বঙ্গনিউজ ডটকমঃ বাজার ‘স্থিতিশীল’ রাখতে ডলার কিনেই চলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।মঙ্গলবারও দুই কোটি (২০ মিলিয়ন) ডলার কিনেছে তারা।
চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এ পর্যন্ত ২৯০ কোটি (২ দশমিক ৯ বিলিয়ন) ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।গত অর্থবছরে কিনেছিল ৪৭৯ কোটি ডলার।
আন্তঃব্যাংক মুদ্রা বাজারে মঙ্গলবার ৭৭ টাকা ৮০ পয়সায় ডলার কেনাবেচা হয়েছে। গত চার মাস ধরে টাকা-ডলারের বিনিময় হার এই একই দরে ‘স্থির’ রয়েছে।
রপ্তানি আয় ও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের ইতিবাচক ধারা ধরে রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজার থেকে ডলার কিনছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের মহাব্যবস্থাপক কাজী ছাইদুর রহমান জানিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, “বাজার থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডলার কেনা-বেচা নিয়মিত ব্যাপার। বাজার স্থিতিশীল রাখতেই ডলার কেনা হচ্ছে।”
‘বর্তমানে বাজার স্থিতিশীল রয়েছে’ মন্তব্য করে ছাইদুর রহমান বলেন, “যখন প্রয়োজন পড়বে অর্থাৎ বাজারে ডলারের প্রয়োজন হবে তখন বিক্রি করা হবে।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের দশ মাসে (গত বছরের ১ জুলাই থেকে ৫ মে পর্যন্ত) বাজার থেকে মোট ২৯০ কোটি ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
গত বছরের শেষদিকে বাজারে ডলারের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় কিছু ডলার বিক্রিও করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
২০১২ সালের প্রথম দিকে ডলারের দর বাড়তে বাড়তে এক পর্যায়ে ৮৫ টাকায় উঠেছিল। এরপর থেকে তা কমতে কমতে ২০১৩ সালের শুরুতে ৮০ টাকার নীচে নেমে আসে।
ব্যাংকগুলোতে এই বিনিময় হারে সামান্য হেরফের হলেও আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে গত বছরের অক্টোবরে ৭৭ টাকা ৪০ পয়সায় নেমে এসেছিল। এরপর তা কিছুটা বেড়ে গত জানুয়ারি থেকে ৭৭ টাকা ৮০ পয়সায় স্থির রয়েছে।
২০০৩ সালে বাংলাদেশে ভাসমান মুদ্রা বিনিময় ব্যবস্থা (ফ্লোটিং) চালু হয়। অর্থাৎ বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় ব্যবস্থা বাজারের উপর ছেড়ে দেওয়া হয়। তার আগ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার-টাকার বিনিময় হার ঠিক করে দিত। সে দরেই ডলার লেনদেন হতো।দশ মাসে রেমিটেন্স ১২.৫৫ বিলিয়ন ডলার
সদ্য সমাপ্ত এপ্রিল মাসে প্রবাসীরা ১২৯ কোটি ৩৭ লাখ ডলারের রেমিটেন্স দেশে পাঠিয়েছেন, যা গত বছরের এপ্রিলের চেয়ে ৫ দশমিক ২ শতাংশ বেশি।
সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরের প্রথম দশ মাসে অর্থাৎ জুলাই-এপ্রিল সময়ে এক হাজার ২৫৫ কোটি ২০ লাখ (১২ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে তা ৬ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি।
অর্থবছর শেষে রেমিটেন্সের পরিমাণ ১৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তা ছাইদুর রহমান।
২০১৩-১৪ অর্থবছরে ১৪ দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলার পাঠিছিলেন প্রবাসীরা। তার আগের বছরে (২০১২-১৩) পাঠান ১৪ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলার।
মার্চ মাসে রেমিটেন্স এসেছিল ১৩৩ কোটি ৮৩ লাখ ডলার।
একক মাস হিসাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স এসেছিল চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে; ১৪৯ কোটি ২৫ লাখ ডলার।
রিজার্ভ ২৪.০৮ বিলিয়ন ডলার
সোমবার দিন শেষে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদের পরিমাণ ছিল ২৪ দশমিক ০৮ বিলিয়ন ডলার।
২৯ এপ্রিল বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো রিজার্ভ ২৪ বিলিয়ন ডলারের ‘ঘর’ অতিক্রম করে।
চলতি সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) মার্চ-এপ্রিল মেয়াদের ১০০ কোটি ডলারের বেশি আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ কমে আসবে বলে জানান ছাইদুর রহমান।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) বিভিন্ন পণ্য আমদানি করে বাংলাদেশ ২২ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৩ শতাংশ বেশি।
বাংলাদেশ সময়: ১৬:৫৯:৫৭ ৩৪৬ বার পঠিত