বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপালের মধ্যে সড়ক পথে যাত্রীবাহী, ব্যক্তিগত ও পণ্যবাহী যান চলাচলে চুক্তি
বঙ্গনিউজ ডটকমঃ সোমবার ভুটানের রাজধানী থিম্পুতে চার দেশের সড়ক পরিবহনমন্ত্রীরা চুক্তিতে সই করেন, যাতে বাংলাদেশের পক্ষে ছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাছের বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বেলা ১২টার দিকে চার দেশের মন্ত্রীরা প্রতিবেশী চার দেশে সড়ক পরিবহনের একটি রূপরেখায় স্বাক্ষর করেন।”
এর আগে ‘বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপালের মধ্যে যাত্রী, ব্যক্তিগত ও পণ্যবাহী যান চলাচল নিয়ন্ত্রণের জন্য মোটরযান চুক্তি’ নিয়ে রোববার থিম্পুতে পরিবহন সচিব পর্যায়ের বৈঠক হয় বলেও জানান তিনি।
ভুটানের তথ্য ও যোগাযোগমন্ত্রী লিনোপো ডি এন ধুঙ্গিয়েল, ভারতের সড়ক পরিবহন, মহাসড়ক ও নৌপরিবহনমন্ত্রী নিতিন গড়করি এবং নেপালের ভৌত অবকাঠামো ও পরিবহনমন্ত্রী বিমলেন্দ্র নিধি চুক্তিতে সই করেন। অনুষ্ঠানে যোগ দেন এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়েনচাই ঝ্যাং।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের বলেন, “আজ আমরা আঞ্চলিক সংযোগের এক নতুন অধ্যায় শুরু করতে একত্রিত হয়েছি।”
চুক্তির পর এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, চার দেশের মধ্যে মোটরযান চলাচলের এই চুক্তিটি বর্তমানে দ্বিপক্ষীয় পর্যায়ে কার্যকর সব পরিবহন চুক্তি ও ব্যবস্থাগুলোর সম্পূরক হবে, যেগুলো চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী সব পক্ষ মেনে চলবে। এই চুক্তি বাস্তবায়নে কোনো জটিলতা দেখা দিলে ‘বিবিআইএন মোটরযান চলাচল চুক্তি’র বিধান অনুযায়ী তা নিষ্পত্তি করা হবে।
অক্টোবরের মধ্যে চুক্তির পরীক্ষামূলক বাস্তবায়ন এবং অগাস্টের মধ্যে প্রটোকলসহ চুক্তির আনুষ্ঠানিকতা শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে চূড়ান্ত বাস্তবায়নে জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসের কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়।
এই পরিকল্পনা অনুযায়ী জুলাইয়ের মধ্যে চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য দ্বিপক্ষীয় (ত্রিপক্ষীয়/চতুর্পক্ষীয়) চুক্তি/প্রটোকলের প্রস্তুতি, সেপ্টেম্বরের মধ্যে এসব চুক্তি/প্রটোকল নিয়ে আলোচনা ও অনুমোদন এবং ডিসেম্বরের মধ্যে অনুমোদিত চুক্তিগুলোর জন্য পূর্বশর্ত (তথ্য প্রযুক্তি ব্যবস্থা, অবকাঠামো, ট্র্যাকিং, নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা) স্থাপন করা হবে।
বিবৃতিতে বলা হয়, চার দেশের মধ্যে এই উদ্যোগের অধীনে উপ-আঞ্চলিক সংযোগ এবং বৃহত্তর ক্ষেত্রে মানুষে-মানুষে যোগাযোগ ও বাণিজ্যের ক্ষেত্র ও সুবিধাগুলো তুলে ধরতে অক্টোবরে বিবিআইএন ফ্রেন্ডশিপ মোটর র্যালি আয়োজনের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, এই কর্মপরিকল্পনা পর্যবেক্ষণে জাতীয় স্থল পরিবহন ত্বরান্বিতকরণ কমিটিগুলোর (নোডাল) কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং এর বাস্তবায়নের গতিতে কোনো সমস্যা উদ্ভূত হলে তা দ্রুত নজরে আনতে বলা হয়েছে।
চার দেশের মধ্যে আন্তঃসংযোগ ত্বরান্বিত করতে দক্ষিণ এশীয় উপ-আঞ্চলিক অর্থনৈতিক (সাসেক) কর্মসূচি বাস্তবায়নে এডিবির সহায়তা করছে বলে এতে উল্লেখ করা হয়।
গত ৮ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপালের মধ্যে যানবাহন চলাচলে ‘বিবিআইএন মোটর ভেহিকল অ্যাগ্রিমেন্ট (এমভিএ)’ সইয়ের প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়।
সেদিন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভুইঞা সাংবাদিকদের জানান, চুক্তির প্রস্তাবে চার দেশের সম্মতিতে ভবিষ্যতে এই সড়কপথে অন্য যে কোনো দেশের যুক্ত হওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে।
চুক্তির খসড়া অনুযায়ী, চার দেশের মধ্যে চলাচলে রুট পারমিট নিতে হবে। এক দেশ থেকে আরেক দেশে যাওয়ার সময় মাঝপথে কোনো যাত্রী বা মালামাল তোলা যাবে না।
যে দেশের উপর দিয়ে যানবাহন যাবে, সেই দেশের কর্তৃপক্ষ ইচ্ছা করলে তা ‘সার্চ’ ও ‘ইন্সপেকশন’ করতে পারবে। কোনো দেশে নিষিদ্ধ থাকা পণ্য সেদেশের উপর দিয়ে পরিবহন করা যাবে না বলেও চুক্তির খসড়ায় রয়েছে।
চুক্তির আওতায় যান চলাচলের জন্য সংশ্লিষ্ট দেশ নিজেদের নির্ধারিত হারে ‘ট্রানজিট ফি’ আদায় করবে বলে জানান তিনি।
তিন বছর পরপর এই চুক্তি নবায়ন হবে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “কোনো দেশ চাইলে ৬ মাসের নোটিশ দিয়ে চুক্তি থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিতে পাররে।”
১৫ জুন চুক্তি ও পরে প্রটোকল সই হওয়ার পর শিগগিরই চুক্তি অনুযায়ী যানবাহন চলাচল শুরু হবে বলে জানান তিনি।
এর আগে এক অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান, চুক্তি অনুযায়ী ইউরোপের আদলে এই চার দেশের মধ্যে ২০১৬ সাল মোটরযান চলাচল শুরু করা যাবে।
চুক্তি সই হওয়ার পর এর প্রটোকলে নিরাপত্তাসহ বিস্তারিত উল্লেখ থাকবে জানিয়ে কাদের, “প্রটোকল হতে কয়েক মাস লাগবে। আশা করছি, ২০১৬ সালে আমরা নতুন যাত্রা শুরু করতে পারব। যাতায়াতে ভিসা বা ইমিগ্রেশনে আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে করা হবে।”
বাংলাদেশ সময়: ১৮:১৫:১৬ ৪২৭ বার পঠিত