বঙ্গনিউজ ডটকমঃ বিএনপি এখন ‘জামায়াতনির্ভর’ দল হয়ে উঠেছে বলে এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বক্তব্য নাকচ করেছেন দলটির মুখপাত্রের দায়িত্বে থাকা আসাদুজ্জামান রিপন।শনিবার বিকালে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, “আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই, জাতীয়তাবাদী দল শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের রাজনীতি, তার দর্শন ও আদর্শের উপর ভিত্তি করেই পরিচালিত হয়। এটাকে জামায়াতনির্ভর দল যিনি বলেছেন, এটা তার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি- নিজস্ব মূল্যায়ন হতে পারে।”
আগের দিন এক অনুষ্ঠানে বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন মহাসচিব বি. চৌধুরী বলেন, বিএনপি এখন ‘জামায়াতনির্ভর’ দল হয়ে উঠেছে, আর এ কারণে ‘চারদিক থেকে’ চাপে রয়েছেন খালেদা জিয়া।
বিএনপির বর্তমান নেতৃত্বকে ‘বাঁচতে’ হলে আবার ‘জিয়ার রাজনীতিতে’ ফিরতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বর্তমানে বিকল্প ধারা বাংলাদেশের নেতৃত্বে থাকা বদরুদ্দোজা চৌধুরীর ওই বক্তব্য নাকচ করে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক রিপন বলেন, “এ ব্যাপারে আমাদের অবস্থান খুবই পরিষ্কার। বিএনপি সম্পূর্ণভাবে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের আদর্শ ও দর্শনের উপর পরিচালিত হচ্ছে। তার রাজনীতি হচ্ছে আমাদের দলের মূলনীতি। এই মূলনীতির উপর ভর করে বিএনপি রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রের জন্য অতন্দ্র প্রহরীর মতো ভূমিকা পালন করেছে, করছে ও ভবিষ্যতেও করবে।”
তিনি বলেন, “জিয়াউর রহমানের আদর্শ হচ্ছে পার্টির নীতি, এটাই বেইসলাইন। এ থেকে সরে আসার কোনো সুযোগ নেই।”
“প্রেসিডেন্ট জিয়ার আমলে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ছিল। বাস্তবতার প্রয়োজনে আমাদের বর্তমান পার্টি চেয়ারম্যান বেগম খালেদা জিয়া সংসদীয় শাসনব্যবস্থা ফিরিয়ে দিয়েছেন। তার মানে এই নয় যে, শহীদ জিয়াউর রহমানের রাজনীতি থেকে উনি সরে যেতে চান।”
জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গ ছাড়ার বিষয়ে আন্তর্জাতিক চাপ আছে কি না জানতে চাইলে এই বিএনপি নেতা বলেন, “আমি এরকম কথা শুনি নাই।”
জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির জোট নিয়ে তিনি বলেন, “জামায়াতের সঙ্গে আমাদের জোট হচ্ছে- গণতন্ত্রের জন্য, ভোটের জন্য। আমাদের দলের রাজনীতি, জামায়াতের রাজনীতি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপিসহ (আন্দালিব রহমান পার্থ) বিভিন্ন দলের রাজনীতি ও দর্শন ভিন্ন। আমাদের জোটে সাম্যবাদী দলও আছে। তার অর্থ কি আমরা সবাই সমাজতন্ত্রী হয়ে যাচ্ছি। জোটের দলগুলো তারা তাদের নিজস্ব রাজনীতি করছে। আমরা আমাদের রাজনীতি করছি। এখানে ছেড়ে দেওয়া, রাখা বা ধরার বিষয় নয়।”
শুক্রবার রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সরকারের মন্ত্রী একেএম মাঈদুল ইসলাম মুকুলের বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে এসে সাবেক চার দলীয় জোট সরকারের রাষ্ট্রপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, বিএনপি দুটি পর্যায় পেরিয়ে এখন তৃতীয় ধাপে রয়েছে। এর মধ্যে প্রথম ধাপটি ছিল ‘জিয়াউর রহমানের রাজনীতি’।
“এরপর আসল খালেদা জিয়ার রাজনীতি। মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। এখন তৃতীয় ধাপে আছে, জামায়াতনির্ভর খালেদা জিয়ার রাজনীতি।
“এই ধাপটি বেশিদিন থাকবে বলে মনে হয় না। চতুর্দিকে চাপ সৃষ্টি হয়েছে। আন্তর্জাতিক চাপ একটু বেশি। তাই চতুর্থ ধাপ আসতে বাধ্য, যখন আবার ঘুরে ফিরে জিয়াউর রহমানের রাজনীতিতে ফিরে আসতে হবে।”
সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সামরিক বাহিনীতে থাকা অবস্থায় ১৯৭৮ সালে তার তত্ত্বাবধানে বিএনপির প্রতিষ্ঠা হয়। সে সময় দলের মহাসচিব ছিলেন বদরুদ্দোজা চৌধুরী।
সংবাদ ব্রিফিংয়ে দেশের ব্যাংকিং খাত নিয়েও কথা বলেন বিএনপি নেতা আসাদুজ্জামান রিপন।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো থেকে টাকা ‘লুটপাট’ চলছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “সোনালী, জনতা ব্যাংকের মতো রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো এই সরকারের আমলে হরিলুটের ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। গত ৭ বছরে আমাদের ব্যাংকিং খাত ঝাঝরা অর্থাৎ ফোকলা করে দেওয়া হয়েছে।
“অর্থমন্ত্রী এসব দেখেও চোখ বুঝে সহ্য করছেন। সাংবাদিকরা যখন দৃষ্টি আকর্ষণ করেন, তখন তিনি বলেন, ওরা ডাকাত। আমার প্রশ্ন হচ্ছে- ওইসব হরিলুটকারী ডাকাতদের ধরার দায়িত্ব কার? ওদের ধরার দায়িত্ব অর্থমন্ত্রীর। এজন্যই আমি বলছি, অর্থমন্ত্রী ‘বোগাস’।
“একদিকে অর্থমন্ত্রী তাদের (হরিলুটকারীদের) ডাকাত বলছেন, অন্যদিকে ওদের ধরতে পারছেন না। সমস্যাটা কোথায়? আমরা সুস্পষ্টভাবে তার কাছে এর ব্যাখ্যা দাবি করছি।”
সংবাদ ব্রিফিংয়ে অন্যদের মধ্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব, আবদুস সালাম আজাদ, আবদুল লতিফ জনি, আসাদুল করীম শাহিন, শামসুল আলম তোফা প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩:১৮:১১ ২৫৪ বার পঠিত