তমাল সাহা,বিশেষ প্রতিনিধিঃরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৪তম জন্মবার্ষিকী। সাহিত্যের প্রায় সব শাখাতেই বিচরণ করেছেন কবিগুরু। শান্তির পথনির্দেশ করেছেন অনন্য সৃষ্টিকর্মের মধ্যদিয়ে। মানবকল্যাণের আহ্বানই বারবার ধ্বনিত হয়েছে তার সামাজিক কর্মকাণ্ড, রাজনৈতিক দর্শন ও সাহিত্যে।`রবি ঠাকুর বাংলা সাহিত্যকে বিশ্ব দরবারে পরিচয় করিয়েছেন`১৮৬১ সালের (১২৬৮ বঙ্গাব্দ) আজকের এই দিনে কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং মাতা সারদাসুন্দরী দেবী। তিনি ছিলেন পিতামাতার চতুর্দশ সন্তান। ১৮৭৫ সালে মাত্র চৌদ্দ বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মাতৃবিয়োগ ঘটে। পিতা দেবেন্দ্রনাথ দেশভ্রমণের নেশায় বছরের অধিকাংশ সময় কলকাতার বাইরে অতিবাহিত করতেন। তাই ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান হয়েও রবীন্দ্রনাথের ছেলেবেলা কেটেছিল ভৃত্যদের অনুশাসনে। শৈশবে তিনি কলকাতার ওরিয়েন্টাল সেমিনারি, নর্ম্যাল স্কুল, বেঙ্গল অ্যাকাডেমি এবং সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজিয়েট স্কুলে পড়াশোনা করেন। কিন্তু বিদ্যালয়-শিক্ষায় অনাগ্রহী হওয়ায় বাড়িতেই গৃহশিক্ষক রেখে তার শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। ছেলেবেলায় জোড়াসাঁকোর বাড়িতে অথবা বোলপুর ও পানিহাটির বাগানবাড়িতে প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে ঘুরে বেড়াতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৮ সালে ব্যারিস্টারি পড়ার উদ্দেশে তিনি ইংল্যান্ডে যান। সেখানে তিনি ব্রাইটনের একটি পাবলিক স্কুলে ভর্তি হন। ১৮৭৯ সালে ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনে আইনবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। প্রায় দেড় বছর ইংল্যান্ডে কাটিয়ে ১৮৮০ সালে কোনো ডিগ্রি না নিয়ে তিনি দেশে ফিরে আসেন। ১৮৮৩ সালের ভবতারিণীর সঙ্গে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিবাহিত জীবনে ভবতারিণীর নামকরণ হয়েছিল মৃণালিনী দেবী। ১৮৯১ সাল থেকে পিতার আদেশে রবীন্দ্রনাথ নদিয়া, পাবনা ও রাজশাহী জেলা এবং উড়িষ্যার জমিদারি তদারকি শুরু করেন। কুষ্টিয়ার শিলাইদহের কুঠিবাড়ীতে তিনি দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করেন। ভাবগভীরতা, গীতিধর্মিতা চিত্র রূপময়তা, অধ্যাত্মচেতনা, ঐতিহ্যপ্রীতি, প্রকৃতিপ্রেম, মানবপ্রেম, স্বদেশপ্রেম, বিশ্বপ্রেম, রোমান্টিক, সৌন্দর্যচেতনা, ভাব, ভাষা, ছন্দ ও আঙ্গিকের বৈচিত্র্য, বাস্তবচেতনা ও প্রগতিচেতনা তার সাহিত্যের বৈশিষ্ট্য। ১৯০১ সালে রবীন্দ্রনাথ শিলাইদহ ছেড়ে চলে আসেন বীরভূম জেলার বোলপুর শহরের উপকণ্ঠে শান্তিনিকেতনে। ১৯০২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর মাত্র ৩০ বছর বয়সে কবিপত্নী মৃণালিনী দেবী মারা যান। এরপর ১৯০৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর কন্যা রেণুকা, ১৯০৫ সালের ১৯ জানুয়ারি পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও ১৯০৭ সালের ২৩ নভেম্বর কনিষ্ঠ পুত্র শমীন্দ্রনাথ মৃত্যুবরণ করেন। বাংলা ভাষার সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক রবীন্দ্রনাথকে গুরুদেব, কবিগুরু ও বিশ্বকবি অভিধায় ভূষিত করা হয়। রবীন্দ্রনাথের ৫২টি কাব্যগ্রন্থ, ৩৮টি নাটক, ১৩টি উপন্যাস ও ৩৬টি প্রবন্ধ ও অন্যান্য গদ্যসংকলন তার জীবদ্দশায় বা মৃত্যুর অব্যবহিত পর প্রকাশিত হয়। তার সর্বমোট ৯৫টি ছোটগল্প ও ১৯১৫টি গান যথাক্রমে গল্পগুচ্ছ ও গীতবিতান সংকলনের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ১৯১০ সালে রচিত গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের জন্য ১৯১৩ সালে তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। দীর্ঘ রোগভোগের পর ১৯৪১ সালে কলকাতায় পৈতৃক বাসভবনেই মৃত্যুবরণ করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬:৩৩:২২ ৪৬৫ বার পঠিত