বঙ্গনিউজ ডটকমঃ একনেকের গত বৈঠকে পদ্মা সেতু প্রকল্প নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে যে সব মন্তব্য গণমাধ্যমে এসেছে, তার প্রতিক্রিয়া এসেছে ইউনূস সেন্টারের পক্ষ থেকে।
গত মঙ্গলবারের ওই বৈঠক নিয়ে কয়েকটি সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছিল, নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস দেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ন করতে পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্ব ব্যাংকের ঋণ বাতিল করিয়েছিলেন।
যথাযথ সূত্রের উদ্ধৃতি ছাড়া প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনের বিষয়ে ইউনূস সেন্টারের বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রী ওই ধরনের কোনো মন্তব্য করেছেন বলে তারা বিশ্বাস করেন না।
তারপরও যেহেতু গণমাধ্যমে বিষয়টি এসেছে, তাই প্রতিক্রিয়া জানানো হচ্ছে বলে শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেছে তারা।
পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্ব ব্যাংকের ঋণ বাতিলের বিষয়ে ইউনূসের কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল না দাবি করে বিবৃতিতে বলা হয়, “মুহাম্মদ ইউনূস আগেই বিবৃতির মাধ্যমে স্পষ্ট করেছেন, পদ্মা সেতু বাংলাদেশের মানুষের একটি স্বপ্ন এবং তিনিও এই স্বপ্নের সহগামী।
“হিলারি ক্লিনটনকে (যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী) দিয়ে ফোন করিয়ে পদ্মা প্রকল্পে ঋণ বাতিলে তার চেষ্টা চালানোর প্রশ্নই ওঠে না। তিনি বাংলাদেশের স্বার্থহানিকর কিছু করতেই পারেন না।”
সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন নিয়ে বুধবার পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তিনি তা এড়িয়ে বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করব না।”
তবে সেই সঙ্গে মন্ত্রী বলেছিলেন, “যেহেতু তাকে নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে, উনি (ইউনূস) নিজেকে ক্লিয়ার করেন না কেন? দীর্ঘ দিন ধরে এ নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে, কেন তিনি সামনে এগিয়ে আসছেন না? তার অবস্থান পরিষ্কার করছেন না?”
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, নিমগাছি সামাজিক মৎস্য চাষ প্রকল্পে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য জানতে পেরেছে সরকারের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)। স্থানীয়দের দারিদ্র্যবিমোচনে ৮০০ পুকুর নামমাত্র মূল্যে ইজারা নিয়ে উচ্চ সুদে ঋণ দিয়েছে ড. ইউনূসের গ্রামীণ ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ মৎস্য ও পশু সম্পদ ফাউন্ডেশন।
এতে দুর্নীতির অভিযোগ প্রত্যাখ্যান তরে ইউনূস সেন্টার বলেছে, ১৯৮৬ সালে ২৫ বছরের চুক্তিতে গ্রামীণ ফিশারিজ সেখানে পুকুর ইজারা নিয়েছিল। চুক্তি শেষ হওয়ার পর পুকুরগুলো সরকারকে ফিরিয়েও দেওয়া হয়।
“ওই সময় (গ্রামীণ ফিশারিজের ব্যবস্থাপনাকালে) ওই পুকুরে মাছ উৎপাদন ৪৬ টন থেকে ২০৪০০ টনে উন্নীত হয়েছিল। মাছ বিক্রি করে আয় ১২ লাখ ৮৭ হাজার টাকা থেকে পৌঁছেছিল ৭০ কোটি টাকায়। এটি ছিল সফল একটি প্রকল্প। বরঞ্চ সরকারকে ফিরিয়ে দেওয়ার পর এখন এর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।”
গ্রামীণ ব্যাংক গরিব মানুষকে ঋণের ফাঁদে ফেলে শোষণ করছে বলেও প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়।
এর প্রতিক্রিয়ায় ইউনূস সেন্টার বলছে, গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে গরিব মানুষের ভাগ্যোন্নয়ন ঘটার প্রমাণ বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে।
“আর ক্ষুদ্রঋণ দাতা যতগুলো সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে রয়েছে, তার মধ্যে গ্রামীণ ব্যাংকের সুদের হার সবচেয়ে কম। আর গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণগ্রহীতারাই এর মালিকানা ৭৫ শতাংশের অংশীদার। সুতরাং মালিকানার অংশীদারদের ক্ষতি হওয়ার কোনো সুযোগই (ব্যাংকটিতে) নেই।”
গত শতকের ৮০এর দশকে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পর এই পর্যন্ত ১ দশমিক ১ ট্রিলিয়ন ঋণ বিতরণের তথ্যও জানিয়েছে ইউনূস সেন্টার।
এক নারীর ৫ হাজার টাকা ঋণের বিপরীতে সুদে আসলে ১৬ হাজার টাকা নেওয়ার যে কথা প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, মূল ঋণের অঙ্কের চেয়ে সুদের অঙ্ক বেশি হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে নোবেলজয়ী একজন বাংলাদেশিকে নিয়ে এই ধরনের বক্তব্যে হতাশা প্রকাশ করে ইউনূস সেন্টার বলেছে, এটা মানুষের মধ্যে ভুল ধারণা তৈরি করবে।
বাংলাদেশ সময়: ১১:১৪:৫২ ৩৮৩ বার পঠিত