বঙ্গনিউজ ডটকমঃ ১৯৭১ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ এলাকায় হত্যা ও গণহত্যার সুনির্দিষ্ট তিনটি অভিযোগ রয়েছে এই দুইজনের বিরুদ্ধে।
দুই পক্ষের যুক্তিতর্কের শুনানি শেষে বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ বুধবার মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখে।
বিচারিক কার্যক্রম শেষ হওয়ায় এখন যে কোনো দিন আদালত এ মামলার রায় দিতে পারে।
মাহিদুর ও আফসারের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে ২০১৪ সালের ২০ এপ্রিল এ মামলার বিচার শুরু হয়।
মুক্তিযুদ্ধের সময় শিবগঞ্জ উপজেলায় গণহত্যার অভিযোগে ২০১৩ সালে মাহিদুর ও আফসারসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আদালতে মামলা করেন মনাকষা ইউনিয়নের পারচৌকা গ্রামের বদিউর রহমান।
এরপর ২০১৪ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর শিবগঞ্জের দুর্লভপুর ইউনিয়ন থেকে মাহিদুর এবং বিনোদপুর থেকে আফসারকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
ওইবছর ১৬ নভেম্বর মাহিদুর ও আফসারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিল করে প্রসিকিউশন। ২৪ নভেম্বর তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ আমলে নেয়।
অভিযোগ গঠনের পর প্রসিকিউশনের সূচনা বক্তব্যের মধ্য দিয়ে গতবছর ১২ জানুয়ারি শুরু হয় সাক্ষ্যগ্রহণ।
এ মামলায় প্রসিকিউশনের পক্ষে সাক্ষ্য দেন ১০ জন। দুই আসামির পক্ষে কোনো সাফাই সাক্ষী ছিলেন না।
সাক্ষ্য-জেরা শেষে প্রসিকিউটর সাহিদুর রহমান ও আসামিপক্ষে আব্দুস সোবহান তরফদার আদালতের সামনে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন।
তিন অভিযোগ
তদন্ত সংস্থার তথ্যানুযায়ী, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় এই দুজন বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে অস্বীকার করে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীকে সহযোগিতা করার জন্য সশস্ত্র রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন। সশস্ত্র প্রশিক্ষণ শেষ করার পর অস্ত্র ও প্রয়োজনীয় সংখ্যক গুলি সংগ্রহ করে অন্যান্য রাজাকারের সঙ্গে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার আদিনা ফজলুল হক ডিগ্রি কলেজ দখল করে রাজাকার ক্যাম্প স্থাপন করে এলাকায় হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ ও ধর্মান্তরিত করাসহ অন্যান্য মানবতাবিরোধী অপরাধ করতে থাকেন।
অভিযোগ ১: ১৯৭১ সালের ৬ অক্টোবর সকাল ৬টা থেকে ৭ অক্টোবর সন্ধ্যা পর্যন্ত দুই দিনে মাহিদুর ও আফসারের সহায়তায় পাকিস্তানি দখলদার ও রাজাকার বাহিনী অপারেশন চালিয়ে ৩৯ জনকে আটক, অপহরণ, নির্যাতন করে এবং ২৪ জনকে হত্যা করে।
অভিযোগ ২: ১৯৭১ সালের ১৩ অক্টোবর বেলা ১টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাহিদুর ও আফসারের সহায়তায় রাজাকার বাহিনী শিবগঞ্জের এরাদত বিশ্বাসের টোলা এবং কবিরাজ টোলা গ্রামের ৭০টি বাড়িতে লুণ্ঠন চালায় এবং আগুন ধরিয়ে দেয়।
অভিযোগ ৩: ১৯৭১ সালের ২ নভেম্বর (১২ রমজান, ১৫ কার্তিক, মঙ্গলবার) বেলা ২টা থেকে পরের দিন ৩ নভেম্বর রাত পর্যন্ত তৎকালীন চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহকুমার শিবগঞ্জ থানাধীন শেরপুর ভাণ্ডার (লক্ষ্মীপুর), আদিনা ফজলুল হক সরকারি ডিগ্রি কলেজ, শিবগঞ্জ সিও দেভ অফিস আর্মি ক্যাম্প এবং উপজেলাসংলগ্ন ইয়াকুব বিশ্বাসের আমবাগান এলাকায় মাহিদুর ও আফসারের সহায়তায় রাজাকার বাহিনী অপারেশন চালিয়ে আটক, নির্যাতন, অপহরণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ করে এবং চার জনকে হত্যা করে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬:১৯:৩২ ৩৪৭ বার পঠিত