বঙ্গনিউজ ডটকমঃ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ‘উত্তেজনা সৃষ্টিকারী’ বলে ঘরের ভেতরে বসে থাকাই তার জন্য ‘মঙ্গলজনক’ হবে বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ মন্তব্য করেন তিনি।নির্বাচনী প্রচারে খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলার ঘটনা নিয়ে মন্ত্রী বলেন, “খালেদা জিয়া নিজেই একটি ‘উসকানির বস্তু’। সাম্প্রতিককালে তিনি জঘন্য আগুনযুদ্ধের সাথে জড়িত ছিলেন। বাংলাদেশে পোড়া মানুষের স্তূপ তৈরি করেছেন।
“খালেদা জিয়া নিজেই ‘উত্তেজনা সৃষ্টিকারী’, সুতরাং তার স্থান কাল পাত্র জ্ঞান থাকা উচিৎ। এ রকম একটি পরিস্থিতিতে উনাকে দেখলেই মানুষের ক্ষোভ হতে পারে। অসংখ্য ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ; উনার ধৈর্যশীল হওয়া উচিত, ঘরের ভেতর বসে থাকাই মঙ্গলজনক উনার জন্য।”সরকারের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়াকে নির্বাচনী প্রচারে বাধা দেওয়া হচ্ছে বলে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা নাকচ করেন তথ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “আমরা প্রতিহতের নীতিতে নেই। খালেদা জিয়াকে রাস্তায় প্রতিহত করার কোনো বিষয় নেই।
“উনি তো মামলার আসামি হয়েছেন, পোড়া মানুষের হিসাব নিতে আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি, সেটার দিকে নজর দিলেই উনার জন্য মঙ্গলজনক।”
খালেদা জিয়ার গাড়ীবহরে হামলায় ক্ষমতাসীন দলের কর্মী-সমর্থকরা জড়িত কি না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, “সরকার সমর্থকরা এ হামলা করছে না। তবে এটা দুঃখজনক ঘটনা, আমরা নিরাপত্তা দেওয়ার চেষ্টা করছি। নিরাপত্তা দিয়েছি বলেই অক্ষত অবস্থায় হাতিরঝিল দিয়ে দ্রুত তার বাড়িতে চলে গেছেন, নিরাপত্তা না দিলে অক্ষত অবস্থায় যেতেন কীভাবে?
“যে সব ছেলে-মেয়ে খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে থাকা লোকজনের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে তাদের বিষয়টি নিরাপত্তা বাহিনী সতর্কতার সাথে দেখছে।”
ভবিষ্যতেও খালেদা জিয়ার বহরে হামলা হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন কি না জানতে চাইলে ইনু বলেন, “আমরা নিরাপত্তা দেওয়ার চেষ্টা করব, চোরাগোপ্তা আক্রমণ হবে, কি হবে না তার ভবিষ্যতবাণী তো আমি করতে পারি না।
“উনার রাজনীতিতে থাকা উচিৎ নয় বলে মনে করি। উনার ক্ষমা চাওয়া উচিৎ এবং তার বিচারের ব্যবস্থা করা উচিত। তিনি গণতন্ত্রের জন্য উপযুক্ত নন।”
বিএনপি চেয়ারপারসনের উদ্দেশ্যে সরকারের এই মন্ত্রী বলেন, “কথায় কথায় বিদেশিদের কাছে ধর্ণা দেবেন না। তওবা করুন, জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে বিচারের জন্য প্রস্তুত হোন।”
গত তিন মাসের অবরোধ-হরতালে গাড়িতে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ ও অগ্নিসংযোগে নিরীহ মানুষের প্রাণহানির কথা তুলে ধরে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “এতো কিছুর পরও যারা খালেদাকে সমর্থন দিচ্ছেন বা খালেদা যাদের সমর্থন দিচ্ছেন বা যারা খালেদার সমর্থন নিচ্ছেন, তারা সবাই আগুনসন্ত্রাসী বা আগুন সন্ত্রাসের সমর্থক। খালেদা ভক্ত-সমর্থকরা একেকজন ‘সম্ভাব্য পেট্রোল বোমা’।”
শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে ঢাকা ও চট্রগ্রামে কোনো উন্নয়ন হয়নি বলে খালেদা জিয়া যে বক্তব্য দিয়েছেন তার প্রতিক্রিয়া জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয় বলে মন্ত্রী জানান।
ওই বক্তব্য দিয়ে বিএনপিনেত্রী ‘মিথ্যাচার’ করেছেন দাবি করে ইনু বলেন, “সিটি নির্বাচনে প্রচারে নেমেই খালেদা জিয়া ‘মিথ্যাচার’ শুরু করেছেন। ‘মিথ্যাচার’ খালেদা জিয়ার পুরনো যুদ্ধাস্ত্র, ‘মিথ্যাচার’কে তিনি শিল্পে পরিণত করেছেন।
“তিনি বলেছেন, শেখ হাসিনার সময় নাকি ঢাকা-চট্রগ্রামে কোনো উন্নয়ন হয়নি। এর চেয়ে বড় মিথ্যাচার আর কী হতে পারে?”
উন্নয়ন হয়েছে কি না তা বিচারের ভার দিয়ে খালেদা জিয়ার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুড়ে দেন মন্ত্রী।
“উনি বা উনার দলের নেতারা কি যাতায়াতের জন্য হাতিরঝিল বা ফ্লাইওভার ব্যবহার করেন না? তার আমলের বিদ্যুতের লোডশেডিং এখন কি আর আছে?”
২০০৯ সাল থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্র যেমন- বিদ্যুৎ, বিশুদ্ধ পানি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, যোগাযোগ, আবাসন ও তথ্য-প্রযুক্তিখাতে উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরেন তথ্যমন্ত্রী।
নির্বাচনের চারদিন আগে সরকারের মন্ত্রী হয়ে উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরা নির্বাচনী আচরণবিধি লংঘন কি না- সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, “খালেদা জিয়া, যিনি নির্বাচনের প্রার্থী নন, তিনি যে মিথ্যাচার করেছেন তার জবাব দিলাম মাত্র। এমন কোনো নির্বাচনী বিধান নেই যে নির্বাচনের এক মাসের সময়ে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সম্পর্কে কথা বলা যাবে না।”
সংবাদ সম্মেলনে প্রধান তথ্য কর্মকর্তা তছির আহম্মদ উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮:৩৯:৪৭ ৩৩১ বার পঠিত