বঙ্গনিউজ ডটকমঃ নতুন অর্থবছরের বাজেটে চিনি আমদানির ওপর আমদানি শুল্ক আরোপের প্রস্তাব ‘ভুল করে’ ছাপা হয়েছে বলে জানালেন এনবিআর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান।শুক্রবার অর্থমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বাজেটপরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
আগের দিন জাতীয় সংসদে করজালের আওতা বাড়িয়ে বড় রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য নিয়ে প্রায় তিন লাখ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব দেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
মুহিতের বাজেট বক্তৃতায় চিনির ওপর শুল্ক বাড়ানোর বিষয়ে কিছু না থাকলেও মুদ্রিত বক্তৃতার শেষে একটি সারণিতে প্রতি মেট্রিক টন অপরিশোধিত চিনির আমদানি শুল্ক ২ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪ হাজার টাকা এবং পরিশোধিত চিনিতে ৪ হাজার ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮ হাজার টাকা করার কথা বলা হয়।
এই শুল্কহার আগামী ১ অগাস্ট থেকে কার্যকর হবে বলে সারণীতে উল্লেখ করা হয়।
শুক্রবার সকালে সিপিডির এক বাজেট বিশ্লেষণেও চিনির ওপর শুল্ক আরোপের এ প্রস্তাবের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়।
এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে দৃশ্যত বিরক্ত মুহিত বলেন,”না চিনি নিয়ে আমি বাজেট বক্তৃতায় কোনো কিছু বলিনি। অযথা কেন এসব বলছেন।”
কিন্তু বাজেট বক্তৃতায় বিষয়টি থাকায় কয়েকজন সাংবাদিক বিষয়টি নিয়ে বারবার জানতে চান। দ্বিতীয় প্রশ্ন কর্তাকে অর্থমন্ত্রী অনেকটা ধমক দিয়েই বসিয়ে দেন।
এরপর আরেকজন সাংবাদিক বাজেট বক্তৃতার মুদ্রিত পুস্তিকার ১২৪ পৃষ্ঠায় চিনি আমদানিতে শুল্ক বাড়ানোর বিষয়টি তুলে ধরে মন্ত্রীকে বলেন, “তাহলে আপনার বক্তৃতায় কেন এটি আছে।”
এরপর অর্থমন্ত্রী, এনাবিআরের চেয়ারম্যানসহ উপস্থিত অন্যরাও বিষয়টি দেখেন। মুহিত তার পেছনে বসা এনবিআর চেয়ারম্যানকে উদ্দেশ্য করে বলেন,”ইট শুড নট বি, হাউ ফানি!”
এরপর নজিবুর রহমান বলেন, “এই বক্তৃতা প্রস্তুতে সাচিবিক সহায়তা দিয়েছে এনবিআর।
রাজনৈতিক নির্দেশনা ছিল চিনির বিষয়টি বক্তৃতায় থাকবে না। কিন্তু পরিশিষ্টের এই ছকটি আগে করা হয়েছে। যে কারণে ভুলে থেকে গেছে।
“তবে মূল বিষয় হচ্ছে চিনি আমদানিতে শুল্ক বাড়ানো হয়নি”, বলেন নজিবুর।
এনবিআর চেয়ারম্যান জানান, সংসদ সচিবালয়ের সঙ্গে কথা বলে এনবিআর এর সংশোধনী দেবে। বাজেট পাসের আগে এটি ঠিক করা হবে। বাজেট পাশের সময় অর্থবিলে বিষয়টি আর থাকবে না।
প্রস্তাবিত বাজেটে ন্যূনতম কর বাড়ানোর প্রস্তাবেও সংশোধনী আনা হবে বলে জানান মুহিত।
বাজেটে ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের করমুক্ত আয়ের সীমা ৩০ হাজার টাকা বাড়িয়ে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং ন্যূনতম কর বাড়িয়ে চার হাজার টাকা করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
বর্তমানে ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের করমুক্ত আয়ের সীমা ২ লাখ ২০ হাজার টাকা। আর সিটি করপোরেশন, জেলা সদরের পৌরসভা এবং অন্যান্য এলাকার করদাতাদের জন্য যথাক্রমে ৩ হাজার, ২ হাজার এবং ১ হাজার টাকা ন্যূনতম কর নির্ধারিত ছিল।
বাজেট বক্তৃতায় মুহিত বলেন, “আয়কর একটি সার্বজনীন কর, যা বাংলাদেশে অঞ্চল নির্বিশেষে সমহারে গ্রহণযোগ্য। ফলে বিদ্যমান অঞ্চলভিত্তিক ন্যূনতম কর হার প্রয়োগের পরিবর্তে এ সকল করদাতাদের অঞ্চলভিত্তিক অবস্থান নির্বিশেষে ন্যূনতম করের হার ৪ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করছি।”
সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রীর কাছে জানতে চাওয়া হয়, প্রস্তাবে সিটি করপোরেশনের নাগরিকের জন্য এক হাজার আর গ্রামের নাগরিকের জন্য তিন হাজার টাকা কর বাড়ানোর প্রস্তাব ‘সুষম’ হয়েছে কি না।
জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, “এটি সংশোধন করা হবে। সিটি করপোরেশন আলাদা থাকবে, আর বাকিদের এক হবে। আগামী কেবিনেটে এটা ঠিক করা হবে।”
এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান এ সময় বলেন, “অনেক সিটি করপোরেশনের বাসিন্দা নিজেকে গ্রামের লোক বলে চালিয়ে দেয়। এ কারণে এমন করা হয়েছে।”
বাংলাদেশ সময়: ১২:০৯:১৯ ৩৫৪ বার পঠিত