বঙ্গনিউজ ডটকমঃ ৫ থেকে ১৭ মাস বয়সী শিশুদের ওপর একটি টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগে ম্যালেরিয়া থেকে সুরক্ষা মিলেছে l জিএসকেবিশ্বে প্রথমবারের মতো ম্যালেরিয়া রোগের টেকসই টিকা আগামী অক্টোবরেই পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন গবেষকেরা। পরীক্ষামূলক প্রয়োগে দেখা যায়, টিকাটি ম্যালেরিয়ার জীবাণু থেকে শিশুদের আংশিক সুরক্ষা দিতে পারে। এতে ভয়াবহ রোগটির কবল থেকে প্রতিবছর লাখো শিশুর প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হতে পারে।
গবেষকেরা বলেন, ৫ থেকে ১৭ মাস বয়সী শিশুদের ওপর টিকাটি প্রয়োগ করা হয়েছে। এতে এক-তৃতীয়াংশের বেশি শিশুর ক্ষেত্রে প্রথম দফায় টিকাটি কার্যকারিতা দেখিয়েছে।
বিশ্বে প্রতিবছর ১৯ কোটি ৮০ লাখ মানুষের শরীরে ম্যালেরিয়ার সংক্রমণ হয়। তাই রোগটির টিকা আংশিক কার্যকারিতা দেখালেও তার প্রভাব হবে অনেক বড়। বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ প্রাণঘাতী রোগগুলোর মধ্যে ম্যালেরিয়া অন্যতম। মশাবাহিত রোগটি এখনো প্রতিবছর প্রায় ছয় লাখ মানুষের মৃত্যু ঘটায়, যাদের অধিকাংশই পাঁচ বছরের কম বয়সী। সাব সাহারান আফ্রিকা এলাকায় রোগটির প্রাদুর্ভাব বেশি। মশারির ব্যবহার বৃদ্ধি এবং কিছু ওষুধ সেবনের কারণে ম্যালেরিয়া রোগে মৃত্যুর হার সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কিছুটা কমে এলেও রোগটি নিয়ন্ত্রণের জন্য কার্যকর একটি টিকার প্রয়োজনীয়তা রয়ে গেছে।
আরটিএস,এস/এএসজিরোওয়ান নামের নতুন ভ্যাকসিন বা টিকাটি তৈরি করেছে যুক্তরাজ্যের ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন (জিএসকে)। আর এ কাজে অর্থায়ন করেছে বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন। ২০০৯ সালে টিকাটির পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু করা হয়। এ পর্যন্ত সাব সাহারান আফ্রিকার সাতটি দেশের-বুরকিনা ফাসো, গ্যাবন, ঘানা, কেনিয়া, মালাওয়ি, মোজাম্বিক ও তানজানিয়ার ১৫ হাজার ৪৫৯টি শিশু ও খুব অল্প বয়সী শিশুর ওপর টিকাটি প্রয়োগ করা হয়েছে। এ গবেষণা প্রতিবেদন দ্য ল্যানসেট সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে। জিএসকে ইতিমধ্যে টিকাটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রয়োগের অনুমতির (লাইসেন্স) জন্য ইউরোপীয় চিকিৎসা সংস্থা (ইএমএ) বরাবর আবেদন করেছে। ইএমএ অনুমোদন করলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও (ডব্লিউএইচও) আফ্রিকা অঞ্চলে টিকাটি অনুমোদন করার আবেদন বিবেচনা করবে। সে ক্ষেত্রে আগামী অক্টোবরের মধ্যে বড় পরিসরে টিকাটির প্রয়োগ শুরু হতে পারে।
টিকাটি দুটি বয়সশ্রেণির শিশুদের ওপর প্রয়োগ করা হয়: একদল ছয় থেকে ১২ সপ্তাহ বয়সে প্রথম টিকাটি নিয়েছে এবং আরেক দল ৫ থেকে ১৭ মাস বয়সে যারা প্রথম টিকাটি নিয়েছে। তাদের সবাইকে তিন মাস মেয়াদি প্রথম মাত্রায় টিকা দেওয়া হয় এবং কয়েকজনকে ১৮ মাস পর আরেকটি মাত্রায় (বুস্টার) টিকাটি দেওয়া হয়। এতে দেখা যায়, খুব কম বয়সী শিশুদের ওপর টিকাটির কার্যকারিতা তুলনামূলক কম। আর বুস্টার নেওয়ার পর ম্যালেরিয়ার ঝুঁকি তিন বছরে ২৬ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। তবে আরও মারাত্মক ধরনের ম্যালেরিয়ার আক্রমণে টিকাটি আর সুরক্ষা দিতে পারে না। তবে তুলনামূলক বেশি বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে মারাত্মক ধরনের ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধেও বুস্টার মাত্রার টিকা ৩২ শতাংশ পর্যন্ত সুরক্ষা দিতে পারে।
লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ব্রায়ান গ্রিনউড ওই গবেষণায় যুক্ত রয়েছেন। তিনি বলেন, টিকাটি স্পষ্টত কার্যকর। ২০১৩ সালে ম্যালেরিয়ার ১৯ কোটি ৮০ লাখ সংক্রমণ শনাক্ত করা হয়েছিল। তাই টিকাটি প্রয়োগ করে লাখ লাখ শিশুকে সুরক্ষা দেওয়ার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে।
ডব্লিউএইচওর টিকা বিভাগের বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রাথমিক নমুনা পরীক্ষায় ইঙ্গিত মিলেছে যে টিকাটি শিশুমৃত্যুর হার কমিয়ে আনতে পারে। তবে এ গবেষণায় আরও তহবিল প্রয়োজন। ওষুধ ও মশারির জন্য যে খরচ হয়, তার চেয়ে বেশি অর্থ নতুন প্রতিষেধকটির জন্য ব্যয় হতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ৯:৩৩:৩১ ৩৩০ বার পঠিত