বঙ্গনিউ ডটকমঃ বাজেটে করপোরেট ট্যাক্স কমানোসহ ‘একগুচ্ছ প্রণোদনা’ ঘোষণা করার পরও পুঁজিবাজারে সূচক পতনের কোনো যুক্তি খুঁজে পাচ্ছেন না বাজার বিশ্লেষকরা।নতুন অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার পর দ্বিতীয় কর্মদিবস সোমবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক সূচক ডিএসইএক্স ৭৫ পয়েন্ট এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক সিএএসপিআই কমেছে ২৫৮ পয়েন্ট। দরপতন হয়েছে দুই বাজারেই।
শেয়ার বাজার চাঙ্গা করতে সরকারের নেওয়া উদ্যোগের কোনো ইতিবাচক প্রভাব না দেখে হতাশা প্রকাশ করেছেন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা।
বাজারের এ আচরণের পেছনে কোনো ‘কারসাজি’ আছে কি-না তাও খতিয়ে দেখা উচিৎ বলে মনে করছেন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম।
তিনি বলেন, “বাজেটে পুঁজিবাজার নিয়ে ভালোই সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এরপরও কেন যে পতন হচ্ছে বুঝতে পারছি না।”
গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব দেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। টেলিকম ও তামাক ছাড়া সব কোম্পানির করপোরেট কর ২ দশমিক ৫০ শতাংশ কমানোর ঘোষণা দেন তিনি।
বিনিয়োগকারীরা এতদিন কোম্পানির লভ্যাংশ থেকে যে আয় করতেন, তা ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত করমুক্ত ছিল। এই সীমা বাড়িয়ে ২৫ হাজার টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছেন মুহিত।
বাজেট বক্তৃতায় তিনি বলেন, “বিগত চার বছরের কার্যক্রমের ফলে পুঁজিবাজার এখন একটি ভালো অবস্থানে পৌঁছেছে। পুঁজিবাজার সম্প্রসারণের লক্ষ্যে আরও কোম্পানিকে আকৃষ্ট করতে চাই।”
বাজেট প্রস্তাবের দিন বৃহস্পতিবার বিনিয়োগকারীদের দোলাচলের মধ্যে ডিএসইএক্স ৪ পয়েন্ট বাড়ে, লেনদেন হয় ৪৯৯ কোটি টাকার শেয়ার। এরপর প্রথম কার্যদিবস রোববার ডিএসইএক্স ২৬ পয়েন্ট বাড়ে। লেনদেন হয় ৬৪৮ কোটি টাকার শেয়ার।
কিন্তু সোমবার দুই বাজারই হেঁটেছে উল্টো পথে। ঢাকায় ডিএসইএক্স ৭৫ পয়েন্ট কমে ৪ হাজার ৫৪২ পয়েন্ট হয়েছে। আর চট্টগ্রামে সিএএসপিআই ২৫৮ পয়েন্ট কমে হয়েছে ১৩ হাজার ৯৭৮ পয়েন্টে।
অথচ টানা কয়েক মাসের মন্দা দশা কাটিয়ে মে মাসের শুরু থেকে পুঁজিবাজারে সুবাতাস বইতে শুরু করেছিল। বাজেটের আগে আগে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ৪ হাজার ৭০০ পয়েন্টের কাছাকাছি উঠেছিল, লেনদেন এক হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছিল।
দেলোয়ার হোসেন নামের এক বিনিয়োগকারী বলেন, “ভেবেছিলাম বাজেটের পর বাজার ভালো হবে। ২০০৯- ২০১০ সালের ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নেব। কিন্তু একি হল…।”
সোমবার ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ৭৩ শতাংশ কোম্পানির দরপতন হয়েছে। লেনদেনে থাকা ৩১৮টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৬৫টির, কমেছে ২৩২টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২১টি শেয়ারের দর।
ঢাকার বাজারে ৫৮৬ কোটি ৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে এদিন; যা আগের দিনের তুলনায় ৬২ কোটি ২৭ লাখ টাকা বা ১০ শতাংশ কম।
টাকার পরিমাণে ডিএসইতে লেনদেনের শীর্ষে থাকা দশ কোম্পানি হল- খুলনা পাওয়ার কোম্পানি, বেক্সিমকো, সামিট পাওয়ার, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ, লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট, বেক্সিমকো ফার্মা, ইউপিজিডিসিএল, এএফসি অ্যাগ্রো ও বাংলাদেশ সাব মেরিন কেবল কোম্পানি।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে এদিন ৮৩ কোটি টাকার শেয়ার হাতবদল হয়েছে, যা আগের দিনের চেয়ে সাত কোটি টাকা বেশি। তবে লেনদেনে থাকা ২৪৩টি কোম্পানির শেয়ারের মধ্যে ১৮৯টিরই দর কমেছে। বেড়েছে ৩২টির, অপরিবর্তিত রয়েছে ২২টির দর।
বাংলাদেশ সময়: ১০:৫৭:২৭ ৩৩৭ বার পঠিত