বঙ্গনিউজ ডটকমঃ অর্থনীতির অন্যান্য খাতের মতো কৃষি বিনিয়োগেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড।দেশের ৮০ ভাগ মানুষের জীবন জীবিকা নির্বাহের অবলম্বন কৃষি খাতের বিকাশে শুরু থেকেই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কাজ করে যাচ্ছে ব্যাংকটি।
বিগত ৫ বছরে কৃষিতে ৬০০০ কোটি টাকা বিনিয়োগসহ আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে চাষাবাদের জন্য হাতে-কলমে আড়াই লক্ষাধিক কৃষককে প্রশিক্ষণ দিয়েছে এ ব্যাংক।
কৃষিপণ্য উৎপাদন, বাজারজাতকরণ, কৃষিসহায়ক শিল্প স্থাপন ও গুদামজাতকরণের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিনিয়োগ করছে নিয়মিত। সহায়ক বিনিয়োগ হিসেবে, কৃষি যন্ত্রপাতি বিনিয়োগ প্রকল্প, পল্লী উন্নয়ন প্রকল্প, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা উন্নয়ন প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে।
কৃষি ও পল্লী ঋণ খাতে প্রতিটি ব্যাংকের মোট বিতরণকৃত ঋণের আড়াই শতাংশ হারে বাধ্যতামূলক বিনিয়োগের বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা মোতাবেক গত অর্থ বছরে ইসলামী ব্যাংকের ৭৫৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করার কথা ছিল। কিন্তু ব্যাংকটি এ সময়ে কৃষি খাতে মোট বিনিয়োগ করেছে ১,৩১৯ কোটি টাকা, যা দেশের সব ব্যাংকের বিতরণকৃত ঋণের ৯ ভাগ এবং বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মোট বিতরণকৃত ঋণের ২৩ শতাংশ।
দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান, দারিদ্র বিমোচন, মানব সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার ইত্যাদির সঙ্গে কৃষি অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। এ বিষয়টিকে সামনে রেখে প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই ইসলামী ব্যাংক কৃষি খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে এর বিকাশের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের জাতীয় প্রবৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে। ব্যাংকের বিনিয়োগ সুবিধা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বর্গাচাষী, ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকসহ সমাজে অনগ্রসর গোষ্ঠী পর্যায়ে সমপ্রসারণ করে আসছে। কৃষিকে বাণিজ্যিক ভিত্তি প্রদানের লক্ষ্যে ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বৃহৎ বা করপোরেট উদ্যোক্তা পর্যায়ে বিনিয়োগ সুবিধাসহ অঞ্চলভিত্তিক বহুল পরিচিত ও উচ্চফলনশীল ফসল উৎপাদনে উৎসাহ দেয়া হয় হচ্ছে।
কৃষিভিত্তিক শিল্পে এ পর্যন্ত ১,৩৯৪ জন উদ্যোক্তার মাঝে ৫,৩৫৯ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়। এছাড়া আমদানি নির্ভর ও উচ্চমূল্য ফসল খাতে বিশেষ বিনিয়োগ প্রদান করে আসছে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা সমাধানে গ্রিন অর্থায়ন করা হচ্ছে।
এছাড়া সরকারের অগ্রাধিকার খাত তথা, ডাল, তৈলবীজ, মসলা ও ভুট্টা চাষে রেয়াতি মুনাফা হারে বিনিয়োগ করে আসছে। রেয়াতি হারে এ খাতে গত তিন বছরে প্রায় তিন কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। দেশের জিডিপিতে কৃষির অবদান ১৮.৬ শতাংশ।
গত ৫ বছরে ইসলামী ব্যাংক এ খাতে বিনিয়োগ করেছে প্রায় ৬০০০ কোটি টাকা। ২০১২-১৩ বছরে ইসলামী ব্যাংক কৃষি খাতে বিনিয়োগ করেছে ১,৩০৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার ১৮০ ভাগ। আর গত অর্থবছরে বিনিয়োগ করেছে ১,৩২২ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার ১৭৫ শতাংশ।
দেশের মোট শ্রম শক্তির ৪৫ শতাংশের অবদান কৃষি খাত। ইসলামী ব্যাংক গত তিন বছরে কৃষি, গবাদিপশু ও মৎস্য খাতে ২ লাখ ৫৩,০০০ জনকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। ২০১৪ সালে ২,৩৬২টি প্রশিক্ষণ কর্মশালার মাধ্যমে ১ লাখ ৫৭,১৮৭ জনকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।
এর ফলে একদিকে নিরক্ষর ও অর্ধশিক্ষিত কৃষক ও মৎস্যচাষীরা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ চাষী হচ্ছেন, পাশাপাশি উন্নতমানের ফসল উৎপাদন, গবাদী পশু পালন ও মৎস্য চাষের মাধ্যমে দেশে পুষ্টি ও খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে সহায়তা করছে। একই সঙ্গে উৎপাদিত ফসল বিক্রি করে ব্যাংকের বিনিয়োগ ফেরত দেয়ার পাশাপাশি নিজেরা স্বাবলম্বী হয়েছেন।
কৃষিখাতে ইসলামী ব্যাংকের অভূতপূর্ব সাফল্যের পেছনে রয়েছে ইসলামী ব্যাংকের উদ্যোক্তা ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি, দক্ষ জনবল ও নিবিড় মনিটরিং। কৃষি বিষয়ক নীতিমালা প্রণয়ন, মনিটরিং, বিবরণী তৈরি ও সুষ্ঠু পরিচালনা নিশ্চিত করতে এ ব্যাংক কৃষি বিনিয়োগ বিভাগ চালু করে। বর্তমানে এ বিভাগ পল্লী উন্নয়ন বিভাগের অধীনে কাজ করছে।
কৃষিখাতে সাফল্যের জন্য প্রতিবছরই বিভিন্ন কৌশল গ্রহণ করে। এর মধ্যে কোনো উপখাতে বিনিয়োগ করার আগে ভিত্তি জরিপ পরিচালনা করে প্রকৃত কৃষি বিনিয়োগ গ্রহীতা সনাক্তকরণ করা হয়। মোট কৃষি বিনিয়োগের ৬০ ভাগ ফসল চাষে প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ ও তা পূরণে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৮:২১:৪১   ৩১৯ বার পঠিত