বঙ্গনিউজ ডটকমঃ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নাইকো দুর্নীতি মামলা চলবে। আগামী দুই মাসের মধ্যে এ মামলায় বিচারিক আদালতে তাকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে খালেদার করা রিট আবেদন ও মামলা বাতিলসংক্রান্ত রুল খারিজ করে গতকাল বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান ও বিচারপতি জাফর আহমেদের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। একই সঙ্গে বিচারিক আদালতে এ মামলার কার্যক্রম চলার ওপর হাইকোর্টের দেওয়া স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। আইনজীবীরা জানিয়েছেন, হাইকোর্টের এ রায়ের ফলে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নিু আদালতে নাইকো দুর্নীতি মামলার বিচার কার্যক্রম চলতে আর কোনো বাধা নেই। তবে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা জানিয়েছেন, তারা এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আপিল করবেন। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৯ নাইকো মামলাটি অভিযোগ গঠনের শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। ১/১১-এর পর সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এ মামলা করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক। হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়, রিট আবেদন গ্রহণযোগ্য নয়। রুল খারিজ করা হলো। এ আদেশ বিচারিক আদালতে পৌঁছানোর দুই মাসের মধ্যে আসামিকে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দেওয়া হলো। নিু আদালতে জামিন চাইলে আদালত জামিন বিবেচনা করবেন, কেননা আবেদনকারী জামিনের অপব্যবহার করেননি। নাইকো দুর্নীতি মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে তা বাতিলের আবেদন জানিয়ে হাইকোর্টে রিট করেছিলেন খালেদা জিয়া। এ রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৮ সালের ১৫ জুলাই মামলা কেন বাতিল করা হবে না মর্মে রুল জারি করে এ মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেন হাইকোর্ট। পরে বিভিন্ন সময়ে স্থগিতাদেশের মেয়াদ কয়েক দফা বাড়ানো হয়। তবে এ বছরের শুরুর দিকে রুল নিষ্পত্তির মাধ্যমে এ মামলা সচলের উদ্যোগ নেয় দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক। খালেদার আবেদনে জারি করা রুলের ওপর শুনানি শুরু হয় ১৯ এপ্রিল। ২৮ মে রুলের ওপর শুনানি শেষে রায় অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখেন হাইকোর্ট। গতকাল এর রায় দেওয়া হয়। খালেদা জিয়ার পক্ষে আদালতে এ মামলায় শুনানি করেন অ্যাডভোকেট এ জে মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, ব্যারিস্টার রাগিব রউফ চৌধুরী ও ব্যারিস্টার এ কে এম এহসানুর রহমান। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. খুরশীদ আলম খান। খুরশীদ আলম খান বলেন, ফৌজদারি মামলায় রিট আবেদন চলতে পারে না। এ কারণে হাইকোর্ট এ রায় দিয়েছেন। আদালতের এ রায়ের ফলে নিু আদালতে এ মামলার কার্যক্রম চলতে আর কোনো বাধা রইল না। তিনি জানান, সেলিম ভূঁইয়া নামক এ মামলার এক আসামি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে স্বীকার করেছেন যে নাইকোর বিষয়ে ৩ কোটি টাকার ঘুষ আদান-প্রদান হয়েছিল। হাইকোর্টের এ রায়ের ফলে নাইকো দুর্নীতি মামলা করতে দুদকের অনুমোদন সঠিক ছিল বলে প্রমাণিত হয়েছে। ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, খালেদা জিয়ার সঙ্গে আলাপ করে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আপিল করা হবে। বদরুদ্দোজা বাদল বলেন, ‘একই বিষয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা মামলা হাইকোর্ট বাতিল করায় আমরা আশা করেছিলাম, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মামলাও বাতিল করা হবে। সেভাবেই শুনানি ও যুক্তিতর্কে অংশ নিয়েছিলাম। কিন্তু হাইকোর্টের এ রায়ে আমরা সংক্ষুব্ধ। আশা করি আপিল বিভাগে আমরা ন্যায়বিচার পাব।’ কানাডার কোম্পানি নাইকোর সঙ্গে অস্বচ্ছ চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতিসাধন ও দুর্নীতির অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর রাজধানীর তেজগাঁও থানায় নাইকো দুর্নীতি মামলা করে দুদক। ২০০৮ সালের ৫ মে এ মামলায় খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। অভিযোগপত্রে প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় ক্ষতির অভিযোগ আনা হয়। এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন, সাবেক মুখ্যসচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সি এম ইউছুফ হোসাইন, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, সাবেক সচিব মো. শফিউর রহমান, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, ঢাকা ক্লাবের সাবেক সভাপতি সেলিম ভূঁইয়া ও নাইকোর দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ। নাইকো ছাড়াও গ্যাটকো ও বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলা বাতিলেও খালেদার রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রুল জারি ও মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেছিলেন হাইকোর্ট। ১৯ এপ্রিল মামলাগুলোর রুল শুনানি পেছাতে খালেদার আইনজীবীদের চারটি সময়ের আবেদন খারিজ করার পর গ্যাটকো দুর্নীতি মামলায় রুল শুনানি শুরু হয়। এ শুনানি ১৭ জুন শেষ হওয়ায় রায় যে কোনো দিন দেওয়া হবে জানিয়ে অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখেন হাইকোর্ট। অন্যদিকে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলা রুল শুনানি চলছে হাইকোর্টে। ৯ এপ্রিল এ মামলার কার্যক্রমের ওপর হাইকোর্টের দেওয়া স্থগিতাদেশ আরও ছয় মাসের জন্য বৃদ্ধি করেন আদালত।
বাংলাদেশ সময়: ৩:৪২:৫৬ ৪০৮ বার পঠিত