বঙ্গনিউজ ডটকমঃ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের আওয়ামী লীগে যোগদানের ঘটনায় দলটির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা চরম ক্ষুব্ধ। প্রতিপক্ষকে দলে টেনে আওয়ামী লীগদলীয় সংসদ সদস্যরা খুশি হলেও তা মানতে পারছেন না মাঠের নেতারা। বিপরীত মতাদর্শের দলের নেতাকর্মীদের জায়গা দিয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করছেন তাঁরা।
সম্প্রতি প্রতিপক্ষ জোটের নেতাকর্মীদের জন্য দরজা খুলে দেয় আওয়ামী লীগ। গত তিন মাসে সারা দেশে বিএনপি-জামায়াতের ১০ হাজারের বেশি নেতাকর্মী আওয়ামী লীগে যোগ দেয়। নতুন দলে আসা এই নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে পছন্দ করে নয়, ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির জন্যই দলবদল করছে বলে অভিযোগ আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের। তাদের মতে, বিএনপি-জামায়াতের দলত্যাগী এসব নেতাকর্মীকে নিয়ে আওয়ামী লীগে অভ্যন্তরীণ কোন্দল বাড়বে। অনেক জায়গায় নতুনদের দৌরাত্ম্যে ত্যাগী নেতাকর্মীরা কোণঠাসা হয়ে পড়বে।
গতকাল সোমবার কালের কণ্ঠে ‘জামায়াত-বিএনপিকে দলে ভেড়াচ্ছে আওয়ামী লীগ’ শিরোনামে প্রতিবেদন ছাপা হওয়ার পর জয়পুরহাট জেলা যুবলীগের সভাপতি নাফিজ চৌধুরী উজ্জ্বল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে লেখেন, ‘আজ যারা আসছে, কাল তারা আমাদের নিজেদের মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি করে আমাদের ক্ষতি ছাড়া উপকার করবে না। তারা আসছে সুবিধা নিতে। কাল এরা আমাদের থাকবে না। এরা যাদের ছিল তাদেরই হয়ে যাবে। কিন্তু এই বুঝটা কে দেবে? তাই আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শধারী কর্মীরা একত্রিত থাকলেই ওরা আমাদের ক্ষতি করতে পারবে না।’
জয়পুরহাটের আক্কেলপুর থানা যুবলীগের কর্মী নীরেন দাস তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘শত্রু শত্রুই। তারা কখনো বন্ধু নয়।’ যেসব নেতা বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের আওয়ামী লীগে নিচ্ছেন তাঁদের উদ্দেশে তিনি লেখেন, ‘আমাদের কিছু লোভী নেতারা! আমি সেই লোভী নেতাদের উদ্দেশে বলছি, আপনাদের স্বার্থের জন্য আওয়ামী লীগের মতো দলের ক্ষতি করবেন না। আমাদের মহান জননেত্রী শেখ হাসিনা এত দুর্বল হয়ে পড়েননি যে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীদের দলে নিয়ে আওয়ামী লীগ চালাতে হবে।’
গত দুই মাসে চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিএনপি-জামায়াতের কয়েক শ নেতাকর্মী আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ায় ক্ষুব্ধ সেখানকার অনেক নেতাকর্মী। গত কয়েক বছরে এ এলাকার অনেক নেতাকর্মী বিএনপি-জামায়াতের হাতে নির্যাতিত হয়েছে। তাদের দলে নেওয়ার বিষয়ে নির্যাতনের শিকার জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় যাদের হাতে আমাদের নেতাকর্মীরা মার খেয়েছে, রক্ত দিয়েছে, তাদেরকেই এখন দলে নেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য তাঁর স্বার্থে এসব করছেন। কিন্তু পুরনো আওয়ামী লীগাররা এটি মন থেকে মানতে পারছে না। তারা দলের বিভিন্ন পর্যায়ে ক্ষোভ জানাচ্ছে; কিন্তু সংসদ সদস্যের সামনে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল ওদুদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাস্তবতায় অন্য দল থেকে লোক না আনলে আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করা সম্ভব হবে না। আমি দলকে বড় করার চেষ্টা থেকে অন্য দলের লোক নিচ্ছি। এ ক্ষেত্রে একসময় আমার সঙ্গে যারা বিএনপি করত এবং সুসম্পর্ক আছে, মূলত তাদেরই আওয়ামী লীগে নিচ্ছি। তবে নাশকতার মামলায় যারা অভিযুক্ত এমন কাউকে দলে নিচ্ছি না।’ তিনি বলেন, ‘যাঁদের দলে নিয়েছি তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েকজন স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধি আছেন। তাঁদের কিছু ভোট আছে। এতে আমরা লাভবান হব।’
নতুনদের দলে নেওয়ার ফলে পুরনোরা কোণঠাসা হয়ে পড়বে কি না- জানতে চাইলে আব্দুল ওদুদ বলেন, ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জে আওয়ামী লীগের পুরনো নেতারা বেশির ভাগই মানুষের কাছে যান না। যাঁরা মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবেন তাঁরা মূল্যায়ন পাবেন। যাঁরা রাখবেন না তাঁদের কিভাবে মানুষ মূল্যায়ন করবে?’
জানতে চাইলে রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ কোনো নিষিদ্ধ দল নয়। এখানে অনেকেই আসবে, এটাই স্বাভাবিক। যাদের দলে নেওয়া হচ্ছে তাদের নেতৃত্বে আনা হচ্ছে না। বর্তমান নেতৃত্বের অধীনেই তারা কাজ করবে। ফলে পুরনোরা মূল্যায়ন পাবে না, বিষয়টি এমন নয়।’
বাংলাদেশ সময়: ৫:৫৬:১৫ ৩৫২ বার পঠিত