বঙ্গনিউজ ডটকমঃ বাজেট-টাজেট বুঝি না। বাজার ভালো থাকুক, আমরা নিরাপদে বিনিয়োগ করি। এটাই আমরা চাই।’
২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে এমনই মন্তব্য করেছেন মাহেনুর চৌধুরী নামের এক বিনিয়োগকারী।
গতকাল সোমবার দুপুরে রাজধানীর মতিঝিলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সামনে কথা হয় মাহেনুরের সঙ্গে। এ সময় আরও বেশ কয়েকজন বিনিয়োগকারী বাজেট নিয়ে প্রতিবেদকের কাছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানান। তাঁদের কেউ ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন, কেউবা করেছেন নেতিবাচক মন্তব্য। আবার কেউ এটা নিয়ে ভাবতেই চান না। বাজার ভালো থাকলেই খুশি তাঁরা। যদিও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সংবাদ সম্মেলন করে প্রস্তাবিত বাজেটকে পুঁজিবাজারবান্ধব বলছেন।মাহেনুর বলেন, বাজেট আসলে বিনিয়োগকারীদের অনেক আশ্বাস দেওয়া হয়। কিন্তু বাজেটের পর দেখা যায়, যা তা-ই। দরপতন শুরু হলে কোনো বাজেটে কিংবা প্রণোদনায় আর কাজ হয় না। তাঁর মতে, কিছু লোকের হাতে বাজার জিম্মি হয়ে পড়েছে। তারা যা চায়, তা-ই হয়।
আজিজুল হক কাজল নামের আরেক বিনিয়োগকারী বলেন, শেয়ারবাজারে ওঠা-নামা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বাজেটকে ঘিরে কোনো গোষ্ঠী যাতে ফায়দা লুটতে না পারে, এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষকে সজাগ থাকতে হবে।
বিনিয়োগকারী আলাউদ্দিন সবুজের মতে, প্রস্তাবিত বাজেটে কালো টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের বিষয়ে কিছুই বলা হয়নি। পুঁজিবাজারে এ সুযোগ থাকলে বাজারের জন্য ভালো হতো।
আরেক বিনিয়োগকারী মিজানুর রহমান অবশ্য বাজেট নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তাঁর মতে, বাজেটে পুঁজিবাজারে যেসব সুযোগ দেওয়া হয়েছে, তা বাজারের জন্য ইতিবাচক হবে। আজাদ আহসান বলেন, বিনিয়োগকারীরা বাজারের প্রাণ। কিন্তু এই বিনিয়োগকারীরা ঋণের সুদে ভারে জর্জরিত। বাজেটে বিনিয়োগকারীদের সুদ মওকুফের ঘোষণা থাকলে ভালো হতো।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজান উর রশিদ চৌধুরী বলেন, বাজেটে পুঁজিবাজার নিয়ে যে ঘোষণা এসেছে, তা সবই প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ও কোম্পানির জন্য, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য নয়। তাঁর মতে, ২০১০ সালের পর থেকে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা মার্জিন ঋণে জর্জরিত। সবাই মার্জিন ঋণের সুদ বয়ে বেড়াচ্ছেন। এ অবস্থায় অধিকাংশ বিনিয়োগকারী নতুন করে বাজারে সক্রিয় হতে পারছেন না। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য ২০১১ থেকে ২০১৫ এর জুন পর্যন্ত সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মার্জিন ঋণের সুদ মওকুফের দাবি জানান তিনি। এটা করা হলে বিনিয়োগকারীরা বাজারে ফিরতে পারবেন বলেও মনে করেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে পুঁজিবাজার নিয়ে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, এসব বাস্তবায়িত হলে দীর্ঘ মেয়াদের পুঁজিবাজারের জন্য ভালো ফল হবে।
প্রস্তাবিত বাজেটে বিনিয়োগকারীদের করমুক্ত লভ্যাংশ আয় সীমা ২০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। তালিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট কর আড়াই শতাংশ কমানো হয়েছে। এ ছাড়া শেয়ারবাজার নিয়ে সরকারের ইতিবাচক মনোভাবের কথা অর্থমন্ত্রী তাঁর বাজেট বক্তব্যে উল্লেখ করেছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, বাজেটে তালিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট কর কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এটা বাস্তবায়িত হলে কোম্পানিগুলোর সক্ষমতা বাড়বে। ডিভিডেন্ট দেওয়ার ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলো আরও বেশি লভ্যাংশ দিতে পারবে। এ ছাড়া বাজেটের আরও কিছু প্রস্তাবকে বাজারের জন্য ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৮:০০:৩৮ ৪০৮ বার পঠিত