বঙ্গনিউজ ডটকমঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কুইক ও রেন্টাল বিদ্যুৎ নিয়ে সরকারের কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে টকশোতে এক শ্রেণীর অংশগ্রহণকারীর সমালোচনা অনাকাঙ্ক্ষিত। তিনি বলেন, টকশোতে অংশগ্রহণকারীরা এখন এয়ার কন্ডিশন রুমে বসে অতীতে গরমের ভোগান্তির কথা ভুলে গেছেন।
গতকাল বিকেলে প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারি বাসভবন ও গণভবন থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে স্থানীয় সংসদ সদস্য, সরকারি কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ৪টি বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ বিদ্যুৎ খাতের ৬টি প্রকল্প উদ্বোধনকালে এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ৬ বছরে বিদ্যুৎ উৎপাদন ৩ হাজার ২শ’ মেগাওয়াট থেকে ১৩ হাজার মেগাওয়াটে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে বর্তমানে দেশের ৭০ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে। এটি সম্ভব হয়েছে বর্তমান সরকারের দ্রুত ও বাস্তবমুখী পদক্ষেপের কারণে।
তিনি স্বল্প সময়ের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি এবং বিদ্যুৎ সংকট থেকে জনগণকে স্বস্তি দেয়ার নিরলস প্রচেষ্টার জন্য বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, অনেকে অনেক কিছু বলতে পারে। কিন্তু দেশবাসী এমনকি রাজধানীর জনগণকে বিদ্যুৎ সংকটের ভোগান্তি থেকে রেহাই দিতে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া এবং তা কার্যকর করা খুবই কঠিন কাজ।
উদ্বোধন করা বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো হচ্ছে নাটোর ৫২ দশমিক ২০ মেগাওয়াট ফার্নেস অয়েল ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, গগননগর (নারায়নগঞ্জ) ১০২ মেগাওয়াট ফার্নেস অয়েল ভিত্তিক আইপিপি বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ঘোড়াশাল (নরসিংদী) ১০৮ মেগাওয়াট গ্যাস ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং কাটপট্টি (মুন্সীগঞ্জ) ৫২ দশমিক ৫০ মেগাওয়াট ফার্নেস অয়েল ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এগুলোর মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডে ৩১৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যোগ হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী মেঘনাঘাট থেকে আমিন বাজার পর্যন্ত ৪০০ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন এবং লালবাগ ১৩২/৩৩/১১ কেভি সাবস্টেশনও উদ্বোধন করেন।
ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই- ইলাহি চৌধুরী, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু এবং বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব মনোয়ার ইসলামও বক্তৃতা করেন।
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক এবং বিদ্যুৎ অধিদপ্তরের ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পদস্থ কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৩ হাজার ২৬৫ মেগাওয়াটে। ২০০৯ সালে তা ছিল ৩ হাজার মেগাওয়াটের বেশী। তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছিল মাত্র ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট। আওয়ামী লীগ সরকার পাঁচ বছর মেয়াদকালে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৪ হাজার ৩০০ মেগাওয়াটে উন্নীত করেছিল।
তিনি আরো বলেন, কিন্তু বিএনপি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৩ হাজার মেগাওয়াটে নেমে যাওয়ার কারণে দেশে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। জনগণের জীবন থেকে ৭ বছর হারিয়ে যাওয়ার পর বিদ্যুতের চাহিদা বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছিল। কিন্তু বিদ্যুতের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়নি। এই পরিস্থিতিতে অনেকেই এ কাজটিকে কঠিন ভেবেছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি হচ্ছে উন্নয়নের মূল উপাদান এবং নাগরিকদের প্রতি কাজ-কর্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল। এখন জনগণের চাহিদা বদলে গেছে। কারণ, তারা এখন বিদ্যুৎ চান। এক সময় তারা কেবল খাদ্য ও বাসস্থান চাইতো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে প্রথমেই বেসরকারী খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এ লক্ষ্যে ক্ষুদ্র ও মাঝারি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন এবং বেসরকারী খাতকে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করেছিল।
তিনি সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সরকার সেচ কাজের জন্য সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহারের উদ্যোগ নিয়েছে।
পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মানের অগ্রগতি লাভের উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিদ্যুৎ খাতে আঞ্চলিক সহযোগিতার নজির স্থাপন করে ভারত থেকে ৫০০ মেগাওয়াটের বেশী বিদ্যুৎ কেনার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ভারতের পশ্চিম বঙ্গ রাজ্য থেকে আরো ৫০০ মেগাওয়াট এবং আগরতলা থেকে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেনা হবে। নেপাল ও ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানী এবং জ্বালানি খাতে আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদারের লক্ষ্যে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
তিনি বিদ্যুৎ ব্যবহারে আরো সাশ্রয়ী হওয়ার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, এতে বিদ্যুতের ব্যবহার হ্রাস পাবে এবং ভোক্তাদের বিল পরিশোধের ভার লাঘব হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১২:০৩:৩৩ ৩৬৮ বার পঠিত