বঙ্গনিউজ ডটকমঃ বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপাল - এই চার দেশের মধ্যে যাত্রী ও পণ্যবাহী যানবাহন চলাচলের রূপরেখা চুক্তি সই হওয়ার পর নাগরিকদের মধ্যে উচ্ছ্বাস যেমন আছে, আছে বিতর্কও৷ তবে বিশ্লেষকদেক ধারণা, এই কানেকটিভিটিতে লাভ ছাড়া ক্ষতি নেই৷
এই চুক্তির অধীনে চারটি দেশের মধ্যে যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী ট্রাক-লরি ও ব্যক্তিগত গাড়ি চলতে পারবে৷ চলতি বছরের শেষ দিকে মূল চুক্তি সই হলে চুক্তিটি পুরো মাত্রায় কার্যকর হবে৷ সোমবার ভুটানের রাজধান থিম্পুতে চার দেশের পরিবহনমন্ত্রীরা প্রাথমিক চুক্তিতে সই করেছেন৷ আর এরই মধ্যে প্রাথমিক চুক্তি সইয়ের পর চলাচল পথের সমীক্ষা, পরীক্ষামূলক চলাচল এবং অভিবাসন সুবিধা পর্যালোচনার কাজ শুরু হয়েছে৷
বাংলাদেশের পক্ষে চুক্তি সইয়ের পর যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সংবাদমাধ্যমকে জানান, ‘‘এই চুক্তির মাধ্যমে এ অঞ্চলের মানুষের যোগাযোগ, ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক কর্মকা- বাড়বে৷ আগামী বছরের শুরুতেই চুক্তিটি বাস্তবায়নের জন্য কাজ চলছে৷ এই যাতায়াতের জন্য ভিসা ও বহির্গমন আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ীই হবে৷”
ঢাকায় বাণিজ্যমন্ত্রী তোফয়েল আহমেদ বলেন, ‘‘বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপালের মধ্যে সড়ক পথে যাত্রীবাহী, ব্যক্তিগত ও পণ্যবাহী যান চলাচলের চুক্তি অনুযায়ী, ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশন-এর (ডাব্লিউটিও) নিয়মমতো টোল নেওয়া হবে৷”
তিনি বলেন, ‘‘ভারতের সঙ্গে যেসব চুক্তি হয়েছে, তাতে বাংলাদেশই বেশি লাভবান হয়েছে৷ তাছাড়া চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ভারত ব্যবহার করতে পারলে আমরাই অর্থনৈতিকভাবে বেশি লাভবান হবো৷”
জানা গেছে, চার দেশের মধ্যে চলাচলের জন্য শুল্ক ও অভিবাসন কর্তৃপক্ষের যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হবে নিজ নিজ দেশের আইনে৷ তবে ট্রানজিট ও চলাচলের অনুমতি-সংক্রান্ত ফি নির্ধারণ করা হবে আলোচনার মাধ্যমে৷
দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতাবিষয়ক কৌশলগত বাণিজ্য সম্প্রসারণ (সাসেক) রূপরেখার ওপর ভিত্তি করেই এ চুক্তি সই হয়েছে৷ সাসেক রূপরেখা ২০১৪ সালের মার্চে এ চারটি দেশ অনুমোদন করে৷
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘‘যত বিতর্কই থাকুক না কেন, এই চারটি দেশের মধ্যে যান চলাচলের চুক্তিকে আমি ইতিবাচকভাবেই দেখি৷ ‘কানেকটিভিটি’ সব সময়ই অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়তা করে৷ বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে যদি ভারতের পণ্য ‘সেভেন সিস্টার’ বলে খ্যাত রাজ্যগুলিতে যায়, তাহলে বাংলাদেশের ট্রেড ‘অপারচুনিটি’ কমতে পারে কিন্তু এতে বাংলাদেশের দর কষাকষির ক্ষমতা বেড়ে যাবে৷ বাংলাদেশের জন্য আরেকটি সুযোগ তৈরি হবে৷ ‘ইনফর্মাল ট্রেড’ কমে গিয়ে ‘ফরমাল ট্রেড’ বাড়বে আর বাংলাদেশের আয়ের নতুন আরেকটি পথ খুলবে৷”
তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশ, চীন, ভারত ও মিয়ানমারের মধ্যে ‘ইকোনমিক করিডোর’ হচ্ছে৷ তাই এই কানেকটিভিটি শেষ পর্যন্ত মালয়েশিয়া এবং কোরিয়া পর্যন্ত পৌঁছাবে৷ এতে এই পুরো অঞ্চল একই যোগোযোগ ব্যবস্থার মধ্যে চলে আসবে৷ এটা সময়ের দাবি৷ বলা বাহুল্য, এটা বাংলাদেশের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করবে৷”
ড. হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘‘ইউরোপসহ বিশ্বের আরো অনেক জায়গায় প্রতিবেশীদের জন্য সীমান্ত খুলে দেয়া হচ্ছে৷ তাতে তাদের লাভই হচ্ছে৷ বিশ্বের এই ট্রেন্ডের বাইরে আমরা থাকতে পারি না৷” তবে তিনি মনে করেন, ‘‘এই সুযোগ আমরা কতটা কাজে লাগাতে পারব, তা নির্ভর করছে অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও বন্দরের উন্নয়নের উপর৷”
তার কথায়, ‘‘এই কানেকটিভিটি আরো আগে হওয়া উচিত ছিল৷ এর জন্য যা প্রয়োজন তা হলো রাজনৈতিক ঐক্যমত৷ আমাদের দেশে এ নিয়ে রাজনৈতিক ঐক্যমত কতটুকু আছে জানি না৷ তবে বিরোধিতা আপাতত দেখা যাচ্ছে না, যা ইতিবাচক৷”
বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতে যাওয়ার মোট ১৯টি স্থলবন্দর আছে৷ তবে আপাতত ছয়টি পথের কথা ভাবা হচ্ছে৷ এগুলো হলো পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা, লালমনিরহাটের বুড়িমারী, যশোরের বেনাপোল, সিলেটের তামাবিল, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া সীমান্ত৷ বাংলাদেশিরা ঢাকা-বাংলাবান্ধা ও ঢাকা-বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের মধ্য দিয়ে নেপাল এবং ঢাকা-বুড়িমারী ও ঢাকা-তামাবিল পথ দিয়ে ভুটানে যেতে পারবেন৷ এছাড়া পণ্য পরিবহনের জন্য বেনাপোল, আখাউড়া সীমান্তকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে৷
একইভাবে নেপাল ও ভুটানের যানবাহনও এ দুটি পথ ব্যবহার করে ঢাকা হয়ে চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত যাবে৷ শুধু তাই নয়, ভারতের যানবাহন বেনাপোল, আখাউড়া ও করিমগঞ্জ সীমান্ত ব্যবহার করে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন করবে৷ এ সবও ঢাকা হয়ে চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত যাবে৷ মাঝপথে যাত্রী বা পণ্য ওঠানো-নামানো যাবে না৷
ড. হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘‘চুক্তিটি পুরোপুরি কার্যকর হয়ে যখন যান চলাচল পুরোমাত্রায় শুরু হবে, তখন মানুষের মধ্যে আরো ইতিবাচক মনোভাব তৈরি হবে৷ নতুন বলে হয়ত কেউ কেউ এ চুক্তির বিরোধিতা করছেন৷ এ জন্য কিছুটা দায়ী মানসিকতা৷ কিন্তু বাস্তবে যখন দেখা যাবে যে ক্ষতিকর কিছু নেই, তখন তাঁরাই মনোভাব বদলাবে৷”
বাংলাদেশ সময়: ১৫:০১:৫৮ ৪৪৫ বার পঠিত