বঙ্গনিউজ ডটকমঃ নেপালে ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ২ হাজার ৩শ’ ছাড়িয়ে গেছে বলে জানিয়েছে সরকার। ৮০ বছরেরও বেশি সময় পর সবচেয়ে ভয়াবহ এ ভূমিকম্পে নেপাল হয়ে উঠেছে যেন এক মৃত্যুপুরী।নেপালের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় অন্তত ২ হাজার ৩০৯ জন নিহত এবং ৫ হাজার ৮৫০ জন আহত হওয়ার কথা জানিয়েছে। রোববার বিকাল চারটা নাগাদ পাওয়া খবরে হতাহতের এ পরিসংখ্যান জানানো হয়।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কাঠমান্ডু, সিন্ধুপালচোক, ললিতপুর, গোরখা এবং বখতপুর এলাকা।
প্রত্যন্ত এলাকাগুলোর প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সেখানে ধ্বংসস্তূপে অনেক জীবিত বা মৃত মানুষ আটকা পড়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। উদ্ধারকাজ চলছে এবং মৃতের সংখ্যা আরো বাড়ার আশঙ্কা আছে।
মাটির সঙ্গে মিশে যাওয়া ভবনগুলো থেকে আটকে পড়াদের আর্তনাদের মাঝে নেপালে রোববার নতুন করে ভূপিকম্পের শক্তিশালী পরাঘাত হয়েছে। কম্পন অনুভূত হয়েছে ভারত এবং বাংলাদেশেও।
এভারেস্টে আরো তুষারধসের খবর পাওয়া গেছে। এভারেস্টের বেস ক্যাম্প থেকে এ পর্যন্ত ২২ টি লাশ উদ্ধার হয়েছে এবং অন্তত ২১৭ জন পর্যটক নিখোঁজ হয়েছে বলে রোববার জানিয়েছে পর্যটন মন্ত্রণালয়।
নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর ৬০ কিলোমিটার পূর্বে ৬ দশমিক ৭ মাত্রার পরাঘাত অনুভূত হয়। লোকজন আতঙ্কে শহরের খোলা জায়গায় গিয়ে জড়ো হয়।
পরাঘাত হচ্ছে একের পর এক। দুইদিনে নেপালে ৪০ টি পরাঘাত অনুভূত হয়েছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিসি)। পাহাড়ি রাস্তাগুলো ভূমিধসে কিংবা ফাটল ধরে বন্ধ হয়ে গেছে।
বিভিন্ন হাসপাতালে এখনো আসছে মরদেহ। কেবল মরদেহই নয়, হাসপাতালে আসছে আহতরাও। হাজার হাজার আহতের জায়গা সংকুলান করতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
কেবলমাত্র রাজধানী কাঠমাণ্ডুতেই সাতশ’র বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ধ্বংসস্তুপে আটকে পড়া অনেকের আর্তর্নাদ শুনেও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাবে সঙ্গে সঙ্গেই সাড়া দিতে পারছেন না উদ্ধারকারীরা। অনেকেই নেমে পড়েছেন খালি হাতে ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজে।
নেপালের কাঠমান্ডু এবং পোখরা নগরীর মাঝে শনিবার দুপুরে ৭ দশমিক ৯ মাত্রার এই ভূমিকম্পে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের বিস্তীর্ণ এলাকাও কেঁপে উঠে। ভারতে অন্তত ৫২ জন, তিব্বতে ১৭ জন এবং বাংলাদেশে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
ভূপকম্প পরবর্তী পরাঘাতগুলোও যথেষ্ট শক্তিশালী হওয়ায় আশঙ্কায় আছে আশেপাশের দেশগুলো। এরই মধ্যে ৬ দশমিক ৭ মাত্রার পরাঘাতে ভারতের দিল্লিতে ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে।
পরাঘাত কত ঘন ঘন হবে তা আঁচ করার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় লোকজনকে সতর্ক থাকতে বলেছে ভারতের আবহাওয়া দপ্তর।
নেপালের দুর্গতদের জন্য এরই মধ্যে সহায়তার হাত বাড়িয়েছে বিভিন্ন দেশ। ভারত তিন টন ত্রাণ ও ৪০ জন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত উদ্ধারকর্মী নেপালে পাঠিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য সংস্থা ইউএসএইডের তথ্যমতে, যুক্তরাষ্ট্রের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মীদের একটি দল নেপালের পথে রওয়ানা হয়েছে। এছাড়া জরুরি সাহায্যের জন্য প্রাথমিকভাবে ১০ লাখ মার্কিন ডলার অর্থ সাহায্য দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে দেশটি।
যুক্তরাজ্যের প্রাধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ভূমিকম্প দুর্গতদের সাহায্যে ‘সব কিছু করার’ ঘোষণা দিয়েছেন। সাহায্য ও সহায়তার যেকোন ধরণের অনুরোধে সাড়া দিতে ফ্রান্স প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওঁলাদ।
নেপাল কর্তৃপক্ষকে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে পাকিস্তান। বাংলাদেশ সরকারও উদ্ধারকাজে অংশগ্রহণসহ চিকিৎসা ও মানবিক সহায়তা দেওয়ার কথা জানিয়েছে।
নেপালে এর আগে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল ১৯৩৪ সালের ভূমিকম্পে, ওই দুর্যোগে সাড়ে ৮ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়।
বাংলাদেশ সময়: ২১:১৬:৩৮ ৩৭২ বার পঠিত