বঙ্গনিউজ ডটকমঃ বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে (স্কুল, কলেজ ও মাদরাসা) শিক্ষক নিয়োগে প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির কর্তৃত্ব আর থাকছে না। শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে নিবন্ধন পরীক্ষার মাধ্যমে প্রণীত মেধাতালিকা থেকে। বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) এ মেধাতালিকা প্রণয়ন করবে। এ তালিকটি প্রণীত হবে নতুন নিয়মে শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার মাধ্যমে। আগামী আগস্টে ১১তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।এনটিআরসিএ বলছে, নিবন্ধনের জন্য লিখিত পরীক্ষার আগে প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে একজন প্রার্থীকে। প্রিলিমিনারি পাস করার পরই কেবল লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সুযোগ মিলবে। এমসিকিউ পদ্ধতিতে নেয়া হবে এই প্রিলিমিনারি পরীক্ষা। শিক্ষার মানোন্নয়ন, যোগ্য শিক্ষক নির্বাচন ও নিয়োগে স্বচ্ছতা আনতে সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) আদলে বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগে এই প্রক্রিয়া চালু হতে যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে আইন ও বিধিমালার প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনা হচ্ছে। আগামী আগস্টের আগে নতুন এ বিধিমালা প্রণীত ও জারি হবে।
জানা গেছে, এনটিআরসিএ প্রস্তাবিত ‘শিক্ষক নির্বাচন কমিশন’-এর কাজ করবে। তারাই বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বছরভিত্তিক শূন্য পদের সংখ্যা নিরূপণ, শূন্য পদের সংখ্যা অনুযায়ী লিখিত নিবন্ধন পরীক্ষার পর নির্ধারিত নম্বরের মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে উপজেলা, জেলা ও জাতীয়ভিত্তিক মেধাতালিকা করবে। এরপর মেধাক্রম ও চাহিদানুযায়ী প্রার্থীদের নিয়োগ সুপারিশ করবে ওই কমিশন। স্কুল-কলেজ পরিচালনা কমিটি শুধু যোগদানপত্র দেবে। তবে কোনো প্রার্থী লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় পৃথকভাবে কমপক্ষে ৪০ শতাংশ নম্বর না পেলে মেধাতালিকায় অন্তর্ভুক্তির যোগ্য হবেন না।
আগামী আগস্টে অনুষ্ঠিতব্য ১১তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার ক্ষেত্রে প্রার্থীদের অনলাইনে আবেদন করার পর প্রথম ধাপে এক ঘণ্টার ১০০ নম্বরের প্রিলিমিনারি টেস্ট বা পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। ইতোমধ্যে এনটিআরসিএ ১১তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার জন্য আবেদনপত্র আহবান করে সার্কুলার জারি করেছে। স্কুলপর্যায়ের প্রিলিমিনারি টেস্ট প্রথম দিন ও কলেজ পর্যায়ের প্রিলিমিনারি টেস্ট দ্বিতীয় দিনে অনুষ্ঠিত হবে। স্বল্প সময়ের মধ্যে প্রিলিমিনারির ফল প্রকাশ করা হবে। এরপর প্রিলিমিনারি টেস্টে উত্তীর্ণ প্রার্থীরা দ্বিতীয় ধাপে অনলাইনে পূরণ করা আবেদনপত্রের প্রিন্ট কপির সাথে শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদসহ অন্য কাগজপত্র পাঠাবেন। আবেদনপত্র যাচাই-বাছাইয়ের পর যোগ্য প্রার্থীরা লিখিত পরীক্ষা অংশ নেয়ার সুযোগ পাবেন। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের যথারীতি নিবন্ধন সনদ দেয়া হবে।
প্রিলিমিনারি টেস্ট আগের মতো ২০টি জেলাভিত্তিক কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে। তবে দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষার কেন্দ্র প্রয়োজনে হ্রাস করা হবে।
বেসরকারি স্কুল ও কলেজে শিক্ষক নিয়োগের নতুন পদ্ধতি চালু হলে এর আগে নিবন্ধনের সনদপ্রাপ্ত শিক্ষকদের কী হবে তা নিয়ে এখনো অস্পষ্টতা রয়েছে। এনটিআরসিএ গতকালের কর্মশালায় এ ব্যাপারে কোনো কিছু উল্লেখ করেনি।
গতকাল রাজধানীর ব্যানবেইস মিলনায়তনে বেসরকারি শিক্ষক নির্বাচন ও নিয়োগসংক্রান্ত দিনব্যাপী কর্মশালায় এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। এনটিআরসিএর বিদায়ী চেয়ারম্যান আশীষ কুমার সরকারের সভাপতিত্বে কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। শিক্ষাসচিব মো: নজরুল ইসলাম খান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. হারুন-অর-রশীদ, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর ফাহিমা খাতুন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, বর্তমান বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগে পরিচালনা কমিটি একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী। আগে পরিচালনা কমিটি বিজ্ঞপ্তি দেয়ার পর নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণরা আবেদন করার সুযোগ পেতেন। স্কুল বা কলেজ পরিচালনা কমিটির তত্ত্বাবধানে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতো। তারাই পছন্দ মতো নিয়োগ দিতেন। নতুন নিয়ম চালু হলে ম্যানেজিং কমিটির এ কর্তৃত্ব আর থাকবে না।
বাংলাদেশ সময়: ১৫:১০:৪৭ ৪২৭ বার পঠিত