বঙ্গনিউজ ডটকমঃ কুমিল্লা ইপিজেড-এ চলতি বছরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৩ শতাংশ বেশি হারে রপ্তানি আয় করছে। যার মোট পরিমান দাঁড়াবে গত অর্থ বছরের চেয়ে ২৯ শতাংশ বেশি। চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে ২২৬.১৫ মিলিয়ন ডলার আয় হয়েছে এই রপ্তানিপ্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলটিতে।
আর সার্বিকভাবে শেখ হাসিনার বিগত ছয় বছরের শাসনামলে বেপজা বিনিয়োগে ১২৯.৫৫%, রপ্তানিতে ১৫৫.৯৫% এবং কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে ১১২.৩০% প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে।
এ অবস্থায় কুমিল্লা ইপিজেডের ক্রম অগ্রসরমানতায় শিল্পসুবিধা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। তারই অংশ হিসেবে নির্মিত হচ্ছে কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগার (সিইটিপি)।
২৫ মে (সোমবার) কুমিল্লা ইপিজেড যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সফরকালে বর্জ্য পরিশোধনাগার (সিইটিপি) উদ্বোধন করবেন তিনি।
সংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন, এটি চালুর ফলে কেন্দ্রীয়ভাবে কুমিল্লা ইপিজেডের শিল্প কারখানাসমূহের তরল বর্জ্য পরিশোধন সম্ভব হবে যা ইপিজেডসহ আশ-পাশের পরিবেশ উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
কুমিল্লা ইপিজেড কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বর্তমানে এই রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে ২৩৯টি শিল্প প্লটে ৩৭টি শিল্প প্রতিষ্ঠান উৎপাদন শুরু করেছে। যার মধ্যে ১৯টি বিদেশি ৮টি যৌথ এবং ১০টি দেশীয় মালিকানাধীন। এসব শিল্প প্রতিষ্ঠানে ২১,২৫৭ জন বাংলাদেশি ও ২১৮ জন বিদেশি নাগরিক কর্মরত রয়েছেন। এছাড়া ১৪টি শিল্প প্রতিষ্ঠান বাস্তবায়নাধীন রয়েছে।
একটি হিসাবে দেখানো হয়েছে, ইপিজেডটিতে এপ্রিল ২০১৫ পর্যন্ত মোট বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২১৬.৯০৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। চালু ২০১৩-২০১৪ অর্থ বছরে এ ইপিজেড হতে মোট রপ্তানি হয়েছে ২০৯.৪১৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের। চলতি অর্থ বছরের প্রথম ১০ মাসে ২৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে অর্জিত হয়েছে ২২৬.১৫৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা লক্ষমাত্রার চেয়ে ১৩ শতাংশ বেশি। আর গত অর্থবছরের চেয়ে এই আয়ের প্রবৃদ্ধি ২৯ শতাংশ।
প্রধানমন্ত্রী সোমবার যে বর্জ্য পরিশোধনাগারটি উদ্বোধন করতে যাচ্ছেন সেটি রাসায়নিক এবং জৈবিক উভয় পদ্ধতিতে প্রতিদিন কমপক্ষে ১৫,০০০ ঘনমিটার বর্জ্য পরিশোধন করতে পারবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
মেসার্স সিগমা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড (সিইটিপি) এর ব্যবস্থাপনায় এই পরিশোনাগার নির্মিত হচ্ছে।
জানানো হয়েছে, সিইটিপি চালুর ফলে কুমিল্লা ইপিজেডের কারখানাসমূহের এখন থেকে আলাদা বর্জ্য পরিশোধনাগার (ইটিপি) প্রয়োজন হবে না। প্রতিষ্ঠানসমূহ সিইটিপিতে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে কেন্দ্রীয়ভাবে বর্জ্য পরিশোধনের সুযোগ পাবে।
১৯৯৯ সালের মার্চ মাসে একনেকে কুমিল্লা ইপিজেড প্রকল্প অনুমোদন হয়। ২০০০ সালে ২৬৭.৪৬ একর আয়তন বিশিষ্ট কুমিল্লা ইপিজেডের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। সেবছর ১৫ জুলাই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
কুমিল্লা ইপিজেডে চীন, জাপান, তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, শ্রীলংকা, ভারত, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড, ইটালী, নেদারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, হং কং, মরিশাস, আয়ারল্যান্ড, ফ্রান্স, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক, ওমান এবং স্বাগতিক বাংলাদেশ বিনিয়োগ করেছে।
এখানে উৎপাদিত পণ্যের মধ্যে রয়েছে তৈরি পোশাক, জুতা, ইয়ার্ণ, ফেব্রিক্স, টেক্সটাইল ডাইজ ও অক্সিলিয়ারিস, গার্মেন্ট এক্সেসরিজ, সোফা কাভার, ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী, প্লাস্টিক পণ্য, মেডিসিন বক্স, আই প্যাচ, ক্যামেরা ব্যাগ, কম্পিউটার ব্যাগ, হেয়ার এক্সেসরিজসহ আরও নানা ধরনের পণ্য।
বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা) দেশের ৮টি অঞ্চলে ইপিজেড প্রতিষ্ঠা করেছে। এতে বিপুল সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। পাশাপাশি বিদেশি ও দেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ, বৈদেশিক মুদ্রা আহরণ, পণ্যের বহুমূখীকরণ ও রপ্তানিতে বৈচিত্রায়নসহ প্রযুক্তি হস্তান্তর ও জাতীয় রপ্তানিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে আসছে।
বেপজার তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিল ২০১৫ পর্যন্ত ইপিজেডসমূহের ৪৪২টি চালু এবং ১২০টি বাস্তবায়নাধীন শিল্প কারখানায় মোট বিনিয়োগ হয়েছে ৩৫০৪.৩৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। মোট রপ্তানি হয়েছে ৪৪৯৭৫.০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের পণ্য।
চালু শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহে কর্মরত আছেন ৪ লাখ ১৩ হাজার ৬৬৭ শ্রমিক-কর্মচারী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগ ও পরামর্শেই বেপজা আজ দেশের একটি অন্যতম সফল সংস্থা বলে মনে করছেন এর কর্তা ব্যক্তিরা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই মংলা, কুমিল্লা, ঈশ্বরদী, উত্তরা (নীলফামারী) ও সম্প্রসারিত ঢাকা ইপিজেড উদ্বোধনসহ চট্টগ্রামে ৩য় পর্যায়ে ইপিজেড সম্প্রসারণ করেন।
শেখ হাসিনার বিগত ছয় বছরের শাসনামলে বেপজা বিনিয়োগে ১২৯.৫৫%, রপ্তানিতে ১৫৫.৯৫% এবং কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে ১১২.৩০% প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে।
প্রধানমন্ত্রীর সঠিক দিক নির্দেশনা এবং বিনিয়োগ বান্ধব নীতির ফলে দেশের ইপিজেডসমূহ এখন উদ্যোক্তাদের নিকট বিনিয়োগের সুবর্ণভূমি হিসেবে পরিচিত, বলেছে বেপজা।
দেশের প্রথম ইপিজেডের যাত্রা শুরু হয় চট্টগ্রামে। এর সাফল্যের ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে ঢাকা, মংলা, কুমিল্লা, ঈশ্বরদী, উত্তরা, আদমজী এবং কর্ণফুলী নামে আরও ৭টি ইপিজেড স্থাপিত হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৩:৪৭:৩২ ৪৪৮ বার পঠিত