বঙ্গনিউজ ডটকমঃ যুক্তরাষ্ট্রে আগ্নেয়াস্ত্রের গুলিতে প্রতিদিন গড়ে ৩৩ জনেরও বেশি মানুষ বিচার বহির্ভূত হত্যার শিকার হচ্ছে বলে বিগত আড়াই বছর ধরে চলা সরকারি নিরীক্ষায় তথ্য উঠে এসেছে। সম্প্রতি ফেডারেল প্রশাসনের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ১৯ জুনের আগ পর্যন্ত দুই বছর ৫ মাস ১৯ দিনে যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুকের গুলিতে ২৯ হাজার ৭৯৫ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। হতাহতের বড় একটি অংশ শিশু-কিশোর। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, উপাসনালয়, রেস্টুরেন্ট ও জনসমাগমে এসব অতর্কিত হামলা চালানো হয়েছিল। এই লোমহর্ষক হিসেব অনুযায়ী প্রতিদিন গড়ে হতাহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৩ জনেরও বেশি। সর্বশেষ বন্দুক হামলার ঘটনা ঘটে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ক্যারোলাইনায় চার্লস্টনে শত বছরের পুরনো গির্জায়। এ ঘটনায় প্রার্থনারত অবস্থায় নিহত হন নয় জন। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালে গুলিতে ১১ হাজার ৪১৯ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। নিহতদের মধ্যে ৬ হাজার ৪২০ জন ১৮ বছরের কম বয়সী শিশু-কিশোর। ২০১৪ সালে বন্দুকের গুলিতে নিহত হয়েছে ১২ হাজার ৫৬১ জন। অতর্কিত গুলিতে ২২ হাজার ৯৮৮ জন আহত হয়েছে ওই বছর। নিহতদের মধ্যে ৬২৯ জনের বয়স ১১ বছরের কম। ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী ছিল ২৩৭২ জন। ওই নির্বিচারে গুলি বর্ষণের ঘটনায় নিহত হয়েছে ২৮৪ জন। এছাড়া দুর্ঘটনাক্রমে বন্দুকের গুলিতে মারা গেছেন ১৫৯৮ জন। চলতি বছরের ১৯ জুন পর্যন্ত নিহত হয়েছে পাঁচ হাজার ৮১৫ জন। এর মধ্যে ১১ বছরের কম বয়সী রয়েছে ৩১১ জন। ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী রয়েছে ১১০৮ জন। নির্বিচার গুলিবর্ষণে নিহত হয়েছেন ১৩৮ জন। এছাড়া ৯০৫ জনের প্রাণ গেছে দুর্ঘটনাক্রমে বন্দুক থেকে বেরিয়ে আসা বুলেটে। বেসামরিক নাগরিকদের হাতে থাকা বৈধ কিংবা অবৈধ অস্ত্রের গুলিতে একের পর এক হতাহতের ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। বন্দুক নিয়ন্ত্রণ আইন করতে বারবার মার্কিন কংগ্রেসে দাবি তুলেছেন তিনি। গত শুক্রবার সানফ্রান্সিসকোতে যুক্তরাষ্ট্রের সিটি মেয়রদের এক সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট ওবামা বলেন, বন্দুকের গুলিতে নিহত মানুষের প্রাণ যাওয়ার পর আমরা শুধু চোখের পানি ফেলি, শোক-বিবৃতি দিই। এরকম অমানবিক আচরণ রোধে প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে যে কাজটি করার আহ্বান আমি বারবার জানাচ্ছি তার প্রতি কেউ ভ্রƒক্ষেপ করছেন না। সাউথ ক্যারোলাইনার গির্জায় গুলিবর্ষণের পর ডেমক্র্যাটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিলারি ক্লিন্টনও অবিলম্বে বন্দুক নিয়ন্ত্রণ আইন করার ওপর জোর দিয়েছেন। অপর এক খবরে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের নিউ অর্লিন্সে গ্রেফতার এক ব্যক্তিকে কারাগারে নেয়ার পথে গুলিতে শহররের এক পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। গত শনিবার পুলিশের গাড়িতেই হত্যাকা-ের ঘটনাটি ঘটেছে বলে জানিয়েছেন নিউ অর্লিন্সের পুলিশ কর্মকর্তারা। হত্যাকা-ের জন্য পুলিশের গাড়িটি থেকে পালিয়ে যাওয়া গেফতারকৃত ট্রাভিস বয়েসকে সন্দেহ করা হচ্ছে। তাকে ফের গ্রেফতারে ব্যাপক অভিযান শুরু করা হয়েছে। পিছমোড়া করে হাতকড়া পরানো বয়েসকে গাড়িতে উঠিয়ে নিউ অর্লিন্সের প্যারিশ কারাগারে দিকে রওয়ানা হয়েছিলেন নিহত পুলিশ কর্মকর্তা ৪৫ বছর বয়স্ক ড্যারিয়েল হলওয়ে। ২২ বছর ধরে পুলিশে চাকরি করা অভিজ্ঞ এই কর্মকর্তার গাড়িটি একটি বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে বিধ্বস্ত হওয়ার পর ভিতরে তার গুলিবিদ্ধ মৃতদেহ পাওয়া যায়। কিন্তু ৩৩ বছর বয়সী বয়েসকে গাড়িতে পাওয়া যায়নি। কিভাবে হলওয়ে নিহত হলেন তা পরিষ্কার না হলেও পুলিশ বয়েসকেই সন্দেহ করছে। কিন্তু হলওয়ে যখন গাড়িটি চালানো শুরু করেন বয়েসের হাত পিছমোড়া করে হাতকড়া লাগানো ছিল। এক বিবৃতিতে পুলিশ বলেছে, প্রাথমিক তদন্তানুযায়ী, গাড়ি চলার সময় গাড়ির ভিতরেই বয়েস পুলিশ কর্মকর্তা হলওয়েকে গুলি করে। গাড়িটি বৈদ্যুতিক খুঁটিতে ধাক্কা খাওয়ার পর বয়েস সেখান থেকে পালিয়ে যায়। এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মাইকেল হ্যারিসন বলেছেন, পিছমোড়া করে হাতকড়া পড়ানো থাকলেও বয়েস কোনোভাবে কাঁধ ঘুরিয়ে তার শরীরের সামনের দিকে রাখা আগ্নেয়াস্ত্রের নাগাল পেয়েছিলেন এবং তা দিয়ে গুলি করেছিলেন। রয়টার্স, বিবিসি।
বাংলাদেশ সময়: ২৩:৩১:৪১ ৪৩১ বার পঠিত