বঙ্গনিউজ ডটকমঃ কিশোরগঞ্জের ‘রাজাকার’ পলাতক সৈয়দ মো. হাসান আলীর যুদ্ধাপরাধ মামলার রায় জানা যাবে মঙ্গলবার।একাত্তরে কিশোরগঞ্জে ২৪ জনকে হত্যা, ১২ জনকে অপহরণ ও আটক এবং ১২৫টি ঘরে লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগের ছয়টি অভিযোগ রয়েছে হাসান আলী ওরফে হাছেন আলীর বিরুদ্ধে।
বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল-১ সোমবার রায় ঘোষণার এই দিন ঠিক করে দেয়। এর আগে দুই পক্ষের যুক্তিতর্কের শুনানি শেষে গত ২০ এপ্রিল মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখা হয়।
২০১০ সালের ২৫ মার্চ ট্রাইব্যুনাল গঠনের মধ্য দিয়ে যুদ্ধাপরাধের বহু প্রতীক্ষিত বিচার শুরুর পর এটি হবে উনবিংশতম রায়।
গতবছর ১১ নভেম্বর হাসান আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এ মামলার বিচার কাজ শুরু হয়। আসামির অনুপস্থিতিতেই এ মামলার কার্যক্রম চলে।
ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর আবুল কালাম আজাদ গতবছর ২১ অগাস্ট হাসান আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিল করেন। ২৪ আগস্ট ট্রাইব্যুনাল তা আমলে নেয়।
পরোয়ানা জারির পরও পুলিশ হাসান আলীকে গ্রেপ্তার করতে না পারায় ট্রাইব্যুনালের আদেশে তাকে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়ে দুটি জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞাপন দেয় প্রসিকিউশন। তাতেও তিনি হাজির না হওয়ায় বিচারক আসামির অনুপস্থিতিতেই বিচারিক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে বলেন।
আসামির পক্ষে মামলা লড়ার জন্য রাষ্ট্রীয় খরচে আব্দুস শুকুর খানকে আইনজীবী নিয়োগ দেয় ট্রাইব্যুনাল।
হাসান আলীর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগে বলা হয়, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় কিশোরগঞ্জের তাড়াইল থানার রাজাকার কমান্ডার ছিলেন তিনি। ওই এলাকায় তিনি পরিচিত ছিলেন ‘রাজাকারের দারোগা’ ও ‘রাজাকার ওসি’ হিসেবে।
সৈয়দ হাসান আলীর বাবা সৈয়দ মুসলেহ উদ্দিন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান এবং কিশোরগঞ্জ মহকুমা শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। বাবার আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে অখণ্ড পাকিস্তানের ধারণা মাথায় নিয়ে তিনি রাজাকার বাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
১৯৭১ সালের ২৩ এপ্রিল পাকিস্তানি বাহিনী কিশোরগঞ্জের তাড়াইল থানা সদর দখল করে ক্যাম্প বসায়। হাসান আলী তাদের সব ধরনের সহযোগিতা দেন। পরে তিনি কিশোরগঞ্জ মহকুমার তাড়াইল থানায় রাজাকার কমান্ডার হিসেবে নিয়োজিত হন।
তদন্ত সংস্থা বলছে, হাসান আলী তার সহযোগীদের নিয়ে তাড়াইল থানার বিভিন্ন এলাকা এবং কিশোরগঞ্জে নির্যাতন, হত্যা, গণহত্যা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, জোর করে অর্থ আদায় ও ধর্মান্তরিত করার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ ঘটান। তার নির্দেশেই তাড়াইলে হত্যাকাণ্ডগুলো সংঘটিত হয়।
এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের সময় হিন্দু ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বাড়িঘর লুটপাট ও অগ্নিসংযোগেও তিনি সরাসরি জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ এনেছে প্রসিকিউশন।
প্রসিকিউটর আবুল কালাম আজাদ জানান, সে সময় হাসান আলী থাকতেন বর্তমান ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মাছিহাতা গ্রামে।
ছয় অভিযোগ
অভিযোগ ১: একাত্তরের ২৭ এপ্রিল হাসান আলীর নির্দেশে তাড়াইল থানাধীন সাচাইল গ্রামের পূর্বপাড়ার হাছান আহমদ ওরফে হাচু ব্যাপারীর বসতবাড়ির সাতটি ঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা।
অভিযোগ ২: মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ২৩ অগাস্ট হাসান আলীর নেতৃত্বে রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা তাড়াইল থানাধীন কোনাভাওয়াল গ্রামের শহীদ তোফাজ্জল হোসেন ভূঁইয়া ওরফে লালু ভূঁইয়াকে হত্যা করে দুটি ঘরে লুটপাট চালানো হয় এবং আরও দুজনকে অপহরণ ও আটক করা হয়।
অভিযোগ ৩: একাত্তরের ৯ সেপ্টেম্বর তাড়াইল থানার শিমুলহাটি গ্রামের পালপাড়ায় অক্রুর পালসহ ১২ জনকে হত্যা এবং ১০টি ঘরে লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ করে হাসান আলীর লোকজন। ওই গ্রামের পুরুষদের ধরে লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করা হয়।
অভিযোগ ৪: একাত্তরের ২৭ সেপ্টেম্বর তাড়াইল থানাধীন ভোরগাঁও গ্রামের বেলংকা রোডে সতীশ ঘোষসহ ৮ জনকে হত্যা ও ১০ জনকে অপহরণ এবং এবং ২৫ হাজার টাকার মালামাল লুটপাটে নেতৃত্ব দেন হাসান আলী।
অভিযোগ ৫: মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ৮ অক্টোবর তাড়াইল থানাধীন আড়াইউড়া গ্রামের কামিনী কুমার ঘোষের বসতবাড়ী থেকে কামিনী কুমার ঘোষ ও জীবন চক্রবর্তীকে অপহরণের পরে হত্যা এবং ছয়টি ঘরে লুটপাট চালায় হাসান আলীর লোকজন।
অভিযোগ ৬: একাত্তরের ১১ ডিসেম্বর হাসান আলীর নেতৃত্বে তাড়াইল থানাধীন সাচাইল গ্রামের পশ্চিমপাড়ায় রাশিদ আলী ব্যাপারীকে হত্যা এবং একশ ঘরে লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১০:৩০:৩১ ৩০০ বার পঠিত