বঙ্গনিউজ ডটকমঃ আন্তর্জাতিক নিয়মের মধ্যে ভারতের সঙ্গে কানেক্টিভিটিতে বিএনপির কোনো আপত্তি নেই বলে জানিয়েছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আসম হান্নান শাহ।
শনিবার এক অনুষ্ঠানে তিনি দাবি করেন, ট্রানজিটকেই ‘কানেক্টিভিটি’ নামে উপস্থাপন করা হচ্ছে।হান্নান শাহ বলেন, “আওয়ামী লীগ একসময়ে বলেছিল ট্রানজিট দিলে বাংলাদেশ একেবারে নাকি সিঙ্গাপুর হয়ে যাবে। বাস্তবে দেখা গেলো- ভারতকে সীমিতভাবে ট্রানজিট দেওয়া হলো তার বিপরীতে আমরা এক পয়সাও ট্যাক্স পাই নাই।
“ভারত ভালো করেই জানে বাংলাদেশের মানুষ ট্রানজিটকে ভালোভাবে নিচ্ছে না। তাই এখন এর নাম দেওয়া হয়েছে কানেক্টিভিটি। এতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। আপত্তি এক জায়গায়। আমার রাস্তা ব্যবহার করবেন, নদী ব্যবহার করবেন, নদীর বন্দর ব্যবহার করবেন। আমরা যখন আপনার দেশে যাই, আমার কাছ থেকে পয়সাটা নেন। আপনার দেশে বিমানবন্দরে যাই, ফিসটা আপনারা নেন। তাহলে আমরা কী পাপ করলাম? এমনিতেই আমরা গরীব দেশ। আপনারা পরাশক্তি।
“বাংলাদেশের সঙ্গে ট্রানজিট বা কানেক্টিভিটি করতে হলে আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুসারে যথাযথ ট্যাক্স দিতে হবে।”
জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী যুবদলের উদ্যোগে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৩৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়।
বক্তব্যে নরেন্দ্র মোদীর ঢাকায় আগমনকে স্বাগত জানিয়ে হান্নান শাহ বলেন, “আশা করছি তিনি বাংলাদেশে গণতন্ত্রের কথা বলবেন।”
সকাল সোয়া ১০টায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ভারতীয় বিমান বাহিনীর বিশেষ উড়োজাহাজ ‘রাজদূতে’ করে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে পৌঁছান। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে অভ্যর্থনা জানান।
ভারতের সঙ্গে সুম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে দলের অবস্থান পরিস্কার করে হান্নান শাহ বলেন, “বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। ভারত একটি বিশাল গণতান্ত্রিক স্বাধীন রাষ্ট্র। সেখানে গণতান্ত্রিক শাসন কায়েম আছে। আমরা আশা করি, দুই দেশের মধ্যে সুসম্পর্ক সুদৃঢ়ভাবে র্প্রতিষ্ঠিত হবে। দেশের স্বার্থ রক্ষা করা হবে।”
তিনি অভিযোগ করেন, বিগত কংগ্রেস সরকার বাংলাদেশের একটি দলকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন প্রভাবিত করেছিল।
সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, “আমি যতটুকু পড়েছি, ভারতের সংবিধানে একটা ধারা আছে, পৃথিবীর যেকোনো দেশে ভারত নিজের স্বার্থেই ওই দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলন বা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা যাতে আরো দৃঢ় হয়, সেজন্য কাজ করবে।
“দুখজনক হলেও সত্য, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নিবার্চনের সময় ভারতের যেই সরকার ছিল, তারা সেটি করেনি। তারা বাংলাদেশের মানুষের চিন্তা-চেতনার বাইরে গিযে এমন একটি দলকে সমর্থন দিল, যারা জাতীয় নির্বাচনে অর্ধেকেরও বেশি আসন বিনা ভোটে নির্বাচিত হওয়ার ঘোষণা দিয়ে দিল।”
ফারাক্কায় পানি বণ্টন সমস্যা সমাধানে জিয়াউর রহমানের সঙ্গে দরকাষাকষির বিষয়গুলো তুলে ধরে তিনি বলেন, “জিয়াউর রহমান প্রধান সমস্যা পানি সমস্যার সমাধান করেছিলেন। উনি ভারতের ফারাক্কা বাঁধের সৃষ্ট পানি সমস্যা দূর করতে এমন ব্যবস্থা নিলেন- রাজনৈতিক ও সামরিক। ওই সময়ে উনাকে (জিয়া) রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করেছেন মওলানা ভাসানী, উনার লং মার্চের মাধ্যমে।”
আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে হান্নান শাহ বলেন, “৭২ সালে যারা ক্ষমতায় ছিল। সেই সময়ে ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি হলো। দৌড়ে গিয়ে বাংলাদেশ তাদের অংশটুকু পুরণ করে দিয়ে আসলেন। ভারতের অংশটুকু আজ পর্যন্ত মীমাংসা হয় নাই। এমন আমি শত শত উদাহরণ দিতে পারব।”
সীমান্ত চুক্তির বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাফল্যের দাবি সম্পর্কে তিনি বলেন, “প্রচার-প্রচারণায় ক্ষমতাসীনরা এগিয়ে। তারা বললো সীমান্ত চুক্তি ভারতের লোকসভায় পাস নাকি তাদের বৈদেশিক নীতির তৎপরতার ফসল। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। সীমান্ত চুক্তি এখনও হয় নাই। হয়েছে কী? ভারত তার সীমানা নির্ধারণের জন্য একটা বিল তাদের পার্লামেন্টে পাস করেছে। এটা ভারতের নিজস্ব বিষয়। এটা ভারত-বাংলাদেশের বিষয় নয়।”
জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন, যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি আবদুস সালাম আজাদ, কেন্দ্রীয় নেতা এলবার্ট পি কস্টা, ফজলুর রহমান, আবদুল খালেক প্রমুখ বক্তব্য দেন।
বাংলাদেশ সময়: ১১:২৫:২৬ ২৭২ বার পঠিত