন ভিটরিকে। মুস্তাফিজের এমন রহস্যময় বোলিংয়ের শিকার ভারতীয় অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনী বিস্ময় প্রকাশ করেছেন, ‘অন্যান্য বোলারদের স্লোয়ার এত জোরে আসে না। মুস্তাফিজ যতটা জোরে করেন। তার সুইং ভালো। সঙ্গে স্লোয়ারটা মারাত্মক।’ দুই ম্যাচে রেকর্ডগড়া মুস্তাফিজের দলে জায়গা পাওয়াটা কিন্তু সহজ ছিল না। তাকে নিতে বেশ কাঠখড় পোহাতে হয়েছে কোচিং স্টাফদের, ‘মিরপুরের উইকেট সিমারদের জন্য কাজ করবে বলে ভেবেছিলাম। ততটা না করলেও মুস্তাফিজ অসাধারণ বোলিং করেছেন। পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-২০ ম্যাচে দুর্দান্ত বোলিং করেছেন মুস্তাফিজ। তখনই সামর্থ্যের প্রমাণ রাখেন। তখন থেকে মুস্তাফিজকে পাওয়াটা আমাদের সুখকর ছিল না। অনেক কাঠখড় পোহাতে হয়েছে আমাদের তাকে দলে নিতে। তাসকিন, রুবেল ভালো বোলিং করছেন। মাশরাফি নিয়মিত পারফরমার। সব মিলিয়ে আমাদের বোলিং যথেষ্ট সমন্বিত। এমনটা আশা করেনি ভারত।’
বাংলাদেশ সময়: ২৩:৩৩:৪৬ ৩৭৬ বার পঠিত