বঙ্গ নিউজ ডট কমঃ প্রস্তাবিত অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেল নিয়ে অস্থিরতায় রয়েছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। একই ইস্যুতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীরাও। নতুন স্কেলে গ্রেড কমিয়ে মর্যাদাহানি করা হয়েছে অভিযোগ উত্থাপন করে আন্দোলন করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। বেসরকারি শিক্ষকরা আন্দোলন করছেন নতুন স্কেলে নিজেদের অন্তর্ভুক্ত করার দাবিতে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র পে-স্কেল দাবিতে আজ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের নেতারা। দুপুর ১টায় এ বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নেতারা বলছেন, প্রস্তাবিত বেতন কাঠামোতে সিনিয়র সচিব ও পদায়িত সচিব নামে বিশেষ ধাপ সৃষ্টি করা হয়েছে। এতে আমলাদের বেতন-ভাতার দিক হতে সুবিধাভোগের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেকশন গ্রেড অধ্যাপকরা সচিবদের সমান বেতন পান। কিন্তু প্রস্তাবিত বেতন কাঠামোতে সিনিয়র অধ্যাপক তথা সিলেকশন গ্রেড প্রাপ্ত অধ্যাপকদের দুই ধাপ নিচে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে সিলেকশন গ্রেড বাদ দেওয়ার সুপারিশের মতো প্রস্তাবনাও রাখা হয়েছে। শিক্ষকদের দাবি, সিলেকশন গ্রেড অধ্যাপকদের বেতন-ভাতা, সুযোগ-সুবিধা ও মর্যাদা সিনিয়র সচিবদের মতোই হতে হবে। সিলেকশন গ্রেড অধ্যাপকদের পদমর্যাদা হবে সিনিয়র সচিবদের সমতুল্য। একইভাবে অধ্যাপকরা পদায়িত সচিবদের সমান মর্যাদা, বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা চান। পরবর্তী ধাপসমূহ যেমন সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষকদের বেতন কাঠামোও ক্রমানুসারে নির্ধারণ করতে হবে।ইতিমধ্যে এই দাবিতে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাই মানববন্ধন, ক্লাস বর্জন, অবস্থান ধর্মঘটসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন। তাদের মতে, যারা দেশের ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে শিক্ষাদান করেন, তারাই যদি অবহেলিত হন তবে শিক্ষাও অবহেলিতই থেকে যাবে। এই যুক্তিতে অবিলম্বে এ বেতন স্কেল বাতিল করে স্বতন্ত্র পে-স্কেল চালু করার দাবি জানান তারা।বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, শিক্ষকদের আমরা রাজনীতির আওতামুক্ত রাখতে চাই। নতুন পে-স্কেলে বেতন চালুর সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের স্বতন্ত্র পে-স্কেলে বেতন দিতে হবে। এর ব্যত্যয় হলে ফেডারেশনের নেতারা পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবে।বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, এটি সরকারবিরোধী কোনো কর্মসূচি নয়, কিংবা কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আন্দোলনও নয়। এই কর্মসূচি শুধু শিক্ষকদের ন্যায্য সম্মান ও স্বতন্ত্র বেতন স্কেল আদায়ের জন্য। চলতি মাসের মধ্যে শিক্ষকদের স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো প্রণয়নের ঘোষণা দেওয়ার দাবি জানান তিনি। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নীল দলের সাধারণ সম্পাদক মো. বেলাল উদ্দিন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। প্রস্তাবিত বেতন কাঠামোতে প্রতিটি ধাপে প্রায় দ্বিগুণ বেতন বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। সরকারের এ ধরনের জনমুখী বেতন কাঠামো প্রশংসিত। কিন্তু অবহেলিত থেকেছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। আমরা আশা করি, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমাজের জন্য স্বতন্ত্র পে-স্কেল ঘোষণা করে তিনি আমাদের মানসম্মত শিক্ষাদানে আরও উদ্বুদ্ধ করবেন।আন্দোলনে বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারীরাও : বেসরকারি শিক্ষক-কর্মকর্তাদের নতুন জাতীয় বেতন স্কেল কার্যকরসহ ২১ দফা আদায়ে আন্দোলন কর্মসূচির ডাক দিয়েছে বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীদের ১১টি সংগঠনের জোট ‘জাতীয় শিক্ষক কর্মচারী ফ্রন্ট’। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো ইতিমধ্যে তারাও কয়েক দফা সংবাদ সম্মেলন, সভা সমাবেশ এবং মানববন্ধন করেছেন।বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্য সচিব মো. শাহজাহান আলম সাজু বলেন, ১৯৯৭ সালের পে-স্কেলসহ ধারাবাহিকভাবে ২০০৫ ও ২০০৯ সালের পে-স্কেলে বেসরকারি শিক্ষকরাও অন্তর্ভুক্ত হয়েছিলেন। সর্বশেষ ২০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতাও পেয়েছি আমরা। আমরা আশা করছি এবারও আমরা নতুন পে-স্কেল পাব। কিন্তু সরকারের পক্ষ হতে কেউ বিষয়টি পরিষ্কার করেনি। এর ফলে সরকারবিরোধী শিক্ষক সংগঠনগুলো সুযোগ নিয়ে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে। আন্দোলনরত বেসরকারি শিক্ষকরা বলছেন, বর্তমানে বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারীরা সরকার থেকে শতভাগ বেতন ভাতা পেলেও বাড়িভাড়া মাত্র পাঁচশ টাকা, চিকিৎসা ভাতা তিনশ টাকা এবং বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট একশ বিশ টাকা পান- যা দিয়ে সামান্য বেতনভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীরা চরম মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অথচ, নতুন বেতন স্কেলে তার অন্তর্ভুক্তি নিয়ে কোনো মাথা ব্যথাই নেই সরকারের। জাতীয় বেতন স্কেলে বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের শর্তহীনভাবে স্কেলভুক্ত রাখতে বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন শিক্ষক নেতারা। কর্মচারী ইউনিয়নের নেতারা বলছেন, নতুন পে-স্কেল বাস্তবায়নের পর বাজারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি দেখা দেবে। তারা যে বেতন-ভাতা পান তাতে তখন আর সংসার চলবে না। এ কারণে তাদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধির বিকল্প নেই। জাতীয় শিক্ষক কর্মচারী ফ্রন্টের প্রধান সমন্বয়ক অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ বলেন, এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে আগে পে-স্কেলে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিলেন। পে-স্কেল কমিশনও ক্রমানুসারে বেসরকারি শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেছে। সরকারি শিক্ষক কর্মকর্তারা যেদিন থেকে নতুন স্কেলে বেতন পাবেন বেসরকারি শিক্ষক-কর্মকর্তাদেরও সেদিন থেকেই দিতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ৯:৪৯:৩৬ ৪৯১ বার পঠিত