বঙ্গনিউজ ডটকমঃ সিটি নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলসমর্থিতদের বিরুদ্ধে ‘অনিয়ম ও টাকা ছড়ানোর’ অভিযোগ এনে ভোটের দিন কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাহারা বসাতে ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
বিএনপিসমর্থিত প্রার্থীদের পক্ষে ভোটের প্রচারে নেমে ‘দারুণ’ সাড়া পাওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেছেন, “আমি নিশ্চিত, ঢাকা ও চট্টগ্রামের মানুষ একটুখানি সুযোগ পেলেই নীরব ভোট বিপ্লব ঘটিয়ে অত্যাচারের বদলা নেবে, উপযুক্ত জবাব দেবে।”
রোববার দুপুরে গুলশানে নিজের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া এ কথা বলেন।
ঢাকায় ভোটের প্রচারের সময় গাড়িবহরে হামলার ঘটনা তুলে ধরে খালেদা জিয়া বলেন, “এটা যে আমাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে সুপরিকল্পিত হামলা ছিল, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের উসকানির পর যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ সরকার সমর্থকরা এই হামলা চালায়।”
বর্তমান সরকার মানুষকে নিরাপত্তা দিতে ‘ব্যর্থ’ হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “যে সরকার মানুষের নিরাপত্তা দিতে পারে না, ক্ষমতায় থাকার অধিকার তাদের নেই।”
ঢাকা দক্ষিণে মির্জা আব্বাসের মগ মার্কা, উত্তরে তাবিথ আউয়ালের বাস মার্কা ও চট্টগ্রামে মনজুর আলমের কমলা লেবু মার্কায় ভোট চেয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, “আপনাদের ভোট অন্যায়ের বিরুদ্ধে এক বিরাট শক্তি। ভোট হচ্ছে জনগনের এক বিরাট ক্ষমতা। সঠিকভাবে সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করুন, নীরব বিপ্লব ঘটান।”
তিনি সবাইকে ২৮ এপ্রিল সকাল সকাল কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে এবং কোনো অনিয়ম দেখলে প্রতিবাদ করতে বলেন।
ভোটগ্রহণ শেষে বিকাল থেকে কেন্দ্র পাহারা দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, “গণনা শেষে ফলাফল বুঝে নিয়ে আপনারা কেন্দ্র ত্যাগ করবেন। যাতে আপনাদের দেওয়া রায় বদলে ফেলতে না পারে।”
ভোটের দিন এবং পরে কোনো ‘উসকানির ফাঁদে’ পা না দিতে এবং ‘গুজবে’ কান না দিতেও আহ্বান জানান তিনি।
খালেদা জিয়া বলেন, “সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তার ফলাফল মেনে নেওয়ার জন্য আমি সকলের প্রতি আহবান জানাচ্ছি। সন্ত্রাস ও কারচুপি হলে প্রতিটি কেন্দ্র ও এলাকা থেকে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।”
আওয়ামী লীগসমর্থিত প্রার্থীদের পক্ষে ভোটে টাকা ছড়ানোর অভিযোগ এনে ভোটারদের উদ্দেশে খালেদা বলেন, “টাকা নেবেন, কিন্তু বিবেক অনুযায়ী ভোট দেবেন।”
বর্তমান নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ এনে বিএনপি প্রধান বলেন, “এই কমিশন ঠুটো জগন্নাথ। নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের জন্য রয়েছে চরমভাবে দলীয়করণ করা প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আসন্ন সিটি নির্বাচন কতটা সুষ্ঠু হবে তা নিয়ে দেশবাসীর সঙ্গে আমাদেরও সন্দেহ ছিল, আছে।”
সিটি নির্বাচনে আসার ব্যাখ্যা
৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করা বিএনপি কেন ঢাকা ও চট্টগ্রামের সিটি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে সে বিষয়েও সংবাদ সম্মেলনে ব্যাখ্যা দিয়েছেন খালেদা।
“আমরা এই নির্বাচনকে সরকার, শাসক দল, নির্বাচন কমিশন, রাষ্ট্রীয় প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য একটি টেস্ট কেস হিসেবে নিয়েছি। এটি স্থানীয় সরকার নির্বাচন। এই নির্বাচনে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার কোনো পরিবর্তন হবে না।”
খালেদা বলেন, এ নির্বাচনেও যদি ক্ষমতাসীনরা ‘যথাযথ আচরণ’ না করে, যদি সকল পক্ষের জন্য সুযোগের সমতা সৃষ্টি ‘না করে’, যদি নিরাপদ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশ নিশ্চিত করতে ‘না পারে’ এবং যদি ‘সন্ত্রাস, ডাকাতি, কারচুপির’ মাধ্যমে তারা জনগণের রায়কে বদলে ফেলে, তাহলে ‘আবারও’ স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হবে, এ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের চিন্তা ‘সম্পূর্ণ অবাস্তব ও অবান্তর’।
বিএনপি নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবি থেকেও ‘সরে যায়নি’ বলে জানান দলের চেয়ারপারসন।
সেনা মোতায়েন দাবি আবারও
সেনা সদস্যদের ‘পূর্ণ ক্ষমতাসহ’ ভোটের দায়িত্বে নিয়োজিত করার দাবি সংবাদ সম্মেলনে আবারও তুলে ধরেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
সশস্ত্র বাহিনীর ওপর ‘সকলের আস্থা রয়েছে’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, বিভিন্ন দেশে নির্বাচনকালীন দায়িত্ব নিরপেক্ষভাবে সাহসিকতার সঙ্গে পালনের মাধ্যমে এই বাহিনী ‘গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্য’ স্থাপন করেছে।
“দুভার্গ্যের বিষয়, ক্ষমতাসীনদের ইঙ্গিতে তাদের ভোট ডাকাতির পরিকল্পনার দোসর হয়ে তাদের আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন সেনা মোতায়েনের কথা বলে এক ধূর্ত অপকৌশলের আশ্রয় নিয়েছে। তাই আবারও আমরা বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে সশস্ত্র বাহিনীকে নির্বাচনী এলাকাজুড়ে ভোটের দিন এবং আগে-পরে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য মোতায়েন করতে দাবি জানাচ্ছি।”
জাতীয় নির্বাচনের বর্ষপূর্তি সামনে রেখে উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে গত ৩ জানুয়ারি থেকে একটানা ৯২ দিন গুলশান কার্যালয়ে অবস্থানের পর এই প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হলেন খালেদা জিয়া।
সংবাদ সম্মেলনে প্রায় ৫০ মিনিট বক্তব্য দেওয়ার পর সাংবাদিকদের কয়েকটি প্রশ্নেরও উত্তর দেন তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে খালেদা বলেন, অবরোধ ২০ দলের কর্মসূচি। এ বিষয়ে জোটের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে বিএনপি।
“তবে আপনারা জানেন, অবরোধ এখন আর সক্রিয় নেই”।
নির্বাচনে আসার ক্ষেত্রে ‘পর্দার আড়ালে কোনো সমঝোতা হয়নি’ বলেও আরেক প্রশ্নের উত্তরে বলেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪:২৬:৩০ ৩১৫ বার পঠিত