বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পড়তে বিয়ে। শুরু করা হয় না ঠিকঠাক সংসারও। করলেও পড়তে হয় নানা সমস্যায়। কী করে সামলাবেন দুই জীবন। ক্যারিয়ারে কি এর কোনো প্রভাব পড়ে?
একজন এসেছেন যশোর থেকে। আরেকজন কুমিল্লা। ভর্তি হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তা-ও আবার একই বিভাগে। তারপর গ্রুপ স্টাডি, ক্লাস অ্যাসাইনমেন্ট থেকে শুরু করে ক্লাস না থাকলে ঘুরতে যাওয়া। কখনো প্রয়োজনে, কখনো অপ্রয়োজনে। পারস্পরিক এই নির্ভরতা থেকে সহপাঠী হলেন বন্ধু।
বন্ধু থেকে ভালো লাগার মানুষ। এরপর বিয়ে। এটি আশফাক ও নায়লার গল্প। বর্তমানে তাঁরা তৃতীয় বর্ষে পড়েন। মূলত নায়লার পারিবারিক চাপেই বিয়েটা হয়। বিয়ে হলো বটে। কিন্তু সংসার শুরু করা হলো না। সেই আগের মতো আবার যে যাঁর হলে। কারণ, নিজেরা বাসা নিয়ে সংসার পাতবেন, সে রকম আয়-রোজগার নেই। তাই তাঁদের এখন একটাই লক্ষ্য, অনার্স পাস করে দুজনে ভালো কোনো কাজে যোগ দেবেন। তারপর দুজন মিলে সংসার বাঁধা। যেন এখনকার দুঃখ-কষ্টগুলো সব হাওয়ায় উড়ে যায়।
নানা পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া একটি ছেলে বা একটি মেয়েকে হয়তো সময়ের আগেই বিয়ে করতে হয়। তখন বিয়ের পরে যে স্বাভাবিক বৈবাহিক জীবনযাপন বা জীবনযাত্রা থাকার কথা, তা হয়ে ওঠে না। সেই জীবনটা কেমন বা চারপাশের মানুষগুলো সেই জীবনে কতটুকু প্রভাব রাখতে পারে বা আদৌ তারা কোনো প্রভাব রাখে কি না, এসব জানতে আমরা কথা বলেছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শাহ এহসান হাবীবের সঙ্গে। তিনি মনে করেন, এই ধরনের সম্পর্কে জড়িয়ে গেলে অনেক সময় পরিস্থিতির চাপে আগে বিয়ে করতে হয়। বিয়ে করলেও জীবনযাত্রা অনেক সময় আগের মতোই থেকে যায়। এ সময়টায় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বেশ মানসিক চাপ দেখা দেয়।
পড়াশোনা চলাকালে বিয়ে করলে স্বামী-স্ত্রীর বোঝাপড়া ও একসঙ্গে (টিমওয়ার্ক) চিন্তাভাবনা বা কাজ করার পারদর্শিতা দরকার হয়। সে কারণে আবেগের বশবর্তী হয়ে বিয়ে করলেও সঙ্গী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে মতের মিল হবে কি না, বোঝাপড়া থাকবে কি না ও দুজনেরই একই সঙ্গে পথচলার ইচ্ছা রয়েছে কি না—এ বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখতে হবে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দোষারোপ করার প্রবণতা থাকলে বা সহনশীল না হলে এ ধরনের সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না। এ কারণে পড়াশোনা চলাকালে বিয়ে করলে সে সময় সংসারের চিন্তা দূরে সরিয়ে লেখাপড়ার দিকে মনোযোগী হতে হবে। নিজেরা উন্নতি করতে না পারলে পারস্পরিক সম্পর্কে ফাটল ধরতে পারে।
মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় বিয়ে করেছেন—এমন এক পরিবারের অভিভাবকের সঙ্গে কথা হলো। অভিভাবক বলেন, ‘মেয়ে নিজে বিয়ে করে ফেলেছে। মানার ক্ষেত্রে শর্ত দিলাম, লেখাপড়া শেষ হওয়ার আগে সংসার করা যাবে না। তাই এখন সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য মেয়ে ও জামাইকে সব ধরনের সহযোগিতা করছি।’
এই অন্য রকম বৈবাহিক জীবন কেমন? পড়তে পড়তে বিয়ে করেছেন, এ রকম কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, পর্যাপ্ত সময় তাঁরা একসঙ্গে কাটাতে পারেন না। হলে থাকলে রাত নয়টার মধ্যে ঢুকতে হয়। ঈদের সময় বা যেকোনো উৎসবে যাঁর যাঁর বাড়িতে থেকে উদ্যাপন করা হয়। তবে তাঁরা এই ভেবে খুশি যে এখন নানা রকম প্রতিবন্ধকতা ও ছোট ছোট সমস্যা থাকলেও ভবিষ্যতের জন্য ভালো হবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ছাত্রাবস্থায় আবেগের বশবর্তী হয়ে পছন্দ করে বিয়ের প্রবণতাটা বেশি থাকে। তখন সবার পারিবারিক সম্মতি বা আস্থার জায়গাটা থাকে না। পরিবারের অন্য সদস্যদের মনে রাখতে হবে, এই সময় এ ধরনের দম্পতিদের একটু সুযোগ দিলে বা সহযোগিতা করলে তারা এগিয়ে যেতে পারে অনেক দূর। আর অসহযোগিতা হয়তো তাদের জীবনকে থমকে দেবে। এমনকি সংসার শুরুর আগে হয়ে যেতে পারে বিচ্ছেদ। এ কারণে অভিভাবকের মনে কষ্ট থাকলেও সন্তানের কথা ভেবে তাদের সহযোগিতা করা দরকার। তা না হলে সন্তান আরও ভুল পথে পা বাড়াতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ১১:০৭:২০ ৪৭৮ বার পঠিত